আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হবে ৫.৭%: বিশ্বব্যাংক
বিশ্বজিৎ দত্ত : [১] আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের ৫ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক।
[২] ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। যদিও প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস করা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
[৩] সরকার মনে করছে, মধ্যমেয়াদে দেশের প্রবৃদ্ধির হার আরও বাড়বে।
[৪] বিশ্বব্যাংক আরও বলেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসবে। তাদের প্রাথমিক হিসাবে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। [৫] সেই হিসাবে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির গতি কমবে। বিশ্বব্যাংকের গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টস শীর্ষক জুন মাসের প্রতিবেদনে এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
[৬] বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাময়িক হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ।
[৭] বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুসারে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ; ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ১ শতাংশ। [৮] অর্থাৎ তাদের হিসাবে ২০২১-২২ অর্থবছরের পর টানা দুই অর্থবছর বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হচ্ছে ৬ শতাংশের নিচে।
[৯] বিশ্বব্যাংক বলছে, বাংলাদেশে আমদানি নিষেধাজ্ঞা থাকায় শিল্পকলকারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সরকারি কেনাকাটা ও বিনিয়োগের কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড একভাবে চলে যাচ্ছে। কিন্তু উচ্চমূল্যর কারণে মানুষের প্রকৃত মজুরি ও পরিবারের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে।
[১০] এতে ব্যক্তি মানুষকে ভোগের রাশ টানতে হয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় সরকার দফায় দফায় নীতি সুদহার বৃদ্ধি করায় ঋণের সুদহার বেড়েছে। এতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমেছে; টান পড়ছে সমাজের চাহিদায়। [১১] দেশের ব্যাংকিং খাতে যে বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ তৈরি হয়েছে, তা বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরিয়েছে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। [১২] মূল্যস্ফীতির হার কমে এলে ব্যক্তিপর্যায়ের ভোগ কিছুটা স্বাভাবিক হবে বলে মনে করছে তারা। সেই সঙ্গে বড় বড় অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে সামগ্রিকভাবে বিনিয়োগেও গতি আসবে।
[১৩] বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে যেসব বাধা আসতে পারে, বিশ্বব্যাংক সেগুলোও চিহ্ণিত করেছে।
[১৪] তারা বলেছে, বিশ্বায়িত পৃথিবীতে এক দেশের সমস্যা কেবল সেই দেশেই সীমাবদ্ধ থাকে না। অর্থাৎ বাংলাদেশের বাণিজ্য অংশীদার দেশগুলোর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমলে তার নেতিবাচক প্রভাব থেকে বাংলাদেশও মুক্ত থাকবে না।
[১৫] চীন বাংলাদেশের আমদানির মূল উৎস। চীনের অর্থনীতি গতি হারালে মধ্যবর্তী পণ্য ও উপকরণ আমদানিতে প্রভাব পড়বে। আরেক দিকে বাংলাদেশের রপ্তানির মূল গন্তব্য ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে প্রত্যাশিত চাহিদা না থাকলে রপ্তানিতে প্রভাব পড়বে। ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা, বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিসহ আরও কিছু ঝুঁকির কথা বলেছে বিশ্বব্যাংক।
[১৬] বৈশ্বিক অর্থনীতি সম্পর্কে বিশ্বব্যাংক বলেছে, গত তিন বছরের মধ্যে বিশ্ব অর্থনীতি এবারই প্রথম স্থিতিশীল হবে। ২০২৪ সালে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি হবে ২ দশমিক ৬ শতাংশ আর ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হবে ২ দশমিক ৭ শতাংশ।
[১৭] প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী অর্থবছরে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হবে ভারতের ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। বাংলাদেশ ও ভুটানের একই হারে অর্থাৎ ৫ দশমিক ৭ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হবে। এ ছাড়া নেপালের ৪ দশমিক ৬ ও পাকিস্তানের ২ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে বলেও পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি।