রপ্তানি বৈচিত্র্য, প্রতিযোগিতামূলক বাজার ও সরবরাহ ব্যবস্থা
সৈয়দ মনসুর হাশিম : যদিও বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সম্পর্কে অনেক কথা বলা হয়েছে কিন্তু জিনিসগুলো ততোটা সহজ নয়। এফটিএগুলো একটি কষ্টকর প্রক্রিয়া যার পক্ষগুলোর দাবি ও প্রত্যাশার মধ্য দিয়ে যেতে কয়েক বছর সময় লাগে। তাই, আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের পণ্যের প্রতিযোগিতা বাড়ানোর জন্য রপ্তানি বহুমুখীকরণ ও উৎপাদনশীলতাকে দ্রুত গতিতে আনার ওপর নীতি নির্দেশনা বেশি মনোযোগ দিলে দেশ উপকৃত হবে। বাংলাদেশ এলডিসি স্নাতকের দশকে পা দিয়েছে ও যখন এটি এলএমআইসি (নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ) শ্রেণীতে স্থানান্তরিত হবে তখন এটি উন্নত দেশগুলো থেকে এখনও যে ছাড় পায় তা অনেকটাই হারাবে। তাই রপ্তানি বহুমুখীকরণের প্রশ্ন উঠেছে। এখন পর্যন্ত রপ্তানি মূলত দুটি প্রধান আন্তর্জাতিক বাজারে কেন্দ্রীভূত হয়েছে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) অনুমান অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি প্রায় ১৬ শতাংশ ও ইউকে + ইইউ ৫৮.২ শতাংশ গঠন করে, যার অর্থ ৭৫ শতাংশের বেশি রপ্তানি এই দুটি গন্তব্যে যায়। বাংলাদেশের পক্ষে খুব কমই সুবিধাজনক কারণ এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ উভয়কেই (যুক্তরাজ্য সহ) দেশের উপর প্রচুর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সুবিধা দেয়। কানাডা ও জাপান প্রত্যেকে ৩.১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
এখন এমন কেন? এটির প্রাথমিক কারণ বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫০ বছরেরও বেশি সময় পরেও শুধু একটি শ্রেণি রপ্তানি অর্থাৎ রেডিমেডট পোশাক (আরএমজি) তৈরিতে তার প্রচেষ্টাকে কেন্দ্রীভূত করেছে। এর সিংহভাগ আর্থিক প্রণোদনা বাংলাদেশি আরএমজি সেক্টরকে বিদেশি ক্রেতাদের জন্য সবচেয়ে সস্তা বিকল্প হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। শিল্পের প্রতিযোগীতা বাড়াতে পণ্যের ভিত্তিকে বৈচিত্র্যময় করতে ও আরও গুরুত্বপূর্ণ, মুষ্টিমেয় কয়েকটি রপ্তানি গন্তব্যের উপর নির্ভরতা কমাতে নতুন বাজার খোঁজার জন্য শিল্পের দক্ষতা বাড়াতে সামান্য প্রচেষ্টা করা হয়েছিলো। যেহেতু বাংলাদেশ ২০২৬ সালে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তাই দেশীয় শিল্পের দ্বারা উপভোগ করা প্রচুর প্রণোদনা পর্যায়ক্রমে বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে এর অর্থনীতি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার জন্য অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছে। নীতি সংস্কারের জন্য রপ্তানি ঝুড়ির বৈচিত্র্যকরণের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় নেওয়া দরকার, কেবলমাত্র আরএমজির ক্ষেত্রে নয় বরং অন্যান্য সম্ভাব্য শিল্প বিভাগ যেমন চামড়া, কৃত্রিম পাদুকা, পাট ও পাটজাত পণ্যের মতো জৈব-অবচনযোগ্য উপকরণ ইত্যাদিতে প্রণোদনা বৈচিত্র্যময় করা।
এই সংবাদপত্রে সম্প্রতি রিপোর্ট করা হয়েছে, ‘রপ্তানি প্রতিযোগিতার উন্নতি ও বৈচিত্র্য অর্জনের জন্য নীতি প্ররোচিত রপ্তানি বিরোধী পক্ষপাতের মোকাবিলা, পণ্যের গুণমান ও মান উন্নত করা, বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলের সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্য বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা, বিচক্ষণ বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা পরিচালনা সহ বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রয়োজন হবে। বাহ্যিক প্রতিযোগিতার প্রচার করা, সেক্টর-নির্দিষ্ট সরবরাহ-পার্শ্বের সীমাবদ্ধতাগুলো মোকাবেলা করা ও এলডিসি স্নাতক পরবর্তী ব্যবসায়িক পছন্দগুলোকে সক্রিয়ভাবে মোকাবেলা করাও রপ্তানি প্রতিযোগিতা টিকিয়ে রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’ রপ্তানি জোরদার করতে হবে তবে সেটা হতে হবে নন-আরএমজি খাত থেকে। এখন থেকে আরএমজি সেক্টরকে এর ওপর বিকশিত করতে হবে। এটি অবশ্যই করার চেয়ে বলা সহজ, তবে নীতিনির্ধারকদের অবশ্যই এই ফ্রন্টে যথেষ্ট না করার প্রভাব সম্পর্কে সচেতন হতে হবে কারণ সময় ফুরিয়ে আসছে। নীতি প্রণোদনাগুলোকে আরএমজি থেকে নন-আরএমজি সেক্টরে সরিয়ে দেওয়া দরকার। অর্থাৎ ‘নীতিগত উদ্যোগে বৈষম্যমূলক এক্সেস দূর করা। বন্ডেড গুদাম সুবিধাগুলো বিশেষ করে, সমস্ত রপ্তানি খাত ও ইউনিটগুলোকে দেওয়া উচিত তা নির্বিশেষে ১০০ শতাংশ রপ্তানি- ভিত্তিক বা না।’ এই সুপারিশগুলো এডিবি-এর সর্বশেষ নীতিগত সংক্ষিপ্ত বিবরণে এসেছে ও সেগুলোতে মনোযোগ দেওয়া উচিত। প্রয়োজনীয় সংস্কারে বিলম্বিত হওয়া আর দেশটির সামর্থ্যরে বিলাসিতা নয়, তবে নীতিনির্ধারকরা মনোযোগ দেবেন কিনা তা প্রশ্ন থেকে যায়।
সধহংঁৎ.ঃযবভরহধহপরধষবীঢ়ৎবংং@মসধরষ.পড়স অনুবাদ : জান্নাতুল ফেরদৌস। সূত্র : দি ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস