![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/themes/amader-orthoneeti/img/sky.jpg)
ঋণখেলাপি, করখেলাপি ও অর্থ পাচারকারী একসূত্রে গাঁথা?
শরিফুল হাসান
বছরে ৭০০ কোটি ডলার পাচার হয়ে যাচ্ছে, এটা নিয়ে কেউ কিছু বলে না। যখন ঋণ খেলাপিওয়ালা বেশি বড় হয়ে যায়, তখন এক হাজার টাকা কৃষিঋণের কারণে কেউ জেলে যায়, আর ১০ হাজার কোটি টাকা শিল্পঋণের খেলাপি গ্রাহক সরকারের পাশে বসে। এখন যে যতো বেশি শক্তিমান, সে ততো বড় খেলাপি। তার সুদ মওকুফও হয় ততো বেশি। কথাগুলো বলেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। তিনি বলেছেন, ২০০৩ সালে সুদ মওকুফ শুরু হয়। আমার কাছে ক্ষমতা থাকলে সুদ মওকুফ সুবিধা এখনই বন্ধ করে দিতাম। তিনি বলেন, ঋণখেলাপি, করখেলাপি ও অর্থ পাচারকারী এক সূত্রে গাঁথা। তারা যখন দেখবে শাসককুলের চক্ষু লাল হয়ে গেছে, তখনই তারা টাকা ফেরত দেওয়া শুরু করবে। তার আগে নয়।
এখন শক্তিমান কেউ যদি সরকারকে বোঝাতে পারে মূল্যস্ফীতি কমানোর উপায় খেলাপি ঋণ আদায় করা। এখন কে বোঝাবে, এটা একটা বিষয়। ব্যাংক একীভূত করার বিরোধিতা করে সাবেক এই গভর্নর বলেন, কাজটা ঠিক হয়নি। অশোভনীয় হয়ে গেছে। বেসিক ব্যাংককে যতই একীভূত করা হোক, সেটা ভালো হবে না। ওই ব্যাংক যিনি নষ্ট করেছেন, শুনেছি দেশেই আছেন। আগে ওনার নাম ভিন্ন ছিল, পরে ‘শেখ’ হয়েছেন। কার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে আছেন জানি না। জানলেও নাম বলতে পারতাম না। কারণ, এই বয়সেও আমি ‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে’। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ব্যাংক একীভূত করা, টাকা ও ডলারের বিনিময় হার, আয়বৈষম্য, মূল্যস্ফীতি, অর্থ পাচার, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবলতা ও দুর্বলতা নিয়েও কথা বলেছেন। আমি তাঁর কথাগুলো মুগ্ধ হয়ে শুনেছি।
সাবেক এই গভর্নর মনে করেন, জোরপূর্বক ব্যাংক একীভূত করার ফল ভালো হয় না। খারাপ ব্যাংক ভালো করার এটা একমাত্র পথও নয়। এর বিকল্প আছে। এখন যাদের ভালো ব্যাংক বলা হচ্ছে, এমন চারটি ব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংকই একসময় তদারক করে ভালো করেছে এবং সেটা হয়েছিল ফরাসউদ্দিনের আমলেই।
ষাটের দশকে প্রগতিশীল ছাত্র আন্দোলন করা ফরাসউদ্দিন অর্থনীতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষে সেখানেই দুই বছর শিক্ষকতা করেন। পরে তিনি সিএসপিতে যোগ দেন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একান্ত সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি হিসেবে একাধিক দেশে দায়িত্ব পালন করেছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ১৯৯৮ থেকে ২০০১ সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে অনেক সংস্কারের কাজ শুরু করেন।
আমার মনে হয়, বর্তমান সরকার তাঁর কথাগুলো শুনতে পারে। কারণ তিনি সবসময় সুপরামর্শ দেন। মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘গত ১৫ মাসে অনেক দেশ মূল্যস্ফীতি অর্ধেক কমিয়ে এনে ৫ শতাংশে এনেছে। আমাদের মূল্যস্ফীতি এখনো উচ্চ। বাজার তদারকি করতে হবে টিভি ক্যামেরা ছাড়া। ভোজ্যতেলের কয়েকজন আমদানিকারককে সোহাগ না করে কিছুদিন শাসন করতে হবে। পাশাপাশি গুটিকয় আমদানিকারকের পরিবর্তে আমদানিকারক বাড়াতে হবে। এতে উপকার পাওয়া যাবে। মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন আরও বলেন, আমদানিতে অনেক মধু। এই মধু তারা অনেকের সঙ্গে ভাগ করে। এ জন্য আমরা আমদানি থেকে বের হতে পারছি না।
তিনি বলেন, বৈষম্য অনেক বেড়ে গেছে। এটা কমানো সম্ভব। এ জন্য রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। রাজনীতিবিদেরা যদি সিদ্ধান্ত নেন, বৈষম্য কমাতে চান, তাহলে অর্থনীতি সেই পথে যাবে। মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেছেন, শক্তিমান কেউ যদি সরকারকে বোঝাতে পারে মূল্যস্ফীতি কমানোর উপায় খেলাপি ঋণ আদায় করা। এখন কে বোঝাবে, এটা একটা বিষয়। জানি না কেউ বোঝাবে। খুব খালি চেখে আমরা বুঝি টাকা পাচার, লুটপাট. দুর্নীতি এগুলো একটা দেশকে পিছিয়ে দেয়। জানি না আমাদের নীতি নির্ধারকেরা কেন এই কথাগুলো বোঝেন না? জানি না কে তাদের বোঝাবে। সেজন্যই বলি হে আল্লাহ তুমি আমাদের বোধ দাও। লেখক: কলামিস্ট
![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/themes/amader-orthoneeti/img/sky.jpg)