
অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন-২০২৪ খসড়া ধান চাল গম আটা আলু ডাল ভোজ্যতেল মাছ মাংস-সহ ৩০ পণ্য অত্যাবশ্যকীয়

সোহেল রহমান : [১] দেশে চাহিদা অনুযায়ী খাদ্যসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের উৎপাদন, সরবরাহ, বাজার ব্যবস্থাপনা ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিদ্যমান অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইন যুগোপযোগী করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন ২০২৪-এর একটি খসড়া প্রণয়ন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
[২] প্রস্তাবিত আইন অনুসারে বা অর্পিত ক্ষমতা অনুসারে আইনের আওতায় কোন আদেশের ব্যাপারে কোন আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না।
[৩] প্রণীত খসড়ায় অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হিসেবে ধান, চাল, গম, আটা ও আলু, চিনি, লবন, ডাল, ভোজ্যতেল, মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, ছোলা ও বিভিন্ন মসলাসহ ৩০টি খাদ্যজাত পণ্য এবং এর বাইরে আরও দশ ক্যাটাগরির পণ্য অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।
[৪] এগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ শিশু ও রোগীর খাবার এবং অনুরূপ দ্রব্যাদি; ওষুধপত্র ও ইনজেকশন; চিকিৎসা ও শৈল্য চিকিৎসার যন্ত্রপাতি; কাগজ ও নিউপ্রিন্ট; সার; জ্বালানি তেল (পেট্রোল, ডিজেল, কেরোসিন ও ফার্নেস অয়েল); গ্যাস (পাইপলাইনে সরবরাহকৃত গ্যাস ও এলএনজি) ও রাসায়নিক দ্রব্যাদি; বিদ্যুৎ (সৌর বিদ্যুৎসহ); লোহা ও ইস্পাত; সিমেন্ট ইত্যাদি।
[৫] এছাড়া প্রয়োজনে সরকার যে কোন সময়ে গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হিসেবে নতুন পণ্য সংযোজন কিংবা প্রণীত তালিকা থেকে কোন পণ্য বাদ দিতে পারবে বলে খসড়া আইনে বলা হয়েছে। [৬] এক্ষেত্রে নতুন অন্তর্ভূক্ত পণ্যটির অত্যাবশ্যকীয় মেয়াদকাল ছয় মাসের বেশি হবে না। তবে সরকার প্রয়োজন মনে করলে মেয়াদ ছয় মাসের পর আরও বাড়াতে পারবে।
[৭] জানা যায়, বর্তমানে প্রচলিত অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৫৬-এ অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের যে তালিকা ছিল সেখান থেকে বেশকিছু পণ্য বাদ দেয়া হয়েছে এবং নতুন যুক্ত হয়েছে বিদ্যুৎ। বাদ পড়ার মধ্যে নিত্যপণ্য হিসেবে রয়েছেÑ চা, সিগারেট, শেভিং ব্লেড, ইলেকট্রিক্যাল পণ্য, গ্লাস ও কাঠ ইত্যাদি।
[৮] সংশ্লিষ্টদের মতে, অত্যাশ্যকীয় পণ্য তালিকায় পানি, সাবান, ডিটারজেন্ট পাউডার, টুথপেস্ট ও কীটনাশকের মত প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোও অন্তর্ভূক্ত করা যেত।
[৯] জানা যায়, ইতোপূর্বে ২০১২ সালে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের তালিকা সংশোধন করা হয়েছিল। তখন ১৭ ধরনের পণ্যকে নিত্যপণ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে পণ্য তালিকা সংশোধন করা হলেও ওই সময় ১৯৫৬ সালের পুরনো আইনটিই বহাল রাখা হয়।
[১০] বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রণীত খসড়া আইন অনুযায়ী, যেকোনো অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক বা ন্যায্য মূল্যে বিক্রয় বা প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে সরকার সকল অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, সংরক্ষণ, পরিবহন, সরবরাহ, বিক্রি, নিষ্পত্তি, অধিগ্রহণ, ব্যবহার বা ভোগ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করতে এবং এগুলোর ব্যবসা-বাণিজ্য সীমিত করতে পারবে সরকার।
[১১] পাশাপাশি অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের ক্রয় বা বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ এবং পণ্যের বিক্রি স্থগিত রাখা বা নিষিদ্ধ করার ক্ষমতাও সরকারের থাকবে। এছাড়া যেকোনো অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের আমদানি ও রপ্তানি উন্মুক্ত বা নিষিদ্ধ করতে পারবে সরকার। অত্যাবশ্যকীয় কৃষিপণ্য আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে মৌসুম-ভিত্তিক শুল্ক কাঠামো প্রবর্তন এবং অত্যাবশ্যকীয় পণ্য উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক হার যৌক্তিকভাবে নিম্ন পর্যায়ে রাখা হবে।
[১২] সরকার যেকোনো অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্য নিম্ন আয়ের জনগণের কাছে বিক্রির জন্য ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (টিসিবি) দেশি ও বিদেশি উৎস থেকে সরাসরি পণ্য কেনার ক্ষমতা দিতে পারবে।
[১৩] খসড়া আইনে কোন ঘটনা বা অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে যে কোন স্থান কিংবা যানবাহনে প্রবেশ ও তল্লাশি এবং পণ্য আটকের বিধান রাখা হয়েছে। কোন ব্যক্তি বা কোম্পানি এ আইনের আদেশ লঙ্ঘন করলে কোম্পানির ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক পরিচালক, ব্যবস্থাপক, সচিব বা অন্য কোন কর্মকর্তা বা এজেন্ট দোষী সাব্যস্ত হবেন; যদি না তিনি প্রমাণ করতে সক্ষম হন যে, আইনের ওই লঙ্ঘন তার জানার বাইরে সংঘটিত হয়েছে।
[১৪] আইন লঙ্ঘনকারীকে তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রাখা হয়েছে। কেউ নির্দেশ পরিপালনে ব্যর্থ হলে, আদেশ লঙ্ঘনের চেষ্টা করলে এমনকি প্ররোচনা দিলেও তিনি তিন বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন বা তিন লাখ টাকা জরিমানা গুনবেন অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
[১৫] খসড়া অনুযায়ী, কেউ মিথ্যা তথ্য দিলে বিদ্যমান আইনে শুধু তিন বছরের কারাদণ্ডের বিধান আছে। নতুন আইনের খসড়ায় প্রস্তাব করা হয়েছে, অপরাধ প্রমাণিত হলে দোষী ব্যক্তি কারাদণ্ডের পাশাপাশি এক লাখ টাকা জরিমানা দেবেন বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
