![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/themes/amader-orthoneeti/img/sky.jpg)
দেশে এত মন্ত্রণালয় থাকার দরকার নেই -আহসান এইচ মনসুর
![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/uploads/2024/06/4-20230602225702-400x210.jpg)
মাসুদ মিয়া: বাজেটের ব্যয় খাত সংকুচিত করা হয়েছে, কিন্তু ব্যয় কমানো হয়নি বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। অর্থনীতির বিদ্যমান বাস্তবতায় ব্যয় সাশ্রয় করা দরকার বলে তিনি মনে করেন। ব্যয় সাশ্রয়ের বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন আহসান মনসুর। তাঁর প্রশ্ন, ‘আমাদের বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দরকার আছে কি? আমার তা মনে হয় না। সরকার যদি একটু নির্মোহভাবে চিন্তা করে, দেশে এত মন্ত্রণালয় থাকার দরকার নেই। যুক্তরাষ্ট্রে ১১টি মন্ত্রণালয়, অথচ আমাদের এখানে ৫০ থেকে ৬০টি। নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব) ও সম্পাদক পরিষদ আয়োজিত ‘অর্থনীতির চালচিত্র ও বাজেট ২০২৪-২৫’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এইচ মনসুর এ কথা বলেন। গতকাল সোমবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘সুদহারের নয়ছয়ের (ঋণের সুদ ৯ শতাংশ ও আমানতের সুদ ৬ শতাংশ) বেড়াজাল নীতি দিয়ে আর্থিক ব্যবস্থাপনা, বিশেষ করে ব্যাংক খাতের দুর্বলতা আমরা নিজেরাই সৃষ্টি করেছি। সমস্যা এক দিনে তৈরি হয়নি, তাই সমাধানও এক দিনে হবে না।আহসান মনসুর বলেন, মূল্যস্ফীতি কমানো মুদ্রানীতি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বিষয়। মূল্যস্ফীতি কমানো বাজেটের বিষয় নয়, যদিও বাজেট সেখানে সহযোগী ভূমিকা পালন করতে পারে। গত বছরের তুলনায় এ বাজেট সংকোচনমুখী হয়েছে; এখন সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি কার্যকর হলে মূল্যস্ফীতি কমবে। সম্প্রতি সুদের হার বাজারভিত্তিক করা হয়েছে এবং এটাই যদি দেড়-দুই বছর আগে করা হতো, তাহলে মূল্যস্ফীতির চাপ এখন কম থাকত বলে মনে করেন আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, সুদের হার দেরিতে বাজারভিত্তিক করার কারণে মূল্যস্ফীতির চাপও কমবে দেরিতে।
সুদের হার বৃদ্ধি নিয়ে সভায় উপস্থিত সংসদ সদস্য ও হা-মীম গ্রুপের কর্ণধার এ কে আজাদকে উদ্দেশ্য করে আহসান মনসুর বলেন, ‘আজাদ ভাইদের জন্য এটা সুখবর নয়। তবে বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে এটা গ্রহণ করতে হবে।’
মুদ্রা বিনিময় হার বর্তমানে যেখানে আছে, ‘খুব সম্ভবত আগামী কয়েক মাস সেখানেই থাকবে। সেটা যদি থাকে এবং সুদের হার যেভাবে বাজারভিত্তিক করা হয়েছে, তা যদি থাকে অর্থাৎ কোনো হস্তক্ষেপ যদি না করা হয়, তাহলে অন্য দেশে মূল্যস্ফীতি কমার যে চিত্র দেখা গেছে, আমাদের দেশেও তাই দেখা যাবে।’
আহসান মনসুরের মতে, তারপরও জিনিসপত্রের দাম কমবে না, তবে মূল্যবৃদ্ধির হার কমবে। তিনি আরও বলেন, ‘সরকার যদি বুঝে কাজ করে, তাহলে আগামী জানুয়ারি মাসের দিকে আমরা তা আশা করতে পারি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, মূল্যস্ফীতি ১০ থেকে কমিয়ে ৫ থেকে ৬ বা সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা। এটা খুব কঠিন বিষয় নয়, ৬ থেকে ৯ মাসের মধ্যেই সম্ভব।
বাজেটের অসংগতি
প্রস্তাবিত বাজেটে কিছু অসংগতি আছে বলে মনে করেন আহসান মনসুর। তিনি বলেন, বলা হচ্ছে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বাড়বে। ব্যাংক খাত এত দুর্বল যে আমানতের প্রবৃদ্ধি ভালো নয়। আমানতের প্রবৃদ্ধির মোট পরিমাণ ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার বেশি হবে না। সেখান থেকে সরকারই যদি ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেয়, তাহলে আর কী থাকবে।
আহসান মনসুর ব্যাখ্যা করে বলেন, অর্থনীতিতে ব্যক্তি খাতের আকার ৮৬ শতাংশ; ১৪ শতাংশ সরকারি। আমাদের হিসাবে ব্যক্তি খাত ঋণ পাচ্ছে ২৪ শতাংশ আর ৭৬ শতাংশ ঋণ পাচ্ছে সরকার। বড় অসংগতি এখানেই, এটা হতে পারে না।
বিদ্যুৎ খাতকে সরকার যথেষ্ট সুযোগ দিয়েছে বলে মনে করেন আহসান মনসুর। তাঁর মতে, ‘বিদ্যমান ক্যাপাসিটি চার্জ ও ভর্তুকি বজায় রেখে বেশি দূর এগোনো যাবে না। ভারতের আদানি গ্রুপ হোক বা দেশের সামিট গ্রুপই হোক, আমি মনে করি, এদের সঙ্গে পুনরায় দর-কষাকষি (রিনেগোশিয়েট) করতে হবে। এভাবে ব্যয় সাশ্রয় করা সম্ভব।’
ব্যাংক খাত নিয়ে গুরুত্ব সহকারে ভাবার পরামর্শ দিয়ে আহসান মনসুর বলেন, ব্যাংক খাত থেকে টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। সরকার টাকা পাচ্ছে না, ব্যবসায়ীরাও পাচ্ছেন না। কেন পাচ্ছে না? এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী কারা? আহসান মনসুর বলেন, ব্যাংক একীভূতকরণের চেষ্টা দেখা গেলেও রাজনৈতিক অর্থনীতির চাপে তা মুখ থুবড়ে পড়ে গেল। আহসান মনসুর বলেন, একটি খাতের ব্যর্থতার জন্য সরকারের ঋণের বোঝা এ পর্যায়ে এসেছে। সেটা হলো, রাজস্ব খাত। কর-জিডিপির অনুপাত ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এই রাজস্ব ব্যবস্থা দিয়ে উন্নত হওয়া তো দূরের কথা, উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ায় সম্ভব নয়। রাজস্ব আয় দ্বিগুণ করা সম্ভব। কিন্তু বাজেটে আর্থিক ও রাজস্ব খাতের সংস্কারের কথা শোনা যায়নি। শুধু মন্ত্রণালয়ে গুটি গুটি করলে হবে না; সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, সাবেক অর্থসচিব ও সাবেক কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। স্বাগত বক্তব্য দেন নোয়াবের সভাপতি এ. কে. আজাদ এমপি। সমাপনী বক্তব্য দেন সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহফুজ আনাম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ।
![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/themes/amader-orthoneeti/img/sky.jpg)