
নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আমদানিসহ ক্রয় কমিটিতে ১৪ প্রস্তাব অনুমোদন

সোহেল রহমান : [১] ভারতের জাতীয় গ্রিড ব্যবহার করে নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আমদানি এবং পাঁচ ক্যাটাগরির ১৫ লাখ ৮০ হাজার টন জ্বালানি তেল আমদানিসহ ১৪টি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
[২] মঙ্গলবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত ক্রয় কমিটির সভায় সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
[৩] বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ-এর সমন্বয় ও সংস্কার সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে ভারতের জাতীয় গ্রিড ব্যবহার করে নেপাল-এর রাষ্ট্রীয় সংস্থা নেপাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটি থেকে ৪০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আমদানির একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ৫ বছর মেয়াদে এ বিদ্যুৎ কেনা হবে। এতে ব্যয় হবে প্রায় ৬৫০ কোটি টাকা।
[৪] জানা যায়, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-এর বিদ্যুৎ ক্রয়ের প্রস্তাবে নেপাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটি (এনইএ) এবং ভারতের এনটিপিসি বিদ্যুৎ ভাইপার নিগম লিমিটেড (এনভিভিএন) প্রস্তাব দাখিল করে। বিদ্যুৎ আনার ক্ষেত্রে ভারতের মোজাফফরবাদ সাবস্টেশনে প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের দাম ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৪০ ইউএস সেন্ট। এনভিভিএন ট্রেডেং মার্জিন হবে দশমিক শূন্য ৫৯৫ ভারতীয় রূপি। আর ট্রান্সমিশন চার্জ হবে ভারতের সেন্ট্রাল ইলেক্ট্রিসিটি রেগুলেটরি কমিশন (সিইআরসি)-এর নিয়ম অনুযায়ী। আগামী দুই থেকে আড়াই মাসের মধ্যে নেপালের বিদ্যুৎ বাংলাদেশে চলে আসবে বলে সূত্র জানায়।
[৫] সমন্বয় ও সংস্কার সচিব জানান, বৈঠকে আন্তর্জাতিক দর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চলতি পঞ্জিকা বছরের জুলাই-ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের জন্য পাঁচটি পৃথক প্যাকেজে পাঁচ ক্যাটাগরির মোট ১৫ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১০ লাখ মেট্রিক টন গ্যাস অয়েল, ২ লাখ মেট্রিক টন জেট-এ-১ ফুয়েল, ২ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েল, ১ লাখ মেট্রিক টন মোগ্যাস এবং ৩০ হাজার টন মেরিন ফুয়েল রয়েছে। সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইউনিপেক সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেড এবং ভিটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড এসব তেল সরবরাহ করবে। এতে ব্যয় হবে ১১৭ কোটি ৬৯ লাখ ৭৪ হাজার ৮০০ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৩ হাজার ৮৭৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।
[৬] তিনি জানান, সাধারণভাবে জ্বালানি তেলের প্রকৃত মূল্য নির্ধারণ করা হয় জাহাজীকরণের দুয়েকদিন আগে। সে হিসাবে বৈঠকে জ্বালানি তেলের ক্যাটাগরি ভিত্তিক প্রিমিয়াম ও জাহাজ ভাড়া ব্যয় অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তবে প্রস্তাবিত দর হিসাবে প্রতি ব্যারেল জেটএ-১ ১০.৮৮ ডলার; প্রতি ব্যারেল গ্যাস অয়েল ৮.৮৩ ডলার, ফার্নেস অয়েল ৪৬.৭২ ডলার, মোগ্যাস ৯.৮৮ ডলার এবং মেরিন ফুয়েল ৭৬.৮৮ ডলার উল্লেখ করা হয়েছে।
[৭] সমন্বয় ও সংস্কার সচিব জানান, বৈঠকে রাষ্ট্রীয় চুক্তির আওতায় সার ক্রয়ের পাঁচটি পৃথক প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রতি টন ৩৯৫.২৫ ডলার হিসাবে তিউনিশিয়া থেকে ১ম লটে ২৫ হাজার টন টিএসপি সার আমদানিতে ব্যয় হবে ১১৬ কোটি ৫৪ লাখ ৯৩ হাজার ৪৩৭ টাকা।
[৮] সার আমদানির দ্বিতীয় প্রস্তাবে প্রতি মেট্রিক টন ২৭৫.৫০ ডলার হিসাবে কানাডিয়ান কমার্শিয়াল কর্পোরেশন থেকে দ্বিতীয় লটে ৪০ হাজার মেট্রিক টন মিউরেট-অব পটাশ (এমওপি) সার আমদানিতে ব্যয় হবে ১২৯ কোটি ৯৮ লাখ ৯ হাজার টাকা।
[৯] তৃতীয় প্রস্তাবে প্রতি মেট্রিক টন ৪৭৮ ডলার হিসাবে মরক্কোর ওসিপি থেকে ৫ম লটে ৪০ হাজার মেট্রিক টন ডিএপি সার আমদানিতে ব্যয় হবে ২২৫ কোটি ৫২ লাখ ৪ হাজার টাকা।
[১০] চতুর্থ প্রস্তাবে প্রতি মেট্রিক টন ৩১১.৬৭ ডলার হিসাবে কাতার-এর মুনতাজাত থেকে ১৫তম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার (অপশনাল) ইউরিয়া সার আমদানিতে ব্যয় হবে ১১০ কোটি ২৮ লাখ ৪৪ হাজার টাকা।
[১১] পঞ্চম প্রস্তাবে প্রতি টন ২৯৪.৬২৫ ডলার হিসাবে কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো) থেকে ১৭তম লটে ২৫ হাজার টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানিতে ব্যয় হবে ১০৬ কোটি ২ লাখ ২৩ হাজার ৬২ টাকা।
[১২] সমন্বয় ও সংস্কার সচিব জানান, বৈঠকে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র (জাতীয়) পদ্ধতিতে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর জন্য সয়াবিন তেল ও মসুর ডাল কেনার দুটি পৃথক প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রতি কেজি সয়াবিন তেল ১৫০ টাকা ৯০ পয়সা হিসাবে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে সুপার অয়েল রিফাইনারি লিমিটেড থেকে ২ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন কিনতে ব্যয় হবে ৩৩১ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।
[১৩] অন্যদিকে প্রতি কেজি মসুর ডাল ১০২ টাকা ৫০ পয়সা দরে নাবিল নাবা ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেড থেকে ২০ হাজার টন মসুর ডাল কিনতে ব্যয় হবে ২০৫ কোটি টাকা।
[১৪] সমন্বয় ও সংস্কার সচিব জানান, এছাড়া বৈঠকে ইতোপূর্বে অনুমোদিত পাঁচটি ক্রয় প্রস্তাবের ব্যয় বৃদ্ধির ভেরিয়েশন প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
