মোবাইলে লেনদেন কুরিয়ারে জাল নোট যাচ্ছে মফস্বলের গরুর হাটে
নিজস্ব প্রতিবেদক : [১] কোরবানির ঈদ আসন্ন। ঈদকে ঘিরে অন্যান্য বছরের মতো সক্রিয় জাল টাকার কারবারিরা। সুযোগ কাজে লাগাতে রাজধানীর কদমতলীতে তৈরি করা হচ্ছিল জাল টাকা। সুনির্দিষ্ট তথ্য ও গোয়েন্দা নজরদারির ভিত্তিতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার কদমতলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে দেশি-বিদেশি জাল নোট তৈরি চক্রের প্রধান জাকিরসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ডিবি লালবাগ বিভাগের একটি দল গতকাল শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দুটি বাসায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করে। [২] গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা হলেন, চক্রের প্রধান লিয়াকত হোসেন জাকির ওরফে মাজার জাকির ওরফে গুরু জাকির (৪০), তার দ্বিতীয় স্ত্রী মমতাজ বেগম (২৫), লিমা আক্তার রিনা (৪০) ও সাজেদা আক্তার (২৮)। [৩] ডিবি পুলিশ বলছে, ঈদুল গতকাল শনিবার হাটকে টার্গেট করে চক্রটি বিপুল পরিমাণ জাল নোট বাজারে ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ঢাকায় তৈরি এই জাল নোট বিক্রির জন্য যোগাযোগ হতো অনলাইনে আর লেনদেন হতো মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। লেনদেনের পর কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠানো হয় জাল নোট। যার বেশিরভাগ এবার যাচ্ছে মফস্বলে। টার্গেট কোরবানির পশুর হাট।
[৪] অভিযান সম্পর্কে ডিবি লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. মশিউর রহমান বলেন, অভিযানে দুটি বাসা থেকে প্রায় সোয়া এক কোটি টাকা এবং আরও প্রায় তিন কোটি জাল টাকা তৈরির মতো বিশেষ কাপড়/কাগজ, বিশেষ ধরনের কালি, ল্যাপটপ, চারটি প্রিন্টার, বিভিন্ন সাইজের কয়েক ডজন স্ক্রিন/ডাইস, সাদা কাগজ, হিটার মেশিন, নিরাপত্তা সুতাসহ জাল টাকার হরেক রকম মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে। ২০০, ৫০০, এক হাজার টাকার জাল নোট ও ভারতীয় ৫০০ রুপির বিপুল পরিমাণ জাল নোট উদ্ধার করা হয়।
[৫] তিনি বলেন, ২৫ বছর ধরে জাল টাকার খুচরা ও পাইকারি কারবার করার পাশাপাশি বিভিন্ন মানের জাল টাকা ও জাল রুপি তৈরির অত্যন্ত দক্ষ লিয়াকত হোসেন জাকির। তিনি ২০১২ সাল থেকে ৫০০ ও এক হাজার টাকার জাল নোট তৈরি করলেও বর্তমানে সাধারণ মানুষ যেন সন্দেহ করতে না পারেন সেজন্য বড় নোটের পাশাপাশি ১০০ ও ২০০ টাকার জাল নোট তৈরি করতেন। [৬] বর্তমানে কাগজ, ল্যাপটপ, কম্পিউটারের কালি ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় জাকির এক হাজার টাকার ১০০টি নোটের বান্ডেল ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করতেন।
[৭] জাল টাকার কারবার সম্পর্কে কারো কাছে কোনো তথ্য থাকলে ডিবি পুলিশকে জানানোর অনুরোধ জানিয়ে হারুন বলেন, ঢাকায় যারা জাল টাকার কারবার করেন তারা অধিকাংশই এখন ঢাকার বাইরে থাকেন। ঈদের সময় আর ঈদের আগে আগে ঢাকায় এসে কারবার শুরু করেন। তাই নজরদারিতে সব জাল টাকা কারবারিটা ধরা পড়ে না। সেজন্য যারাই জাল টাকার কারবার করেন ডিবি পুলিশকে জানান। আমরা অভিযান পরিচালনা করব।
[৮] এই জাল টাকার কারবারের শেষ কোথায়? যারাই কারবার করছেন গ্রেপ্তার হচ্ছেন আবার জামিনে বেরিয়ে একই কারবারে জড়িয়ে পড়ছেন। এমন প্রশ্নের জবাবে হারুন বলেন, শুধু জাল টাকা না, ডাকাতি ছিনতাইসহ নানা আসামিকে আমরা গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জেলহাজত থেকে তারা কীভাবে জামিনে বেরিয়ে যায় তা আমাদের পক্ষে বলা সম্ভব নয়। নতুন করে জাল টাকার কারবারে জড়িয়ে যাওয়া কয়েকজনকে আরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তারা বলেছে, জেল থাকা অবস্থায় জাল টাকার কারবারির সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। তাদের এজেন্ট বানানো হয়। লাখ টাকার জাল নোট বিক্রি করতে পারলে ১০ থেকে ১৮ হাজার করে দেয়া হয়। লোভে পড়ে চক্রের মাধ্যমে জড়িয়েছে জাল টাকার কারবারে।
[৯] সমাধান সম্পর্কে তিনি বলেন, এই ব্যবসা তো অবৈধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সামনে কোরবানির ঈদ। আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। [১০] পাশাপাশি আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার। তবেই আমরা কিন্তু জাল টাকার কারবার নিয়ন্ত্রণে বা কিছুটা হলেও রেহাই পাব।