
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাব নিত্যপণ্যের বাজারে সপ্তাহ ব্যবধানে আরও বেড়েছে সবজি আলু পেঁয়াজ, কাচা মরিচও ডিমের দাম

মাসুদ মিয়া: [১] নিত্যপণ্যের দামে লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। এবার ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবকেই কারণ হিসেবে বলছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। বিশেষত, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়েছে শাক-সবজির বাজারে। বিক্রেতারা বলছেন, ঘূর্ণিঝড়ে কৃষকের সবজি ক্ষেতের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এতে বাজারে সরবরাহ কমেছে। এ কারণে দামও বাড়তি। তবে তাদের এ ধরনের ব্যাখ্যাকে অজুহাত বলছেন ক্রেতারা। [২] গত সপ্তাহের ব্যবধানে আরও বেড়েছে শাক-সবজি, আলু, পেঁয়াজ কাচামরিচ, ডিম আদা-রসুনসহ আরও বেশ কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। তবে চাল, ডাল ও আটা-ময়দার দাম আগের মতোই স্থিতিশীল। মাছ-মাংসের দামও অপরিবর্তিত রয়েছে। [৩] এদিকে দ্রব্যমূল্য নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। নিত্যপণ্যের বাজার সকালে এক রকম- বিকেলে আরেক রকম পরের দিন আরেক রকম। যেসব পণ্যের দাম বাড়ার কথা নয়, সেইসব পণ্যেরও দাম বাড়ছে যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ ছাড়াই। [৪] গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে। খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব ও হিমাগারে মূল্যবৃদ্ধির কারণে আলুর দাম বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সরবরাহ কমে যাওয়ায় কাঁচা মরিচসহ অন্যান্য সবজির দাম বাড়তি। মতিঝিল বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকায়। যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছরের মাঝামাঝি থেকে বাড়তে শুরু করে আলুর দাম। আমদানির আলু আসার পর দাম কিছুটা কমে। তবে চলতি মৌসুমে আলুর দাম তেমন কমেনি।
[৫] এবিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলেন, হিমাগারের গেটে পাইকারিতে প্রতি কেজি আলু কিনতে হচ্ছে ৪২ টাকায়। এরপর পরিবহন ও লেবার খরচ আছে। ৫৫ টাকার কমে আলু বিক্রি করলে লাভ থাকে না। এদিকে, সরবরাহ ঘাটতির অজুহাতে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৪০ টাকায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত এক মাস ধরে কাঁচা মরিচের বাজার চড়া। [৬] কোরবানির ঈদ সামনে রেখে এবং ফলন তুলনামূলক কম হওয়ায় চলতি মাসে পণ্যটির দাম দ্বিগুণ হয়েছে। অথচ দুই সপ্তাহ আগেই কাঁচা মরিচের কেজি ছিল ১০০ টাকা। যা গত সপ্তাহে দ্বিগুনের বেশি হয়ে ২৪০ টাকায় উঠে।
[৭] দীর্ঘদিন ধরেই চড়া ডিমের বাজার। সপ্তাহের ব্যবধানে ডজনপ্রতি ডিমের দাম বেড়েছে ৫ টাকা। বাজারে এখন প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকায়। হালি হিসেবে কিনতে গেলে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকা। কোথাওবা ৬০ টাকাও রাখা হচ্ছে। এছাড়া সাদা রঙের প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৪৫ টাকায়। বাজারের তুলনায় অলিগলির দোকানে দাম আরও কিছুটা বেশি। এসব দোকানে ডিমের ডজন এখন ১৬০ টাকায় ঠেকেছে। তবে স্থিতিশীল রয়েছে মাংসের বাজার। [৮] রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রতি কেজি ব্রয়লার ২১০-২২০ টাকা এবং সোনালি জাতের মুরগি ৩৬০-৩৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০-৮০০ টাকা আর খাসি মাস ১১৫০-১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। বাজারে এখন মানভেদে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। প্রতি কেজি দেশি রসুন ২০০-২২০ টাকা এবং আমদানি করা চায়না রসুন ২২০- ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত দুই সপ্তাহে আদার দাম কেজিতে বেড়েছে ২০-৩০ টাকা। মানভেদে প্রতি কেজি দেশি বা বিদেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকায়।
[৯] গত সপ্তাহে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া টমেটো সপ্তাহের ব্যবধানে ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মাঝারি আকারে লাউয়ের দাম প্রতি পিসে ১০-২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। বাজারে এসেছে নতুন কচুরমুখি। এ পণ্যটি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি বেগুন ৬০-৮০ টাকায়, পেঁপে ও শসা ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁপে ও শসার দাম সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা। [১০] মতিঝিল কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতারা বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সবজি খেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বাজারে সবজির ঘাটতিও রয়েছে। এ কারণে দাম একটু বেশি। এছাড়া পটোল, ঢ্যাঁড়স, চিচিঙ্গা, ঝিঙে ও করলা আগের মতোই ৫০ টাকা বা এর আশপাশের দামে কিনতে পারছেন ভোক্তারা।
[১১] অপরিবর্তিত রয়েছে মাছের দাম। প্রতি কেজি পাঙাস বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৩০ টাকায় ঠেকেছে। অন্যদিকে তেলাপিয়া মাছের কেজি ২০০-২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬০০-১২০০ টাকায়। অন্য মাছের মধ্যে মাঝারি ও বড় আকারের রুইয়ের দাম প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকা
[১২] এবিষয়ে বেসরকারী কোম্পানির এক কর্মকর্তা হাবিব বলেন, অধিকাংশ পণ্যের দাম সিন্ডিকেট করে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এবার ঘূর্ণিঝড় রেমালের দুহাই দিয়ে অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দাম সিন্ডিকেট করে বাড়িয়ে দিয়েছে।
