বর্তমান সরকার আমলাদের নিয়ে একটি নতুন জমিদার শ্রেণী তৈরি করেছে
পারভেজ আলম
বাংলাদেশের আমলাদের মধ্যে ব্যতিক্রম অনেক ব্যক্তি আছেন। কিন্তু শ্রেণী হিসাবে এই আমলা শ্রেণী হল একটি নতুন সামন্ত শ্রেণী। অনাধুনিক মানসিকতা ও রুচিওয়ালা শ্রেণী। নাইলে এমন দাবিতো জানাইতো না। আই মিন, আধুনিক হইলে হয় দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতি ঘটাইতো, যেন তাদের সন্তানরা সেখানে পড়তে পারে।
আর পুঁজিপতি মানসিকতার হইলে বড়লোক শ্রেণীর বিশ্ববিদ্যালয় বানাইতে চাইতো। প্রিভিলেজতো এমনিতেই এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে ট্রান্সফার হয়। তাও এদের এমন কোটারি মানসিকতা কেন? এরা একটা নতুন শ্রেণী (গত দুই দশকে গড়ে ওঠা), যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে মূলত বিসিএস গাইড মুখস্ত করেছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় কাকে বলে সেটাই জানে না।
বিশ্ববিদ্যালয় হলো পাবলিক প্রতিষ্ঠান। যদিও আজকাল গবেষকদের শাসক শ্রেণীর ফান্ডিং-এর উপরেই বেশী নির্ভর করতে হয়। তারপরেও বিশ্ববিদ্যলয়গুলাকে চেষ্টা করতে হবে যেকোন মূল্যে সকল শ্রেণীর মানুষদের জন্যে নিজের দরোজা উন্মুক্ত রাখার। বাংলাদেশের জনগণকে নিজের স্বার্থেই নিজেদের বিশ্ববিদ্যায় রক্ষা করতে হবে। উন্নত করতে হবে। পুরাতনগুলা দিয়া না হইলে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় লাগবে।
জনগণের নিজের স্বার্থ বোঝা উচিৎ। আমলাদেরকে স্যার স্যার বলে চামচামি না করে নিজের শ্রেণীর স্কলার উৎপাদনে তাদের ইনভেস্ট করা উচিৎ। আমলারাতো তাদের স্বার্থ দেখবেনা। প্রজা বানিয়ে রাখবে। কিন্তু তাদের নিজের শ্রেণীর বুদ্ধিজীবী যতো বেশী থাকবে, তাদের কন্ঠও রাজনৈতিকভাবে ততো ক্ষমতাবান হবে।
বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলার র?্যাংকিং নিয়া প্রতি বছরই এই সময়টায় অনেকে হাহাকার করেন। কিন্তু বাৎসরিক এই হাহাকারে কী আসবে যাবে? বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলার মান উন্নয়ন করতে চাইলে কাজটা এখন বেশ সহজ আসলে। এই একবিংশ শতকে ব্রেইন ড্রেন বলে কিছু নাই। সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাংলাদেশী স্কলারদের সাথে সমন্বয় করতে পারলেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলা আবার প্রাণ ফিরে পাবে।
আপনার তাদেরকে স্থায়ী চাকরি দেয়ার দরকার নাই। যাস্ট প্রতি বছর একটা কোর্স তাদেরকে দিয়া করান। এতে তাদের বিদেশের চাকরি বাকরি ও গবেষণার সুবিধা ছেড়ে একবারে দেশে যাওয়ার ঝুকি নিতে হবে না। আবার তারা দেশে কন্ট্রিবিউশনও করতে থাকবে। সর্বপরি, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলা বিশ্বের সাথে আরো বেশি কানেক্টেড থাকবে ও সমকালীন হবে।
অনেকেই বলেন যে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলার ফান্ডিং নাই। কিন্তু প্রশ্ন হলো, যতোটুকু ফান্ডিং আছে, তার ব্যবহার কি বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা করতে পারেন? নিশ্চয় আরো ফান্ডিং লাগবে। কিন্তু তার আগে লাগবে গবেষক। গবেষক না থাকলে ফান্ডিং কোন কাজে লাগবে? দেখেন, গেটকিপিং করে আপনারা বাংলাদেশের পলিটিকাল পার্টিগুলার বারোটা বাজিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলার অবস্থা যে তার চাইতে খুব আলাদা, তা না। কুয়ার ব্যাঙ মানসিকতা এবং গেটকিপিং কালচারটুকু ছাড়তে পারলেই আমরা অনেক সমস্যা কাটাইয়া উঠতে পারতাম। তাতো আপনারা হইতে দেবেন না। যেকোন মূল্য আপনাদের কুয়া রক্ষা করতে হবে।
আপনি যা করছেন, তারই ফল পাচ্ছেন। এমন না যে বিকল্প নাই। আছে। কিন্তু সেটা বলে দিলেও আপনারা তা কাজে লাগাবেন না। তো, র?্যাংকিং নিয়া কান্নাকাটি করে লাভ আছে?