![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/themes/amader-orthoneeti/img/sky.jpg)
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে নেই ফায়ার সার্ভিস স্টেশন
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : [১] কুষ্টিয়ার সীমান্তবর্তী উপজেলা দৌলতপুর। ৪৬১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলা কুষ্টিয়া জেলার মধ্যে সর্ববৃহৎ উপজেলা এটি। ১৯৮৩ সালে দৌলতপুর থানাকে উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। দৌলতপুর উপজেলায় ১৪টি ইউনিয়ন, ১৬১টি মৌজা ও ২৪২টি গ্রাম রয়েছে।
[২] বৃহৎ এই উপজেলাটিতে প্রায় ৬ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। অত্যন্ত ঘনবসতির এই উপজেলাটিতে রয়েছে বেশ কয়েকটি মিল কারখানা। উপজেলাটিতে সাধারণ মানুষের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ মিলকারখানাগুলোতে মাঝে মধ্যেই ঘটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। আর এসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সাধারণ মানুষসহ ব্যবসায়ীদের যান মালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এক নিমেষেই পুড়ে শেষ হয়ে যাই মানুষের স্বপ্ন।
[৩] ফায়ার স্টেশন না থাকায় আগুন নেভাতে পাশের উপজেলা ভেড়ামারা, মিরপুর অথবা গাংনীর ওপর নির্ভর করতে হয়। তারা দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আসতে আসতেই সব কিছু পুড়ে শেষ হয়ে যায়। জানা গেছে, দৌলতপুরে ফায়ার স্টেশন স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হলেও আমলাতান্ত্রিক ও জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় কেটে গেছে প্রায় দুই যুগ।
[৪] দীর্ঘ চিঠি চালাচালির পর ২০২২ সালে জমির জটিলতা কেটে গেলেও ফায়ার স্টেশন কবে চালু হবে, সে প্রশ্নের জবাব নেই কারও কাছে। বৃহৎ আয়তনের এ উপজেলায় প্রায় ছয় লাখ মানুষের বাস। তাদের জানমালের নিরাপত্তায় নেই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। এলাকার বড় একটি অংশ দুর্গম হওয়ার পরও অগ্নিকাণ্ডসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের মতো আধুনিক ব্যবস্থা নেই। [৫] ২০০০ সালের দিকে উপজেলায় ফায়ার স্টেশন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। এরপর দাপ্তরিক চিঠি চালাচালিতে কেটে যায় অর্ধযুগ। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে স্টেশন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। তখন শুরু হয় জমি অধিগ্রহণের জটিলতা। একাধিক জায়গা অধিগ্রহণের চেষ্টা করা হলেও দাম বেশিসহ নানা জটিলতায় তা সম্ভব হয়নি।
[৬] সরকারি খাসজমিতে স্টেশন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হলেও সুবিধাভোগীদের মামলায় বিষয়টি থমকে যায়। ফলে সংশ্লিষ্টদের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তোলেন স্থানীয়রা।
[৭] ২০২২ সালে সদর ইউনিয়নের চুয়ামল্লিকপাড়া গ্রামের হাসিনা বানু ফায়ার স্টেশন করার জন্য ৮২ শতক জমি দান করেন। তবে এখনও আলোর মুখ দেখেনি। আগুনের ঘটনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঘরবাড়ি, সম্পদ হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
[৮] সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসেছেন অনেকে। সম্পদের সঙ্গে হারিয়ে গেছে অনেকের স্বপ্ন। দ্রুত আগুন নেভানোর আধুনিক ব্যবস্থা থাকলে অনেক সম্পদ রক্ষা করা সম্ভব হতো বলে ক্ষতিগ্রস্তদের অভিমত।
[৯] স্থানীয়দের অভিযোগ, ছয় লাখ মানুষের জানমাল রক্ষায় ধীরগতির উদ্যোগ দুঃখজনক। উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ না হওয়ার পেছনে জমি ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকে দায়ী করেছেন অনেকে।
[১০] সম্প্রতি আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত জয়রামপুর গ্রামের পানচাষি আজের আলী বলেন, উপজেলায় প্রায় প্রতিদিনই ছোটবড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। তার প্রায় দুই বিঘা জমির পানের বরজ পুড়ে গেছে। ধারদেনা করে গড়ে তোলা বরজ তার সংসারের আয়ের একমাত্র অবলম্বন ছিল। আগুনে ফসল পুড়ে তার মতো অনেকেই নিঃস্ব হয়ে গেছেন।
[১১] বাড়িতে আগুন লাগার পর দ্রুত আশপাশের বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। পাশের ভেড়ামারা ও মিরপুর উপজেলা ফায়ার সার্ভিসে খবর দিলে তারা আসার আগেই আগুনে সব পুড়ে শেষ হয়ে যায়। বাড়ি ও সম্পদ হারিয়ে আর ঘর তুলতে পারেননি।
[১২] সরকারিভাবে দেয়া টিন দিয়ে ঘর করে কোনোমতে বসবাস করছেন। কথাগুলো দৌলতপুর উপজেলার মহিষকুণ্ডি ও জামালপুর গ্রামের মুলাম আলী, আবদুল জব্বার, মকলেচ আলী ও সাইফুল ইসলামের। তাদের ধারণা, উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন থাকলে ক্ষতি কমানো যেত।
[১৩] স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কাগজ তৈরি করে ফায়ার সার্ভিস দপ্তরে পাঠানো হয়েছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ওবায়দুল্লাহ। তিনি বলেন, স্টেশন নির্মাণের কাজ কবে শুরু হবে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলতে পারবে।
[১৪] কুষ্টিয়া ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক জানে আলম বলেন, দৌলতপুরে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপনের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া হয়েছে। জমি দানপত্র হওয়ায় দাপ্তরিক কাগজ তৈরিতে কিছুটা সময় লাগছে।
[১৫] মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ও প্রয়োজনীয় অর্থ পেলে অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হবে। তবে কবে কার্যক্রম শুরু হবে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি তিনি।
![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/themes/amader-orthoneeti/img/sky.jpg)