সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস বীমা খাতের কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ার দাপট
মাসুদ মিয়া : [১] দেশের শেয়ারবাজার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার সূচকের উত্থানের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৫০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়লেও বীমা খাত যতটা দাপট দেখিয়েছে আর কোনো খাত এতটা দাপট দেখাতে পারেনি। [২] বীমা খাতের ৮১ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বেড়েছে। ফলে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক বেড়েছে পৌনে এক শতাংশ। একদিনে যতটা বাড়া সম্ভব চারটি কোম্পানির শেয়ার দাম ততটাই বেড়েছে। আরও ৮টির শেয়ার দাম বেড়েছে ৫ শতাংশের ওপরে। এর মধ্যে ৮ শতাংশের বেশি দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে দুটি প্রতিষ্ঠান। গতকাল বীমা খাতের তালিকাভুক্ত ৫৮টি বীমা কোম্পানির মধ্যে ৪৭টিই দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। [৩] বীমা কোম্পানিগুলোর শেয়ার দাম বাড়ার ক্ষেত্রে এমন দাপট দেখানোর ফলে সার্বীক শেয়ারবাজারেও ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ফলে টানা তিন কার্যদিবসের পতন কেটে ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিলেছে। সবকটি মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে লেনদেনের গতি। [৪] অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, কমেছে তার থেকে বেশি। তবে এ বাজারটিতেও দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখিয়েছে বীমা খাত। ফলে বেড়েছে সবকটি মূল্যসূচক। মূল্যসূচক বাড়লেও সিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কমেছে। এর আগে গত সপ্তাহের শেষ তিন কার্যদিবস শেয়ারবাজারে টানা দরপতন হয়। এ পরিস্থিতিতে রোববোর শেয়ারবাজারে লেনদেনের শুরুতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। ফলে লেনদেনের ৩০ মিনিটের মাথায় ডিএসইর প্রধান সূচক ৩০ পয়েন্ট কমে যায়। কিন্তু এরপর এক শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়ান। এতে লেনদেনের এক পর্যায়ে ডিএসইর তিন সূচকের মধ্যে দুটি ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। আর প্রধান মূল্যসূচক মাত্র ২ পয়েন্ট পজেটিভ থাকে। এ পরিস্থিতিতে দাম বাড়তে থাকে বীমা কোম্পানির শেয়ারের। লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে বীমার দাপট বাড়তে থাকে। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে অন্য খাতের ওপরও।
[৫] গতকাল লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ১৯৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বীপরীতে দাম কমেছে ১৫৯টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৩৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। দাম বাড়ার তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১২টির দাম একদিনে যতটা বাড়া সম্ভব ততোটাই বেড়েঠে। এর মধ্যে বীমা কোম্পানি রয়েছে ৪টি।
দাম বাড়ার ক্ষেত্রে বীমা কোম্পানির এমন দাপটের ফলে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৩৫ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৬৯৬ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৭ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২৫০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১১ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ২৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। এদিকে ডিএসইতে লেনদেন বেড়ে হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি চলে এসেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৯৮৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৯১১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ৭৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা।
এ লেনদেনে সব থেকে বেশি অবদান রেখেছে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিসের শেয়ার। কোম্পানিটির ৪৭ কোটি ৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বেস্ট হোল্ডিংয়ের ৪৬ কোটি ২৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ৩৮ কোটি ৫২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে নাভানা ফার্মা।
[৫] এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে-গোল্ডেন সন, ফরইস্ট নিটিং, ই-জেনারেশন, মালেক স্পিনিং, ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোড, লাভেলো আইসক্রিম এবং কহিনুর কেমিক্যালস।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানিহলো:পদ্মা ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ট্রাস্ট ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, নাভানা ফার্মা, আইসিবী, মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ই-জেনারেশন, লিগাসী ফুটওয়্যার, স্টাইল ক্র্যাফট ও সিলভা ফার্মা ।
দর কমার শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:-জিকিউবলপেন, সিভিওপিআরএল, আরামিটলি, রহিমাফুড, জুটস্পিনার্স, স্যালভোক্যামিক্যাল, প্রাইম ব্যাংক, হামী ইন্ডাস্ট্রিজ, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ ও ফ্যামিলীটেক্স।
[৬] অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বীক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৯৭ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন অংশ নেওয়া ২৩২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯৮টির দাম বেড়েছে। বীপরীতে দাম কমেছে ১০১টির এবং ৩৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা।