![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/themes/amader-orthoneeti/img/sky.jpg)
অন্য পেশায় ঝুকছেন সাপুড়েরা
![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/uploads/2021/06/sap-400x229.jpg)
ফেনী প্রতিনিধি : [১] সাপ নিয়ে মানুষের একদিকে যেমন ভয় রয়েছে, তেমনি সেই ভয়কে জয় করারও বাসনা রয়েছে। এজন্যই সাপকেন্দ্রিক বিভিন্ন আচার-প্রথা, পূজা, পৌরাণিক ও কিংবদন্তি কাহিনীর প্রচলন রয়েছে।
[২] সনাতন ধর্ম ও বাঙালি সাহিত্যের বড় অংশেও রয়েছে সাপের উপস্থিতি। সাপের বীণের সুর শুনে বড় হয়েছে প্রজন্মের অনেকেই। সাপ নিয়ে যাত্রা, চলচ্চিত্র, নাটক রয়েছে ভুরিভুরি। [৪] কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারে সাপুড়েদের সেই বীণ এখন আর বাজে না। সাপ নিয়ে সিনেমা, গানও হয় না আগের মতো।এমনকি গ্রাম্য হাট-বাজারে সাপের খেলার দেখা মেলে না আর, যা ছিল এক সময়ের সেরা আকর্ষণ।তবে এমন পরিস্থিতিতেও বাপ-দাদার পেশা ও নেশা ছাড়েননি অনেক সাপুড়ে, যদিও এ পেশায় পেট চালানোই দায় এখন।
[৫] এমনই একজন হীরা নাথ সাপুড়ে, বয়স ৭০ পেরিয়ে, বসতি ফেনীর পরশুরামের বিলোনীয়া বন্দর সংলগ্ন বাউরখুমা গ্রামে। কিশোর বয়সে সেই যে বীণ হাতে নিয়েছেন এখনো আঁকড়ে ধরে আছেন। [৬] জীবনের ৫০ বছর বীণ বাজিয়ে সাপের খেলা দেখিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। তবে শেষ বেলায় এসে পড়েছের বিপাকে। এখন কেউ আর এই খেলা দেখে না। সবার চোখ মোবাইলফোনের স্ক্রিনে কিংবা টেলিভিশনের পর্দায়। খিদের জ্বালায় এখন খুঁজছেন অন্য পেশা। [৭] হীরানাথ বলেন, মানুষ এখন মোবাইল, টিভিতেই সব দেখে। আমাদের খেলা আর কেউ দেখতে চায় না। আমরা এখন আছি বিপাকে।মানুষের আগ্রহ না থাকায় অভাব-অনটনে পড়ে সাপুড়েরা পেশা পরিবর্তন করছেন বলে জানান তিনি।
[৮] যেমন পরশুরামের বাউরখুমা গ্রামের পুরো সাপুড়ে পল্লীর হালের প্রজন্ম পূর্বপুরুষদের পেশায় অনাগ্রহী। তারা স্কুলে যাচ্ছে। সেই পল্লীর সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন অভিভাবকরাও [৯] বাউরখুমা গ্রামের সাপুড়ে পল্লীর স্বপ্না জানান, সাপ ধরতে গিয়ে তার স্বামী মারা গেছেন। এ কারণে সন্তানকে আর এ পেশায় দিতে চান না। সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করেছেন। লেখাপড়া করে চাকরি করবে, বীণ বাজাবে না। [১০] সীমান্তের বাউরখুমা গ্রাম থেকে ফেনী শহরতলীর লালপোল বেদে পল্লীতে এসে দেখা যায় এখানেও পূর্বপুরুষদের পেশা পরিবর্তনের সুর। মহাসড়কের পাশে বসবাস করলেও শিক্ষা, স্যানিটেশনসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় তাদের জীবন যেন অন্ধকার। এ পাড়ার সদস্যরা জানালেন, সন্তানদের পড়াতে পারেন না স্কুলে, ইচ্ছে করলেই পাওয়া যায় না সন্তানের জন্মসনদ।পাড়ার ষাটোর্ধ্ব আছিয়া বেগম জানান,সন্তানের একটা জন্মসনদের জন্য এর-ওর কাছে অনেক ঘুরেছেন, পাননি। সে কারণে বিদেশ পাঠানো যায়নি।
[১১] আরেকজন জানান, স্কুলে গেলে অন্য ছেলে-মেয়েরা বাইদ্দার পোলা বলে তাদের সন্তানদের কটূক্তি করে। শিক্ষকরাও আগ্রহ দেখান না। সে কারণে ইচ্ছে থাকলেও সন্তানকে স্কুলে পাঠানো যায় না।
[১২] কয়েক বছর আগেও কাউকে সাপে কামড়ালে সাধারণ মানুষ ডাক্তারের কাছে না গিয়ে সাপুড়ে খুঁজতো। আজকাল বনাঞ্চল কমছে, সাপ কমছে, কমছে সাপুড়ের সংখ্যাও।পাশাপাশি চিকিৎসা বিজ্ঞানের দ্রুত অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে সাধারণের মাঝে সচেতনতাও বাড়ছে। ফলে সাপে কাটলে সাপুড়ে খোঁজার প্রবণতাও কমেছে অনেক।জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, পিছিয়ে পড়া এই জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূল শ্রোতে আনতে কাজ করছে বর্তমান সরকার। নেওয়া হচ্ছে নানা উদ্যোগ।
[১৩] ফেনী সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শুসেন চন্দ্রশীল বলেন, পিছিয়ে পড়া অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী চান সমাজের সকল মানুষ উন্নয়নের স্রোতে আসুক।
[১৪] পরশুরাম উপজেলা চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী সাজেল বলেন, আমার পৌরসভার বাউরখুমা গ্রামের সাপুড়েদের জন্য বিভিন্ন সময়ে বরাদ্দ দিয়েছি। সামনেও তাদের জীবনমান উন্নয়নে পদক্ষেপ থাকবে।
[১৫] সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বলছেন, সাপুড়ে ও বেদে সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ সরকারের রয়েছে। সে আলোকে অনেকেই সুবিধাভোগী রয়েছেন।পরম্পরায় চলে আসা এ পেশাটি হারিয়ে গেলেও যেন সমাজের মূল স্রোতে টিকে থাকে সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ আশা করছেন মানুষেরা।
![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/themes/amader-orthoneeti/img/sky.jpg)