মাসুদ রাণা
ছাত্র-রাজনীতি আছে বলেই আজ এ্যামেরিকার একটির পর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইজরায়েলের গাজা-হামলার বিরুদ্ধে ও প্যালেস্টাইনের স্বাধীনতার পক্ষে বিক্ষোভ ও ক্যাম্পাস অকুপেইশন সংঘটিত হচ্ছে।
বাংলাদেশে যার ছাত্র-রাজনীতি নিষিদ্ধির পক্ষে, তাদের মধ্যে অনেক শিক্ষিত অজ্ঞ আছেন, যারা পাশ্চাত্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে রেফার করে দাবী করেন যে, ওখানে নাকি ছাত্র-রাজনীতি নেই। তাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে এ্যামেরিকার ছাত্র-সমাজ ছাত্র-রাজনীতি কতো শক্তি নিয়ে ওখানে বিরাজ করছে।
অনেকই হয়তো জানেন না যে, ১৯৬৮ সালে প্যারিস থেকে যে ছাত্র-শ্রমিক আন্দোলন শুরু হয়েছিলো এবং যার তার ঢেউ সুনামির মতো আছড়ে পড়েছিলো ইউরোপ ও এ্যমেরিকা-সহ বিশ্বের দেশে-দেশে, তারই ধারাবাহিকতায় ফ্রান্সের মতো পূর্ব-পাকিস্তান তথা আজকের বাংলাদেশে গণ-অভ্যূত্থান ঘটেছিলো ১৯৬৯ সালে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেণ্ট জেনারেল চার্লস দ্যাগল ফ্রান্স থেকে পশ্চিম জার্মানীতে পালিয়ে গিয়ে ফিরে আসতে পারলেও, পাকিস্তানের প্রেসিডেণ্ট আইয়ূব খানকে চিরতরে চলে যেতে হয়েছিলো। আর, সেই গণ-অভ্যূত্থানের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মানসিক ক্ষেত্র তৈরি হয় প্রধানতঃ ছাত্রদের মধ্যে। দুনিয়ার মজদুর এক হও স্লৌগান দিলেও বাস্তবে দুনিয়ার শ্রমিকেরা নয়, বরং দুনিয়ার ছাত্ররাই গত কয়েক দশক ধরে ভিয়েতনামে, ইরাকে কিংবা প্যালেস্টাইনের সাম্রাজ্যবাদী আক্রমণ ও দখলের বিরুদ্ধে কার্যকর সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে।
মানুষ শুধু অর্থনৈতিক বঞ্চনার কারণে সংগ্রাম করে, এমন অর্থনীতিবাদী ধারণা সঠিক নয়। পরিবর্তনের জন্য মানুষ সংগ্রাম করে তার বোধের কারণে।
স্পষ্টতঃ শ্রমিকদের চেয়ে ছাত্রদের মধ্যে বিশ্ববোধ অনেক-অনেক বেশি এবং এর কারণ হচ্ছে বিশ্বব্যাপী শিক্ষাকে কেন্দ্র করে ছাত্রদের বোধের সাম্য অনেক-অনেক গভীর ও ব্যাপক।