ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ৮ জুন শপথ নিতে যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি
বিশ্বজিৎ দত্ত : [১] গতকাল সাকালে নরেন্দ্র মোদি বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষ্যে একটি বট গাছ লাগিয়েছেন।
[২] এরপরপরই ভারতের প্রেসিডেন্ট দ্রোপদী মূর্মূর কাছে নিয়ম অনুযায়ি ইস্তফা দিয়েছেন।
[৩] নরেন্দ্র মোদি সদ্য সমাপ্ত নির্বাচন সম্পর্কে এক্স হ্যান্ডেলে নিজের অভিব্যাক্তি ব্যাক্ত করে লিখেছেন, টানা তৃতীয়বার ভারতের জনগণ এনডিএ জোটের প্রতি আস্থা রেখেছে। জনতা জনার্দন। আমি তাদের প্রতি আশ্বস্ত করতে চাই। জনতার আস্থা অর্জনে আমাদের অসমাপ্ত কাজগুলো চালিয়ে যাবো। আমি আমার কর্মিদের অভিন্দন জানাই।
[৪] সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি এককভাবে ২৪০ আসন পেয়েছে। সরকার গঠনের জন্য দরকার ২৭২ আসন। [৫] বিজেপি এককভাবে সরকার গঠন করতে পারবে না। সরকার গঠনের জন্য জোটের ওপর নির্ভর করতে হবে।
[৬] বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট মোট ২৯৩ আসন পেয়েছে। অন্যদিকে, বিরোধী কংগ্রেস পেয়েছে ৯৯ আসন। কংগ্রেসের ইন্ডিয়া জোট পেয়েছে ২৩৩ আসন।
[৭] এই হিসাবে নরেন্দ্র মোদি আবারো ভারতের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন।
[৮] ইতিমধ্যে রাশিয়া, ইতালি, ভ’টান,মালদ্বীপের রাষ্ট্রপ্রধানরা মোদীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
[৯] তবে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইনন্ডিয়া জোট সমস্ত বিরোধী দলকে একত্র করতে পারলে তাদেরও সরকার গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে।
[১০] ১৯৯০ এর দশকে এরকমভাবে ভারতে সরকার গঠন হয়েছিল। কিন্তু একবছরের মধ্যে ৪টি সরকারের পতন হয়েছিল। এই চারটি সরকার হলো, ভিপিসংয়ের সরকার, চন্দ্র শেখর, দেবগৌড়া ও ইন্দর কুমার গুজরালের সরকার।
[১১] ১৯৯৮ সালে তৈরি হয় এনডিএ। কংগ্রেস এবং তার সহযোগী দলগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য তৎকালীন বিজেপি নেতৃত্ব ঠিক করেন জোটবদ্ধ হয়ে লড়বেন।
[১২] এই জোটে বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকলেও অন্য ছোট-বড় রাজনৈতিক দলগুলির গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। বিশেষত, আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলি এনডিএতে বড় ভূমিকা নেয়।
[১৩] এনডিএ’র প্রথম সভাপতি বাজপেয়ীই। তার নেতৃত্বে ১৯৯৯ সালে সরকারে আসে এনডিএ। ২০০৪ সাল পর্যন্ত তিনিই এনডিএ-র চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সেই দায়িত্ব সামলেছেন লালকৃষ্ণ আডবাণী।
[১৪] ২০১৪ থেকে এনডিএ-র সভাপতি অমিত শাহ। তবে জোটের নেতা মোদী। তাকে সামনে রেখেই ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটে জিতে আবারও ক্ষমতায় আসে এনডিএ। এই জোট সে বার ৩৮.৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিল।
[১৫] ২০১৯ সালে এনডিএ-র ভোট শতাংশের হার বৃদ্ধি পায়। ৩৮.৫ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫.৪৩ শতাংশে। সে বার ৩৫৩ আসন পেয়েছিল এনডিএ। বিজেপি একাই ৩০০ আসনের গণ্ডি পার করে ফেলেছিল।
[১৬] তবে ২০২৪ সালে আসনসংখ্যা অনেকটাই কমেছে বিজেপি এবং এনডিএ-র। যে কারণে সরকার গড়ার ব্যাপারে জোটের অন্দরেই শুরু হয়েছে পাটিগণিতের হিসাব।
[১৭] নতুন সরকার গড়ার জন্য বিজেপির এখন একটাই কাজ। তা হল, এনডিএর শরিকদের জোটবদ্ধ রাখা। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সরকার গড়ার ‘ম্যাজিক ফিগার’ থেকে ২০-২২টি আসন বেশি পেয়েছে এনডিএ।
[১৮] এনডিএ শরিক দল হিসাবে বিজেপি এ বারের নির্বাচনে ২৪০টি আসন পেয়েছে। তার পরই রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশের চন্দ্রবাবু নায়ডুর দল তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি)। তাদের ঝুলিতে রয়েছে ১৩টি আসন। বিহারের নীতীশ কুমারের দল জেডিইউ জিতেছে ১২টি আসন।
[১৯] এ ছাড়াও লোক জনশক্তি পার্টি (রামবিলাস) পেয়েছে পাঁচটি আসন। একনাথ শিন্ডের শিবসেনা পেয়েছে ৭টি আসন। জোটের বাকি ছোট ছোট আঞ্চলিক দলগুলি একটা-দুটো করে আসন পেয়েছে। সব মিলিয়ে ২৯২ আসন পেয়েছে এনডিএ।
[২০] এনডিএ-র বাকি ১০টি দল বাকি ১৬টা আসন পেয়েছে। তাদের মধ্যে জেডিএস, আরএলডি, জেএনপি পেয়েছে ২টি করে আসন। বাকিরা একটি করে আসনে জয় পেয়েছে।
[২১] এনডিএ’র অন্যতম প্রধান দুই দল টিডিপি এবং জেডিইউ এখন আলোচনার কেন্দ্রে। এ বারে বিহারে নীতীশ এবং অন্ধ্রপ্রদেশে চন্দ্রবাবুকে পাশে না পেলে টানা তৃতীয় বার মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদে দেখার বিজেপির স্বপ্ন কঠিন হয়ে যাবে।
[২২]আবার জেডিইউ-এর জোটে থাকা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কারণ নীতীশের জোটবদলের ইতিহাস রয়েছে। কখনও বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন, আবার কখনও হাত ছেড়েছেন।
[২৩] ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় এনডিএতে থাকলেও ২০১৯-এর লোকসভায় এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন নীতীশ।
[২৪] টিডিপি এবং জেডিইউ-এর সমর্থন না পেলে এনডিএ ‘জাদুসংখ্যা’ ছোঁয়ার আগেই থেমে যাবে। তাই এখন জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন চন্দ্রবাবু এবং নীতীশ।
[২৫]অন্ধ্রের ভাবী মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবুর সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে মোদী-শাহের। কেন্দ্রে সরকার গড়ার প্রশ্নেও আলোচনা হয়েছে বলেও খবর। সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, চন্দ্রবাবু কিছু শর্ত দিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্বকে। তবে এ-ও জানিয়েছেন যে তিনি এনডিএতেই থাকছেন।
[২৬]সেই শর্তের মধ্যে যেমন আছে অন্ধ্রপ্রদেশের জন্য বিশেষ প্যাকেজ, তেমনই রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারে তাঁর দলের গুরুত্ব বৃদ্ধির প্রশ্ন। কিছু মন্ত্রক নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে খবর।
[২৭]অন্য দিকে, সরকার গড়ার ব্যাপারে নীতীশের সঙ্গেও একপ্রস্ত আলোচনা সেরে রেখেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। দলের একটি অংশের দাবি, প্রয়োজনে নীতীশকে উপপ্রধানমন্ত্রী করার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে।
[২৮]গতকাল বুধবার সকালেই বিহার থেকে দিল্লি পাড়ি দিয়েছেন আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব। সেই একই বিমানে ছিলেন নীতীশও। বিমানে তাঁদের আসন ছিল একেবারে পর পর। তার পর থেকেই জাতীয় রাজনীতিতে নীতীশকে নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
দু’জনই আলাদা আলাদা বৈঠকে যোগ দিতে দিল্লিতে গিয়েছেন। তবে, তার পরেও নীতীশের জোটবদলের সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না অনেকেই।