বাংলাদেশে আর বিশ্ববিদ্যালয় বানানোর মত শিক্ষক নেই
কামরুল হাসান মামুন
সরকারকে বলছি একটা ওয়ার্ল্ড ক্লাস গবেষনা ইনস্টিটিউট খুলেন যেখানে থাকবে সর্ব প্রকার সুযোগ সুবিধা। ইনস্টিটিউট না বানিয়ে শুনলাম সরকার আরও ৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বানাতে যাচ্ছে। শরবতে চিনি না দিয়ে কেবল পানি মিশিয়ে শরবতের গ্লাসের সংখ্যা বাড়াচ্ছে। এতে যে শরবত আর শরবত থাকছে না সেই দিকে খেয়াল নাই। শরবতের চিনি হলো শিক্ষক। বাংলাদেশ কয়টি সর্বোচ্চ কয়টি বিশ্ববিদ্যালয় বানাতে পারবে তা মূলত বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার মত কোনজন শিক্ষক আছে তার উপর নির্ভর করবে। আমি মনে করি না বাংলাদেশে আর বিশ্ববিদ্যালয় বানানোর মত শিক্ষক আছে। সেটা আসলে অনেক আগেই শেষ করে ফেলেছি। এখন দরকার এইসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সাপ্লাই দেওয়ার কারখানা যাকে আমি ইনস্টিটিউট বলি।
আর আমি যেই ইনস্টিটিউট বানানোর কথা বলছি সেটা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনের ইনস্টিটিউট হলে হবে না। আমাদের প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েই একাধিক ইনস্টিটিউট আছে। যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে ইনস্টিটিউট অফ এডুকেশন এন্ড রিসার্চ। কিন্তু খোলার কয়েক বছরের মধ্যেই আন্ডার গ্রাজুয়েট ডিগ্রি খুলে এর চরিত্র হারিয়ে ফেলেছে। আন্ডার গ্রাজুয়েট খুললে বিভাগ আর ইনস্টিটিউটের পার্থক্য কি থাকলো? একই কথা বলা চলে ইনস্টিটিউট অফ স্টাটিস্টিক্যাল রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং এর ক্ষেত্রে। ১৯৬৪ সালে এই ইনস্টিটিউটটি খোলা হয় এবং এরপর এটিও এখন বিএসসি অনার্স ডিগ্রী দেওয়া শুরু করেছে। তারপর আছে ইনস্টিটিউট অফ বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা ওইঅ এটিও আন্ডার গ্রাজুয়েট ডিগ্রি দেয়। একই কথা বলা চলে ইনস্টিটিউট অফ নিউট্রিশন এবং ফুড সাইন্সেস, ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার এন্ড রিসার্চ এবং ইনস্টিটিউট অফ মডার্ন ল্যাংগুয়েজ। আরো ৩টি ইনস্টিটিউট আছে যেমন এনার্জি রিসার্চ ইনস্টিটিউট। এটি যে কি করে জানিনা। এটির না আছে গবেষণা, না দেয় আন্ডারগ্রাজুয়েট ডিগ্রি।
বিভাগ থেকে ইনস্টিটিউটের পার্থক্য কি? ইনস্টিটিউটে কেবল মাস্টার্স, পিএইচডি এবং এক্সক্লুসিভলি গবেষণা এই ৩টি কাজ প্রধানত হয়। এখানকার ফ্যাকাল্টিদের আন্ডার গ্রাজুয়েট পড়াতে হয় না। ভারতে যেই আইআইটিগুলো আছে বা ভারতের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সাইন্স আছে এইগুলোর নামে ইনস্টিটিউট থাকলেও আমেরিকার এমআইটির আদলে গড়া। কলকাতায় অনেকগুলো সত্যিকারের ইনস্টিটিউট আছে যেমন ঈঝওজ-ওহফরধহ ওহংঃরঃঁঃব ঙভ ঈযবসরপধষ ইরড়ষড়মু (ঈঝওজ–ওওঈই), ঝ.ঘ. ইড়ংব ঘধঃরড়হধষ ঈবহঃৎব ভড়ৎ ইধংরপ ঝপরবহপবং (ঝঘইঘঈইঝ), ওহফরধহ ঝঃধঃরংঃরপধষ ওহংঃরঃঁঃব, ওহফরধহ অংংড়পরধঃরড়হ ভড়ৎ ঃযব ঈঁষঃরাধঃরড়হ ড়ভ ঝপরবহপব সহ আরও অনেক বিষয়ে অনেক ইনস্টিটিউট আছে যেখানে কেবল পিএইচডি, মাস্টার্স আর গবেষণা হয়। বাংলাদেশে সবচেয়ে পুরোনো ইনস্টিটিউট হলো ইধহমষধফবংয ঈড়ঁহপরষ ড়ভ ঝপরবহঃরভরপ ধহফ ওহফঁংঃৎরধষ জবংবধৎপয (ইঈঝওজ)! কি রিসার্চ হয় আমরা সবাই জানি। ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে এটির অবস্থান।
আমি চাই দেশে এমন একিটি ইনস্টিটিউট হবে যেখানে থাকবে ওয়ার্ল্ড ক্লাস গবেষক, থাকবে ওয়ার্ল্ড ক্লাস বেতন ও অন্যান্য সুবিধা যেন প্রবাসী ও বিদেশের বরণ্য স্কলাররা বছরে অন্তত ৩ মাস ওখানে এসে থেকে আমাদের সাথে গবেষণায় কোলাবোরেশন করতে পারে। কিছু রেসিডেন্ট সায়েন্টিস্ট থাকবে যারা উচ্চমানের বেতন ও গবেষণার পূর্ণ সুবিধা পাবে। থাকবে না কোন আন্ডার গ্রাজুয়েট প্রোগ্রাম। কিন্তু কিছু মাস্টার্স প্রোগ্রাম এবং মূলত পিএইচডি প্রোগ্রাম থাকবে মূলত গবেষনা ভিত্তিক। সেখানকার গবেষকদের এমন বেতন দেওয়া হবে যাতে সেখানকার সায়েন্টিস্টদের কাউকে কোথাও পার্টটাইম পড়াতে হবে না। তারা সর্বত্র ভিভিভিভিআইপি মর্যাদা পাবে। যারা বিদেশ থেকে ৩ মাসের জন্য আসবে তাদের জন্য থাকবে নিরাপদ ও মনোরম পরিবেশে উচ্চ মানের গেস্ট হাউস। তবেই দেশ শিক্ষা ও গবেষণায় এগিয়ে গিয়ে সোনার মানুষ তৈরী করতে থাকবে। এই ইনস্টিটিউটই হবে স্কলার তৈরির কারখানা। যেখান থেকে উচ্চ মানের শিক্ষক তৈরী হবে যারা দেশের বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াবে। ওয়ার্ল্ড ক্লাস ইন্সিটিউট ছাড়া পৃথিবীর কোন দেশ উন্নত হওয়ার নজির নেই। লেখক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক