
দেশের খাদ্যপণ্যের বাজার কোনো যুক্তি অনুসরণ করে না কেন?
সৈয়দ মনসুর হাশিম : পরিবহন, আমদানি, পাইকারি ও খুচরা নিয়ে বাংলাদেশের খাদ্য বাজার যে একেবারেই কোনো যুক্তি অনুসরণ করে না তা এখন সাধারণ জ্ঞান। এই দেশের প্রতিটি নাগরিক এখন যে কোনও দিন যে কোনও পণ্যের দাম ৫.০ থেকে ৫০ টাকার ব্যবধানে বৃদ্ধি করতে অভ্যস্ত। ম্যাজিস্ট্রেটদের দ্বারা পরিচালিত তথাকথিত ‘মার্কেট ড্রাইভ’ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও টেলিভিশন ক্রুদের একটি বাহিনীকে অনুসরণ করে বাজারমূল্যের হেরফেরেও ধাক্কা দেয়নি। পর্যাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট পাওয়া যায় না বলে নয় বরং এটাও যে জরিমানা আরোপিত প্রকৃতিতে এতোটাই ক্ষুদ্র যে তারা তাদের পথ সংশোধন করতে বাধ্য করে না ও ভোক্তাদেরও শেষ পর্যন্ত সেগুলো বহন করতে বাধ্য করা হয়। স্পষ্টতই, এটি যুক্তিকে অস্বীকার করে। মূল্যবৃদ্ধির জন্য বাজারের কারসাজিকারীরা যে অজুহাত দেখায় তা অযৌক্তিক ও স্বেচ্ছাচারী। সম্প্রতি মার্কিন ডলারের বিপরীতে দেশটির মুদ্রার অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশ টাকার অফিসিয়াল রেট ১১০ টাকা থেকে ১১৭ টাকা হয়েছে।
খাদ্যপণ্যের বাজার, প্রধান থেকে শুরু করে সবজি সব কিছুরই দাম বেড়েছে। কিন্তু কেন? এমনকি সবুজ মরিচের দামও অদ্ভুতভাবে বিনিময় হারের সঙ্গে ছিলো। দেখা যাচ্ছে যে আমাদের ব্যবসায়ীদের কিছু মনস্তাত্ত্বিক মূল্যায়নের প্রয়োজন কারণ সবুজ মরিচ একটি স্থানীয় পণ্য ও আমদানির সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। তবুও এটি অবমূল্যায়নের ঘোষণার পর থেকে ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে অন্যান্য সমস্ত খাদ্যদ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির দৌঁড়ে সোনার পদক নিতে সক্ষম হয়েছে। এটি একটি বিস্ময়কর কীর্তি। সংক্ষেপে বলতে গেলে, খাদ্যের পুরো সরবরাহ শৃঙ্খলটি এখন ব্যবসায়িক কোটারিদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত যারা সরকারের নির্দেশের বিষয়ে কম যত্ন নিতে পারে না। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ট্যারিফ কমিশন, ভোক্তাদের স্বার্থ তত্ত্বাবধান ও সুরক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত অন্য কোনো রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো কী ভাবছে বা বলে তা বিবেচ্য নয়। ভোক্তারা যা করতে পারে তা হলো ফিসফিস করা, চিৎকার করা ও তাদের যৌথ ক্ষত চাটা।
যে সমস্ত বিষয়গুলো হলো তাণ্ডবের মাধ্যমে আপত্তিজনক মুনাফা অর্জন করা। এই বিপর্যয়ের পরে ও খুব স্পষ্টভাবে, হাস্যকর, আপাতদৃষ্টিতে খাবারের দামের অপ্রতিরোধ্য বৃদ্ধির পরে সবচেয়ে বেশি যা আশা করা যায় তা একই রকম। মন্ত্রিপরিষদ মন্ত্রীদের উপস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আরও বৈঠক, এই নৈরাজ্য বরদাস্ত করা হবে না বলে আরও আশ্বাস, ‘দুষ্ট’ কারসাজিকারীদের বিরুদ্ধে আরও কিছু ‘বাজার অভিযান’। সঠিক পুষ্টির অভাবের কারণে ভোক্তাদের মতো এই অবিরাম নাটকটি পাতলা হয়ে গেছে। যখন কেউ জবাবদিহি করতে পারে না ও মূল্য কাঠামোতে শূন্য স্বচ্ছতা থাকে তখন এই ধরনের পরিস্থিতি দেখা দেয়। রাশিয়ায় প্রায় এক দশক ধরে বরিস ইয়েলৎসিনের শাসনামলে এটি ঘটেছিলো। অর্থনীতিটি কার্যকরভাবে অলিগার্চদের দ্বারা খোদাই করা হয়েছিলো যারা রাশিয়ান সরকারকে নীতি নির্ধারণ করেছিলো। জনগণ নীরবে ভোগে কারণ তাদের সুস্থতার আর কোনো গুরুত্ব নেই। বাংলাদেশ কী একই ধরনের পথ অনুসরণ করছে যেখানে কয়েক জন লোকের মূল্যে পরিস্থিতির সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করবে?
সধহংঁৎ.ঃযবভরহধহপরধষবীঢ়ৎবংং@মসধরষ.পড়স অনুবাদ : জান্নাতুল ফেরদৌস। সূত্র : দি ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস
