সোহেল রহমান : [১] আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে রিজার্ভের স্থিতি ও রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও ঋণের তৃতীয় কিস্তি সময়মতো পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী সরকার।
[২] ঢাকা সফররত আইএমএফ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে গত সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের যৌথসভা শেষে এমনটাই মনে করছে অর্থ বিভাগ।
[৩] সফরকালে ঋণের সকল শর্ত পূরণ সন্তোষজনক বলে মনে হলে আগামী জুনে ঋণের তৃতীয় কিস্তি হিসেবে ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ছাড় করবে আইএমএফ।
[৪] জানা যায়, বৈঠকে আইএমএফ প্রতিনিধিদলকে আগামী জুনে নিট ইন্টারন্যাশনাল রিজার্ভের (এনআইআর) লক্ষ্যমাত্রা ১৮ বিলিয়ন ডলারের নিচে আনার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। কারণ গত বছরের ডিসেম্বর থেকে দেশের রিজার্ভ পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় আগামী জুনে নির্ধারিত রিজার্ভ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা কঠিন হবে।
[৫] অর্থ বিভাগ সূত্র মতে, সফররত আইএমএফ দল বৈদেশিক পরিস্থিতির বাস্তবতা মেনে নিয়েছে। তারা রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা সংশোধনের প্রস্তাব মেনে নিতে পারে। কারণ ঋণের তৃতীয় কিস্তি পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ একটি ছাড়া সব শর্ত পূরণ করেছে। একইসঙ্গে ঋণের চতুর্থ কিস্তি পাওয়ার জন্য আগামী অক্টোবর ও ডিসেম্বর নাগাদ নিট রিজার্ভের টার্গেটও নতুন করে নির্ধারণ করে দেবে আইএমএফ।
[৬] প্রসঙ্গত: বর্তমানে আইএমএফ জুনের জন্য রিজার্ভ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ২০ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার। সংস্থাটির ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির আওতায় ঋণের চতুর্থ কিস্তি পাওয়ার অন্যতম শর্ত এটি।
[৭] এর আগে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও নিট রিজার্ভের শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ। গত ডিসেম্বরে সংশোধিত রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার। এটি ছিল লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৫৮ মিলিয়ন ডলার কম। সে প্রেক্ষিতে মার্চ ও জুনের জন্য লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে সমঝোতা স্মারক সই করে আইএমএফ।
[৮] প্রসঙ্গত: চলতি অর্থবছরে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য বাজেট সহায়তা পাওয়া যাবে বলে আশা করা হয়েছিল। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ৫০০ মিলিয়ন ডলার ছাড়া জুনের মধ্যে অন্য কোনো সহায়তা পাওয়ার সম্ভাবনা কম। পাশাপাশি বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা চলমান থাকায় আন্তর্জাতিক বাজারে সুদের হার কমারও সম্ভাবনা তেমন নেই।
[৯] এদিকে বাংলাদেশ গত বছরের ডিসেম্বরে তৃতীয় দফার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করলেও জুনের মধ্যে চতুর্থ কিস্তিতে তিন লাখ ৯৪ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, তা পূরণ নাও হতে পারে। জুনে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কর-রাজস্ব আদায়ে ২০ দশমিক ৩৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রয়োজন। এর পিরীতে চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে কর-রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ শতাংশ।
[১০] অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, জুন শেষে সর্বোচ্চ ৩ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হতে পারে। তারা আইএমএফ-কে কর-রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা সংশোধনের অনুরোধ করেছেন, তবে তারা রাজি হবেন কি নাÑ তা স্পষ্ট নয়।