কর ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশনে চার গুণ বাড়বে রাজস্ব আদায় : সিপিডি
সোহেল রহমান : [১] কর ব্যবস্থার ন্যায্য ও টেকসই ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে আগামী ২০২৯-৩০ সাল নাগাদ দেশের রাজস্ব আয় ১৬৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হতে পারে, যা চলতি অর্থবছরের চারগুণ। একই সঙ্গে দেশের কর-জিডিপি অনুপাতও বর্তমানের ৮ শতাংশের নিচে থেকে দ্বিগুণ হতে পারে।
[২] বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর এক নতুন গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। রোববার ঢাকায় ডিজিটালাইজেশন অব দ্য ট্যাক্সেশন সিস্টেম ইন বাংলাদেশ: দ্য নেক্সট ফ্রন্টিয়ার ফর হায়ার রিসোর্স মবিলাইজেশন শীর্ষক এক সংলাপে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
[৩] প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে সিপিডি’র সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, করদাতারা কর কর্তৃপক্ষের ক্ষমতার যথেচ্ছ ব্যবহারকে ভয় পান। ডিজিটালাইজেশন এই ভয় কমাতে সাহায্য করবে। অন্যদিকে যারা কর না দিয়ে অর্থপাচার করছে, তারা রাজনৈতিক ও আর্থিকভাবে যথেষ্ট প্রভাবশালী।
[৪] সরকারি ব্যয়ের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, যেসব দেশ সরকারি ব্যয়ের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে তারা সম্ভাব্য করদাতাদের কর দিতে উৎসাহিতও করে।
[৫] গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে সিপিডি’র সম্মাননীয় ফেলো মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ যদি ২০২৮ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজেশন করতে পারে, তাহলে ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৪৫ বিলিয়ন ডলারকে ছাড়িয়ে ২০৩০ সালে রাজস্ব আয় ১৬৭ বিলিয়ন ডলার হতে পারে। তবে রাজস্ব আহরণের বিদ্যমান প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে ওই সময়ে তা মাত্র ৯০ বিলিয়ন ডলার হবে।
[৬] কর ব্যবস্থার ডিজিটাইজেশনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর উদ্যোগের অভাব রয়েছে এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, যথাযথ অভ্যন্তরীণ ও আন্ত সমন্বয় ছাড়া বাংলাদেশের রাজস্ব প্রশাসন ন্যায্য ডিজিটাইজেশন ও অটোমেশন অর্জন করতে পারবে না।
[৭] ডিজিটাইজেশন অর্জনের জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে একটি সময়নিষ্ঠ ডিজিটালাইজেশন এবং অটোমেশন কর্মসূচি বাস্তবায়নের পরামর্শ পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, যার আওতায় থাকবে সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়া। এটি কর ব্যবস্থার আন্তঃসমন্বয়ের পাশাপাশি সফটওয়্যার ডেটাবেজের সাথেও সামঞ্জস্য রাখবে।
[৮] এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মজিদ বলেন, ১৯৯০ এর পর থেকে রাজস্ব বোর্ডের ডিজিটাইজেশনের লক্ষ্যে অন্তত ২৫টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এগুলোর ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়নি। গত এক দশকে এনবিআর কর ব্যবস্থার বেশকিছু অটোমেশনের প্রকল্প নেয়, এরমধ্যে বিট্যাক্স মডিউল; অটোমেটেড ভ্যাট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সিস্টেম (আইভ্যাস), এবং জাতীয় একক উইন্ডো উল্লেখযোগ্য। কিন্তু শেষপর্যন্ত এসব প্রকল্পের কোনোটিই সাফল্যের মুখ দেখেনি।
[৯] বর্তমানে বেশকিছু ভ্যাট, ট্যাক্স ও কাস্টমস সংক্রান্ত কাজ ম্যানুয়াল প্রক্রিয়ায় করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা এনিয়ে এনবিআরের কাছে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন, সরকারের অন্যান্য সংস্থাও যথাযথ অটোমেশন বাস্তবায়নে ব্যর্থ হচ্ছে।
[১০] ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ হতে চলেছে, ফলে আমরা আগের মতো সহজে ও কম খরচের বিদেশি অর্থায়ন পাব না। আমাদের অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ বাড়াতে হবে। এজন্য ন্যায্য ও টেকসই ডিজিটাইলাজেশনের মাধ্যমে এনবিআর-কে তার প্রশাসনিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
[১১] কর ন্যায্যতা নিশ্চিত করার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, কেউ যখন কর ফাঁকি দিয়ে দেশ থেকে অর্থপাচার করার পরেও কর সুবিধা পায়, তখন প্রকৃত করদাতারা নিরুৎসাহিত হয়।
[১২] এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেলা মো. রাহমাতুল বলেন, আমরা কারণগুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছি। জানতে পেরেছি এখানে স্থানীয় সম্পৃক্ততা না থাকাটা একটা বড় সমস্যা ছিল। কারণ বেশিরভাগ প্রকল্পই বাস্তবায়ন করেছে বিদেশি সত্ত্বাগুলো। এখন আমরা নিজস্ব বিশেষজ্ঞ দিয়ে অটোমেশন প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন করছি।
[১৩] তিনি বলেন, প্রতিবছর বাজেটে এনবিআর-কে আরো বেশি রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়, কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আদায়ের বাস্তবতা আছে কিনা Ñসেটা দেখা হয় না। সম্পূর্ণ অটোমেশন ছাড়া প্রকৃত ভ্যাট ও ট্যাক্স আদায় করা সম্ভব নয়।