![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/themes/amader-orthoneeti/img/sky.jpg)
তদারকির অভাবে সুন্দরবন পুড়ে ছাই হচ্ছে : বাপা
![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/uploads/2024/05/1721f0cd8491365cd28aa789a1e9fb4b-400x224.jpg)
নিজস্ব প্রতিবেদক : [১] গত ২২ বছরে সংরক্ষিত ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে ৩২ বার আগুন লেগে পুড়ে ছাই হয়েছে শতাধিক একর বনভূমি। কঠোর মনিটরিংয়ের অভাবে সুন্দরবনে একের পর এক আগুনে বন পুড়ে ছাই হচ্ছে। সর্বশেষ গত শনিবার সকাল ১১টায় পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের আমুরবুনিয়া টহল ফাঁড়ির লতিফের ছিলা এলাকায় আগুন লেগে বন বিভাগের হিসেবেই পুড়ে যায় ৭ দশমিক ৯ একর বনভূমি। বারবার বনে আগুন লাগছে কিন্তু আমরা নেভাতে সক্ষম হচ্ছি না। সুন্দরবন রক্ষায় আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে।
[২] গতকাল বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি হলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) আয়োজিত বারংবার আগুন সন্ত্রাসের কবলে সুন্দরবন কারণ ও প্রতিকার শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে এসব তথ্য জানান খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিন বিভাগের অধ্যাপক ও বাপার জাতীয় কমিটির সদস্য ড. আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী।
[৩] ড. আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, সুন্দরবন পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। পদ্মা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীত্রয়ের মোহনায় বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে এই বিস্তীর্ণ বন। দেশে সংরক্ষিত বনের শতকরা ৫১ ভাগই সুন্দরবন। বাংলাদেশের দক্ষিণের ৩টি জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলায় সুন্দরবন অবস্থিত। এছাড়া বৈজ্ঞানিক, নৃতত্ত্ব ও প্রত্নতাত্ত্বিক বিবেচনায় সুন্দরবন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য ও বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত। [৪] তিনি বলেন, সুন্দরবন বাংলাদেশের ঐতিহ্য এবং বাংলাদেশকে বিশ্ব বাজারে পরিচিতিও দিয়েছে। সুন্দরী, গেওয়া, গরান, গোলপাতা, কেওড়া, বাইন, গরান, খলসি ইত্যাদি বনবৃক্ষ সুন্দরবনের সৌন্দর্য ধরে রেখেছে। এ বনের প্রধান বৃক্ষ সুন্দরী, যা ৫১.৭০ শতাংশ এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। সুন্দরবনের ঐতিহ্য ধরে রাখতে গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ,যেমন- শন, নলখাগড়া এবং গোলপাতার অবদান অন্যতম। কিন্তু আমরা সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে পারছি না। আমরা নিজ হাতেই বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ঐতিহ্য ধ্বংস করছি। নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন থেকে শুরু করে বাঘ নিধন এবং হরিণ শিকার করে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করছি আইন অমান্য করে। বারবার সুন্দরবনে আগুন লাগছে নেভাতে সক্ষম হচ্ছি না।
[৫] তিনি বলেন, গত ২২ বছরে সংরক্ষিত এই ম্যানগ্রোভ বনে ৩২ বার আগুন লেগে পুড়ে ছাই হয়েছে শতাধিক একর বনভূমি। কঠোর মনিটরিংয়ের অভাবে সুন্দর বনে একের পর এক আগুনে বন পুড়ে ছাই হচ্ছে। সর্বশেষ গত শনিবার সকাল ১১টায় পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের আমুরবুনিয়া টহল ফাঁড়ির লতিফের ছিলা এলাকায় আগুন লেগে বন বিভাগের হিসেবেই পুড়ে যায় ৭ দশমিক ৯ একর বনভূমি। ৪৭ ঘণ্টা পর সোমবার দুপুর সাড়ে ১০টায় আগুন শতভাগ নিয়ন্ত্রণে আসে। প্রাণীকূলের আবাস ও প্রজননস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বন্যপ্রাণীরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। বনের প্রাণ-প্রকৃতির শৃঙ্খলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রভাব পড়ে বনের প্রাণীকূলের খাদ্যচক্রে। চরম আঘাত আসে সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্রের উপরে। তাই সুন্দরবন রক্ষায় আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে। এসময় সুন্দরবনের অগ্নিকাণ্ডে বন্ধে ১৫টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
[৬] বাপার কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক মো. নূর আলম শেখ বলেন, সুন্দরবনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা মানবসৃষ্ট এবং পরিকল্পিত। বারবার সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ডের ফলে সামগ্রিকভাবে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। বড়গাছসহ লতাগুল্ম মারা যাচ্ছে। প্রাণীকূলের আবাসস্থল ও প্রজননসস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে বনের শৃঙ্খলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রভাব পড়ে প্রাণীকূলের খাদ্যচক্রে। আঘাত আসে বাস্তুতন্ত্রে। অগ্নিকাণ্ডে বন্যপ্রাণীরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। অগ্নিকাণ্ডের এই ঘটনায় বনবিভাগ কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারে না।
[৭] বাপার যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার বা বাংলাদেশের ফুসফুস খ্যাত সুন্দরবন আজকে ধ্বংসের মুখে। বারবার বনে আগুন লাগছে। এর থেকে সুন্দরবনকে ঠিক রাখতে আমাদের সঠিক কারণ নির্ধারণ করতে হবে। সুন্দরবনকে বিজ্ঞানীদের জন্য সহজ করতে হবে আর দুষ্কৃতকারীদের জন্য দুর্গম করতে হবে।
[৮] এসময় অন্যান্য বক্তারা বলেন, একটা মুনাফালোভী চক্র সুন্দরবনকে ধ্বংস করার কাজে লিপ্ত হয়েছে। মৌয়ালরা ধূমপান করে সিগারেট ফেলে আগুন লাগায় এই কথাটা সত্য না। যে অগ্নিকাণ্ড ঘটছে তা কমানোর জন্য আমাদের সবার মধ্যে দেশপ্রেম তৈরি করতে হবে।
[৯] বারবার একই জায়গায় আগুন কেন লাগছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বলা হয়, যেখানে আগুন লাগে সেখানে মিঠা পানির ফ্লো আসে এবং জায়গাটা উঁচু। তাই সেখানে পানি আসে না। তাই জায়গাটা শুকনো থাকে। সেখানে শুকনো পাতা থাকে, বিভিন্ন গ্যাসের কারণে সেখানে আগুন লাগতে পারে। এটা হচ্ছে প্রাকৃতিক কারণ। এছাড়া মানবসৃষ্ট কারণ তো আছেই।
[১০] সুন্দরবনে দাবানল লাগার সম্ভাবনা আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বলে, শুরুর দিকে বন বিভাগ থেকে এরকম স্টেটমেন্ট দেওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে এখন তারা সরে এসেছে। যেসব বনে দাবানল লাগে সেগুলো খুব ড্রাই ফরেস্ট থাকে। সুন্দরবনে লবণাক্ততা ও পানি থাকে তাই জলীয়বাষ্প বেশি থাকে। একারণে এখানে দাবানল লাগার সম্ভাবনা নেই।
[১১] এসময় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাপার সহ-সভাপতি মহিদুল হক, কোষাধ্যক্ষ জাকির হোসেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল কাদেরসহ অনেকে।
![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/themes/amader-orthoneeti/img/sky.jpg)