দেশের ৭ শতাংশ মানুষ থ্যালাসেমিয়ার বাহক
শাহীন খন্দকার : [১] গতকাল বুধবার (৮মে) ছিলো বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হয়েছে দিবসটি। থ্যালাসেমিয়া মূলত বংশগত রক্তস্বল্পতাজনিত রোগ। এ রোগে আক্রান্তরা অনেকেই মাতৃগর্ভ থেকে রোগটি ধারক, আবার কেউ কেউ ছোট বয়স থেকেই রক্তস্বল্পতায় ভুগে থাকে।
[২] বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতি ১৪ জনে একজন থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক। আর ৭০ হাজারের বেশি শিশু থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত। প্রতি বছর ৬ হাজার শিশু বিভিন্ন রকমের থ্যালাসেমিয়া রোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে।
[৩] এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুসারে, বাংলাদেশের জনসংখ্যার সাত শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক। থ্যালাসেমিয়া বাহকদের পরস্পরের মধ্যে বিয়ের মাধ্যমে প্রতি বছর নতুন করে ৭ হাজার থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুর জন্ম হচ্ছে।
[৪]এদিকে থ্যালাসেমিয়া রোগীরা সাধারণত প্রতি মাসে এক থেকে দুই ব্যাগ রক্ত নিয়ে বেঁচে থাকে। চিকিৎসা করা না হলে এ রোগীরা রক্তশূন্যতায় মারা যায়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ বলেছেন, দেশের ৭ শতাংশ মানুষ থ্যালাসেমিয়ার বাহক।
[৫] এদিকে বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বাণীতে বলেন, থ্যালাসেমিয়া একটি জিনবাহিত রোগ যা বাহকের মাধ্যমে ছড়ায়।পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে থ্যালাসেমিয়া রোগ প্রতিরোধে থ্যালাসেমিয়া জিনবাহক নারী-পুরুষের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনে সতর্কতা অবলম্বন করা হয়ে থাকে।
[৬] সবাই মিলে থ্যালাসেমিয়া মুক্ত বাংলাদেশ গড়ব-এটাই হোক এবারের বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবসের অঙ্গীকার। বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণীতে বলেন, থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রক্তস্বল্পতাজনিত দুরারোগ্য ব্যাধি। এ রোগ প্রতিরোধে বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতি তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। বাংলাদেশে এই রোগের জিন বাহকের সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। বাহকের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা দেশের সার্বিক সুস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। বাহকে-বাহকে বিয়ে হলে দম্পতির সন্তান থ্যালাসেমিয়া রোগী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বিধায় বিবাহের পূর্বে এই রোগের জিন বাহক কিনা তা জেনে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
[৭] প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর পরই দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেন। জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে এবং জনসাধারণকে সুলভে মানসম্মত স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও পরিবার কল্যাণ (এইচএনপি) সেবা প্রদানের মাধ্যমে একটি সুস্থ, সবল ও কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সরকার ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।
[৮] গণমুখী স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন করে যুগোপযোগী স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নতুন নতুন হাসপাতাল,নার্সিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠাসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। সারাদেশে হাসপাতালগুলোর শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধিসহ চিকিৎসক, নার্স, সাপোর্ট স্টাফের সংখ্যাও বৃদ্ধি করেছি। গ্রাম পর্যায়ে জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে সারাদেশে প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
[৯] জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতাল থেকে মোবাইল ফোন ও অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা চালু করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ১৫ বছরে স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে প্রশংসনীয় অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধিসহ মাতৃমৃত্যু, নবজাতকের মৃত্যু ও অনুর্ধ্ব-৫ বছর বয়সী শিশুমৃত্যু হার, অপুষ্টি, খর্বতা, কম-ওজন ইত্যাদি হ্রাসে ক্রমাগত উন্নতি হচ্ছে।
[১০] শেখ হাসিনা বলেন, দুরারোগ্য ব্যাধি থ্যালাসেমিয়া এবং এর বাহকে-বাহকে বিয়ে প্রতিরোধের জন্য দেশের প্রতিটি বাড়ি ও মহল্লায় সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে সরকারের পাশাপাশি আমি সকল পেশাজীবী ব্যক্তি ও সংগঠন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, গণমাধ্যম, অভিভাবকসহ সচেতন নাগরিক সমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় স্বাস্থ্যখাতে রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আমরা সক্ষম হব, ইনশাআল্লাহ।