
বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে লজিস্টিক সুবিধা বাড়াতে ১১৩ কোটি ডলারের প্রকল্প
সোহেল রহমান : [১] বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় চট্টগ্রামে দেশের বৃহত্তম শিল্পাঞ্চল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে মাল্টিমোডাল সংযোগসহ লজিস্টিক সুবিধা বাড়াতে ১১২ কোটি ৭০ লাখ ডলারের একটি প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ১০২ কোটি ৫০ লাখ ডলার সংগ্রহ করা হবে। প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
[২] বেজা সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যেই শিল্পাঞ্চলটিতে লজিস্টিক সুবিধা স্থাপনে প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সম্ভাব্যতা যাচাই ও নকশা প্রণয়নের পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে সংস্থাটি। এ দুই কাজেও বিশ্বব্যাংক সহায়তা করবে। মাল্টিমোডাল কানেক্টিভিটি প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক অর্থায়নে সম্মতি জানিয়েছে। আগামী বছরের মধ্যে সমীক্ষাসহ প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ করার পর লজিস্টিকে বিনিয়োগ কার্যক্রম শুরু করা হবে।
[৩] সূত্র জানায়, প্রকল্পটির লক্ষ্য হচ্ছে শিল্পনগরটিকে একটি জলবায়ু-সহনশীল স্মার্ট শিল্পাঞ্চলে রূপান্তরিত করা। একইসঙ্গে এটিতে থাকবে অবকাঠামো ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির সুবিধা। এসবের মধ্যে রয়েছে বিস্তৃত সড়ক সংযোগ, জেটিসহ একটি লজিস্টিক হাব, ইউটিলিটি অবকাঠামো এবং একটি ইন্টেলিজেন্ট পরিবহন ব্যবস্থা। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে লজিস্টিক উন্নয়নের এ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। এরপর চট্টগ্রামের মিরসরাই-সীতাকুণ্ড ও ফেনীর সোনাগাজীতে অবস্থিত শিল্পাঞ্চলটি সম্পূর্ণরূপে চালু হবে।
[৪] প্রকল্পের নথি অনুসারে, পরিবেশগত সহনশীলতার প্রতি বেজার অঙ্গীকার এ প্রকল্পের মূল ফোকাস হবে। শিল্পনগরটিতে পরিবেশবান্ধব নকশা ও নির্মাণচর্চা, সবুজ ও জলবায়ু-সহনশীল অবকাঠামো, উপযোগিতা ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার অন্তর্ভুক্ত করা হবে। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরকে স্মার্ট, প্রতিযোগিতাসক্ষম, দক্ষ, টেকসই করে তোলা এবং এর পরিবেশগত ফুটপ্রিন্ট ন্যূনতম রাখা বেজার লক্ষ্য।
[৫] সূত্র জানায়, শিল্পনগরটিতে তিনটি জেটি নির্মাণ করা হবে। একটি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ নির্মাণ করবে, অন্য দুটি বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের মাধ্যমে নির্মাণ করা হবে। জেটি নির্মাণের জন্য পৃথকভাবে কিছু জায়গা সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। যেখানে জেটির পাশাপাশি কনটেইনার টার্মিনাল থাকবে। রেলপথ, সড়ক ও সমুদ্রপথ নিয়ে মাল্টিমোডাল সংযোগ সুবিধা থাকবে। মাল্টিমোডাল কানেক্টিভিটির মাধ্যমে শিল্পাঞ্চলটিতে স্থাপিত জেটিগুলো চট্টগ্রাম বন্দরসহ অন্যান্য বন্দরের সঙ্গে সমুদ্রপথে যোগাযোগের সুবিধা তৈরি করবে। এছাড়া রেল ও সড়ক সংযোগ শিল্পাঞ্চলটিকে ঢাকা–চট্টগ্রাম রেলপথ ও মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত করবে।
[৬] জানা যায়, প্রায় ১৩৩ বর্গকিলোমিটার এলাকার সমান ৩৩ হাজার ৪০৭ একর জমির ওপর বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। বেজা ইতোমধ্যে ১৬ হাজার ৭২৯ একর জমি অধিগ্রহণ করেছে এবং ভূমি উন্নয়নের কাজ চলছে।
[৭] বেজা সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত শিল্পাঞ্চলটিতে ১৫২টি ইউনিটে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে বিনিয়োগের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর জন্য এটি সব মিলিয়ে পাঁচ হাজার ২৫১ একরের বেশি জমি বরাদ্দ দিয়েছে। কোম্পানিগুলো ইতোমধ্যেই ১২৩ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। আর এসব প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাবিত বিনিয়োগ ১৮০ কোটি ডলারের বেশি। এর মাধ্যমে সাত লাখ ৭৫ হাজার ২২৮ জনের কর্মসংস্থানের প্রত্যাশা করছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
[৮] সূত্র মতে, এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০৪১ সালের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করতে চায় বেজা। এক ছাতার নিচে বিস্তৃত পরিষেবা প্রদানের মাধ্যমে নির্ধারিত এলাকার মধ্যে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সংগঠিত করতে সরকারের কৌশলের অংশ এটি।
[৯] উল্লেখ্য, প্রাথমিকভাবে বেজা ২০৩০ সালের মধ্যে এই ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু এ সময় সংশোধন করে ২০৪১ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত বেজা ৯৭টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের অনুমোদন দিয়েছে, যার মধ্যে বেসরকারি খাতের ৮টিসহ মোট ১১টি অঞ্চল ইতোমধ্যে উৎপাদন শুরু করেছে।
