২০২৪-২৫ অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দ বাড়ছে স্বাস্থ্য শিক্ষা কৃষিতে কমেছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে
এস.ইসলাম জয় : [১] বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং কৃষি খাতে বরাদ্দ বাড়িয়েছে সরকার। পরিবহন ও যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, আবাসন এবং কমিউনিটি সুবিধাবলির মতো আগে অগ্রাধিকার পাওয়া খাতে বরাদ্দ চলতি অর্থবছরের তুলনায় কমানো হয়েছে।
[২] মঙ্গলবার পরিকল্পনা কমিশনের এক সভায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত এডিপির আকার ধরা হয়েছে দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের এডিপির তুলনায় ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ বেশি। আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত চলতি অর্থবছরের এডিপির তুলনায় চার হাজার কোটি টাকা বা ২ দশমিক ৩৭ শতাংশ কমেছে। তবে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির সঙ্গে তুলনায় সরকারি তহবিলের বরাদ্দ বেড়েছে ২ দশমিক ১৭ শতাংশ। এছাড়া প্রস্তাবিত এডিপিতে সরকারি তহবিলে বরাদ্দ কমেছে এবং বৈদেশিক ঋণের অংশ বেড়েছে।
[৩] এদিকে, প্রস্তাবিত এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তার পরিমাণ চলতি অর্থবছরের এডিপি এবং সংশোধিত এডিপির তুলনায় যথাক্রমে ৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ ও ১৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেড়েছে। প্রস্তাবিত এডিপিতে সরকারি তহবিল থেকে এক লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে এক লাখ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
[৪] পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে পরিকল্পনা কমিশনের বর্ধিত সভায় প্রস্তাবিত এডিপির প্রাথমিক অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রস্তাবিত এডিপি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় উপস্থাপন করা হবে। ১৬ মে একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিবেন।
[৫] পরিকল্পনা কমিশনসূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের সরকারি তহবিল থেকে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর চাহিদা ছিল এক লাখ ৮৫ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ ও অনুদানের চাহিদা ছিল ৯১ হাজার ১১ কোটি টাকা। তবে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বর্তমানে রাজস্ব আহরণ, মুদ্রাস্ফীতি এবং ডলার সংকটসহ বিভিন্ন কারণে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সরকারি তহবিলের তুলনায় বৈদেশিক অর্থায়নের ওপর অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
[৬] ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এডিপিতে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে বরাদ্দ ছিল ৭৫ হাজার ৯৪৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত এডিপিতে তা কমিয়ে ৭০ হাজার ৬৮৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা করা হয়েছে। একইভাবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এডিপিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ৪৪ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা, যা প্রস্তাবিত এডিপিতে ৪০ হাজার ৭৫১ কোটি ৮৬ লাখ টাকায় কমিয়ে আনা হয়েছে।
[৭] চলতি অর্থবছরের এডিপির তুলনায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রস্তাবিত এডিপিতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, পরিবেশ, জলবায়ু এবং শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি পেয়েছে। যেমন প্রস্তাবিত এডিপিতে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ৩১ হাজার ৫২৮ কোটি ছয় লাখ টাকা, যেখানে চলতি অর্থবছরের এডিপিতে এর পরিমাণ ২৯ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা। একইভাবে, স্বাস্থ্য খাতে চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত এডিপিতে চার হাজার ৪৭৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকা বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
[৮] প্রস্তাবিত এডিপিতে পরিবহন ও যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে সর্বাধিক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা মোট বরাদ্দের প্রায় ২৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ বা ৭০ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা। মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-৫ এবং পদ্মা রেল সংযোগের মতো প্রকল্পের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এছাড়া রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প এবং মাতারবাড়ি ১,২০০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের মতো প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪০ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা বা ১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
[৯] শিক্ষা খাত তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে ৩১ হাজার ৫২৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা বা ১১ দশমিক ৯০ শতাংশ। আবাসন ও কমিউনিটি সুবিধাবলি খাতে প্রায় ২৪ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যা মোট প্রস্তাবিত এডিপি বরাদ্দের ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২০ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৭ দশমিক ৮০ শতাংশ।
[১০] এর পরে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাত প্রস্তাবিত এডিপি বরাদ্দের ৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ, কৃষি খাত ৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ এবং পরিবেশ ও জলবায়ু খাত ৪ দশমিক ১৮ শতাংশ পেয়েছে। শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা পেয়েছে ২ দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং তথ্য প্রযুক্তি খাত পেয়েছে ১ দশমিক ৮১ শতাংশ।
[১১] প্রস্তাবিত এডিপিতে শিক্ষা খাতের অধীনে চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি-৪) জন্য সর্বোচ্চ ১১ হাজার ৫৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
[১২] রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের জন্য দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ ১০ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য তৃতীয় সর্বোচ্চ ছয় হাজার পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। অবকাঠামো খাতে ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে এবং এমআরটি লাইন-১ প্রকল্পের জন্য যথাক্রমে তিন হাজার ৭৯৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা এবং তিন হাজার ৫৯৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
[১৩] এছাড়া পিজিসিবি’র অধীনে পাওয়ার গ্রিড নেটওয়ার্ক স্ট্রেংদেনিং প্রকল্পে তিন হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা, পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পে তিন হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা, শাহজালাল বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পে তিন হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা এবং ডিপিডিসি’র অধীনে এক্সপানশন অ্যান্ড স্ট্রেংদেনিং অব পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্ক প্রকল্পে তিন হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
[১৪] স্বাস্থ্য খাতে একটি প্রকল্পের জন্য তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি হলো এস্টাবলিশমেন্ট অব ৫০০-বেড হসপিটালস ইন যশোর, কক্সেস বাজার, পাবনা, অ্যান্ড মালেক মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড নুরুল হক হসপিটাল, নোয়াখালী।
[১৫] সরকারের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রস্তাবিত এডিপির ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে বরাদ্দ করার কথা ছিল। তবে এ খাতে গত কয়েক বছরে গৃহীত প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাবিত এডিপির ২৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সাধারণ সরকারি সেবা খাতে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছিল, যেখানে বরাদ্দ করা হয়েছে শূন্য দশমিক ৮১ শতাংশ। ২০২৪–২৫ অর্থবছরের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় স্বাস্থ্যসেবা খাতে বরাদ্দের প্রস্তাব ছিল ১১ দশমিক ১ শতাংশ, যেখানে প্রস্তাবিত এডিপিতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৭ দশমিক ৮০ শতাংশ।