
পুঞ্জিভূত ঋণ ১৬ লাখ ৫৯ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা এক বছরে সরকারের ঋণ ৩ লাখ কোটি টাকা বেড়েছে

সোহেল রহমান : [১] আন্তর্জাতিক মানদন্ডের হিসাবে পরিস্থিতি ঝুঁকিপূর্ণ না হলেও ক্রমশ বেড়েই চলেছে সরকারের ঋণ। গত ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে সরকারের মোট (অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক) পুঞ্জিভূত ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৫৯ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। এটি জিডিপি’র ৩৩ দশমিক ০৪ শতাংশ। [২] এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে সরকারের মোট পুঞ্জিভূত ঋণস্থিতি ছিল ১৩ লাখ ৫৯ হাজার ৮৯৮ কোটি টাকা (জিডিপি’র ৩০ দশমিক ৫৬ শতাংশ)। [৩] সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে সরকারের প্রকৃত ঋণ বেড়েছে ২ লাখ ৯৯ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা। জিডিপি’র হিসাবে সরকারের পুঞ্জিভূত ঋণ বেড়েছে প্রায় আড়াই শতাংশ।
[৪] সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সরকারের পুঞ্জিভূত ঋণস্থিতির সর্বশেষ এ হিসাব চূড়ান্ত করেছে।
[৫] অর্থ বিভাগ-এর হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুন শেষে সরকারের মোট পুঞ্জিভূত ঋণস্থিতির পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ ১৭ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর ২০২৩) সরকারের প্রকৃত ঋণ বেড়েছে ৪২ হাজার ২১ কোটি টাকা।
[৬] অর্থ বিভাগ সূত্র মতে, করোনা-উত্তর পরিস্থিতি মোকাবেলা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধজনিত কারণে সরকারের ব্যয় বাড়ার কারণে সার্বিক ঋণ স্থিতি বেড়েছে। তবে এটি এখনো ঝুঁকিসীমার অনেক নীচে রয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর ‘টেকসই ঋণ কাঠামো’ (ডেট সাসটেইনেবল ফ্রেমওয়ার্ক-ডিএসএফ)-এর মানদন্ড অনুযায়ী, জিডিপি’র ৫৫ শতাংশ ঋণকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
[৭] অর্থ বিভাগ বলছে, এর বাইরে সরকার প্রদত্ত কিছু আর্থিক গ্যারান্টি বা দায় রয়েছে। গত ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে সরকারের মোট আর্থিক গ্যারান্টির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ ২ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক উৎসের গ্যারান্টির পরিমাণ ৬৭ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎসের গ্যারান্টির পরিমাণ ৩৪ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা।
[৮] অর্থ বিভাগ-এর হিসাব মতে, সরকারের মোট পুঞ্জিভূত ঋণের মধ্যে ৫৭ শতাংশ হচ্ছে অভ্যন্তরীণ উৎসের এবং ৪৩ শতাংশ হচ্ছে বৈদেশিক ঋণ।
[৯] গত ডিসেম্বর শেষে মোট পুঞ্জিভূত ঋণের মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৫৩ হাজার ৮১৪ কোটি টাকা (জিডিপি’র ১৯%)। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে পুঞ্জিভূত অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ৬৪ হাজার ১০৫ কোটি টাকা (জিডিপি’র ১৯.৪২%)।
[১০] অন্যদিকে পুঞ্জিভূত বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ হচ্ছে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭ লাখ ৫ হাজার ৫২০ কোটি টাকা (জিডিপি’র ১৪.০৪%)। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে পুঞ্জিভূত বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা (জিডিপি’র ১১.১৪%)।
[১১] পর্যালোচনায় দেখা যায়, মোট পুঞ্জিভূত অভ্যন্তরীণ ঋণের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের গৃহীত ঋণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। অন্যদিকে সঞ্চয়পত্র খাতে সরকারের পুঞ্জিভূত ঋণের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে অনেক কম। সঞ্চয়পত্র খাতে সংস্কারের ফলে বাজেট ঘাটতি পূরণে এ খাত থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে আরও কমে আসবে বলে মনে করছে অর্থ বিভাগ।
[১২] অর্থ বিভাগ-এর হিসাব অনুযায়ী, পুঞ্জিভূত মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৫ লাখ ২৫ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা (এর মধ্যে ট্রেজারি বিল থেকে ১,২৮,৭৪১ কোটি টাকা, ট্রেজারি বন্ড ও এসপিটিবি থেকে ৩,৭৮,৭০৬ কোটি টাকা ও সুকুক থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা); সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ৩ লাখ ৫৯ হাজার ১৭০ কোটি টাকা এবং জিপিএফ তহবিল থেকে ৬৯ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার।
[১৩] অন্যদিকে সরকারের পুঞ্জিভূত বৈদেশিক ঋণস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, দ্বি-পাক্ষিক উৎসের তুলনায় বহুপাক্ষিক উৎস থেতে গৃহীত ঋণের পরিমাণ অনেক বেশি। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৫৬ কোটি টাকা, এটি এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে তুলনায় ১৬৭ শতাংশ বেশি।্ গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা।
