![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/themes/amader-orthoneeti/img/sky.jpg)
দেশের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি, আমাদের গ্রাজুয়েট ও গ্রীন ফ্যাক্টরি
![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/uploads/2024/04/Quazi-M-Murshed1-359x400.jpg)
কাজী এম. মুর্শেদ
ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি বড় হওয়া ভালো। আমাদের দেশের এই ইন্ডাস্ট্রিতে ঢুকবার একটা সুযোগ আছে। ভারতে যেমন এনআইএফটি বা ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ ফ্যাশন টেকনোলজি আছে, সেই আঙ্গিকে বাংলাদেশে বিআইএফটি বা বিজিএমইএ ইন্সটিটিউট অফ ফ্যাশন টেকনোলজি খোলা হয়েছে। ভারত বড় বাজার, তাদের গ্রাজুয়েটরা চাকরি পায়, আমাদের গ্রাজুয়েটরা তেমন কোনো অফার পায় না। তবে বিদেশে গেলে খারাপ করবে না, যদি প্যারিস, নিউইয়র্ক, মিলান বা লন্ডন যায়। কিছু করে খেতে পারবে। এই যে এতো গার্মেন্টস নিয়ে আমরা গর্ব করি, বিশেষ করে গ্রীন ফ্যাক্টরি, এখানে কী হয়? এখানে বিদেশ থেকে ডিজাইন দেয়, সেই অনুযায়ী কাঁচামাল আমদানি করে তৈরি পোশাক রপ্তানি করা হয়। এখানে কোনো ডিজাইনারের কাজের সুযোগ নেই, স্রেফ লেবার আমরা দিই। ৩৫ লাখ সেমিদক্ষ ও দক্ষ কর্মীদের পরিচালনা করতে ভারত থেকে ম্যানেজমেন্ট, শ্রীলংকা থেকে কোয়ালিটি কন্ট্রোল কর্মকর্তা আনতে হয়। আমাদের মালিকরা যাঁদের অনেকের মূল পার্টনারই ভারত বা চীনের থেকে আসে, তারা কাজের অর্ডার আনে। একটা দেশের রপ্তানির ৮৪ শতাংশ যখন তৈরি পোশাক, কিন্তু জিডিপিতে অবদান সাকুল্যে ৮ শতাংশ তখন বুঝবেন, অনেক কিছু করার আছে।
সরকারের অনেককিছু করার আছে, কিন্তু তেমন না জানা থাকলেও একমাত্র রপ্তানিতে কিছু ছাড় দেওয়া ছাড়া তেমন কোনো দায়িত্ব নেয় না। এই সেক্টরকে প্রাইভেট ইনভেস্টররা দাঁড় করিয়েছে। সুযোগ দেওয়া নেওয়ার খেলা চলে, একবার শুল্ক ছাড়, একবার বিদ্যুৎ দেওয়া, একবার ফান্ড এলোকেট করা, আবার তুলে নেওয়া, গ্যাসের দাম বাড়ানো, এসবের মধ্যে চলে। সরকার কখনো জিজ্ঞাস করেনি কী সাহায্য দরকার। আমি এই শিল্পে না থেকেও বলতে পারি সরকারের কী করা দরকার, আর এই শিল্প উদ্যোক্তারা চায় এমপি হতে, ভিআইপি বা সিআইপি ট্রিটমেন্ট, আয়কর সুবিধা, বিদেশে অর্থ পাঠানোর সুযোগ এসব।
বিদেশি এক টিভি চ্যানেলে বাংলাদেশের শিল্পের ওপর দেখছিলাম, তারা কয়েক সাংবাদিক বাংলাদেশ, ভারত, ভিয়েতনাম ঘুরে দেখায়। ভারতে চাইল্ড লেবার আর লম্বা কাজের সময়, সঙ্গে ছোট এই শিশুদের পড়াশোনার সুযোগ নেই, একরকম জেলখানার মতন, ফ্যাক্টরি থেকে বের হবার সুযোগ নেই। সেখানে খাওয়া ও ঘুমানো। ভিয়েতনামের উল্লেখ করার মতো ছিলো তারা একটা বিশাল মডেল ফ্যাক্টরি করেছে, যেকোনো বিদেশি ক্রেতা গেলে মুগ্ধ হয়। তবে এটা ভাড়ায় দেওয়া হয়, সাইনবোর্ড সব বদলে ফেলা হয়। দুইদিন দুই ফ্যাক্টরি ঘুরে দেখালো সেই একই ফ্যাক্টরি দেখছে যেখানে সবাই সুখে আছে। অন্য ব্যাপার ছিলো যে কেউ ইউনিয়ন করতে গেলে পুলিশের ডান্ডায় আর নাম নেয় না। ভিয়েতনামে কোনো লেবার আন্দোলন নেই, মার্কিন ক্রেতারাও তেমন কথা বলে না। আমাদের দেখিয়েছিলো অদক্ষতা। এক হলো নেগোসিয়েশনে অদক্ষতা, দ্বিতীয় শ্রমিকদের বেতনে ঠকানো আর তৃতীয় কতো কষ্ট করে থাকে।
আপনাদের অনেকেই আছেন এই শিল্প বোঝেন, আমি পর্যবেক্ষণ থেকে বললাম। যতোক্ষণ না আমরা ডিজাইনে ঢুকতে পারবো, কোনো লাভ নেই। এই ইন্ডাস্ট্রি চলেই প্যাটেন্ট, কপিরাইটের পয়সা দিয়ে। কোভিডের সময় বেশ কিছু অর্ডার ক্যানসেল হয় যা উদ্বৃত্ত হিসেবে ফেলে না রেখে আমাদের উদ্যোক্তারা মালোয়েশিয়াসহ কয়েক দেশে বিক্রি করে। ট্যাগ না খোলার জন্য কপিরাইটের মামলায় তাদের রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। ২০২৬ এ উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় আসবার পর আমাদের মেধাসত্ত্বের জন্য যেমন অর্থ দিতে হবে, তেমনি বিভিন্ন ঋণে সুদের হার বাড়বে। ধরেন ভিনসেন্ট ভ্যানগগের একটা ছবি দেখাতে গেলে সেটার মেধাসত্ব দেওয়া লাগবে সেই মিউজিয়ামকে। তৈরি পোশাক বানানোতে আমরা ভালো করার সঙ্গে বিশ্বমানের ইন্সটিটিউট করতে হবে যারা ডিজাইনার হিসেবে কাজ করে এই মেধাসত্ত্বের টাকা আয় করতে পারে। আমাদের এক আড়ং, তার চিফ ডিজাইনার ভারতের এনআইএফটি পাস করা, বাংলাদেশের ফ্যাশনের রাজা হিসাবে বসে আছে। বাংলাদেশ সেই লেভেলের ডিজাইনার দিতে পারেনি যে আড়ংয়ের পোশাকের ডিজাইন করবে। লেখক: অর্থনীতি বিশ্লেষক
![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/themes/amader-orthoneeti/img/sky.jpg)