
সম্ভাবনা সত্ত্বেও দেশিয় উপকরণ কাজে লাগাতে পারছে না চামড়া শিল্প

সোহেল রহমান : [১] যথেষ্ট সম্ভাবনা সত্ত্বেও দেশিয় উপকরণ শতভাগ কাজে লাগাতে পারছে না চামড়া ও চামড়াজাত শিল্প। চামড়া ও চামড়াজাত খাত দেশের এমন একটা শিল্প যার কাঁচামাল তথা উৎপাদনের উপকরণ শতভাগ দেশীয় উৎস থেকে পাওয়া যায়। এমনকি দেশের চাহিদা মিটিয়ে প্রক্রিয়াজাত চামড়া রপ্তানি করে প্রতিবছর প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসে। চামড়া খাতের মূল্য সংযোজন শতভাগ।
[২] সরকার সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো মতে, এ খাত থেকে বছরে ৫০০ কোটি ডলার আয় করা সম্ভব। কিন্তু এর বিপরীরতে রপ্তানি আয় ১০০ কোটি ডলারের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। রপ্তানি আয়ের অধিকাংশই আসছে চামড়ার জুতা থেকে।
[৩] চামড়া ও চামড়া জাত পণ্য থেকে আয় সরকারের বেঁধে দেয়া লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ২১ দশমিক ৫৮ শতাংশ কম। জুলাই-এপ্রিল সময়ের জন্য সরকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ১২২ কোটি ডলার, যার বিপরীতে আয় হয়েছে ৯৬ দশমিক ১৫ কোটি ডলার।
[৪] রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)-এর তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-মে মাসে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের আয় কমেছে ১৪ দশমিক ১৭ শতাংশ। এ সময়ে আয় হয়েছে ৯৬ কোটি ১৫ লাখ ডলার, যা আগে ছিল ১১২ কোটি ডলার।
[৫] চামড়ার জুতা থেকে রপ্তানি আয় ২৫ দশমিক ৯২ শতাংশ কমে ৪৭ দশমিক ৭২ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। প্রক্রিয়াজাত চামড়া থেকে আয় ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ বেড়ে ১২ দশমিক ৫৭ কোটি ডলার হয়েছে। একই সময়ে আগের বছরে ছিল ১১ দশমিক ৪৫ কোটি ডলার। চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি কমেছে অতি সামান্য। গত বছর একই সময়ের তুলনায় ০ দশমিক ৮১ শতাংশ কমে আয় দাঁড়িয়েছে ৩৫ দশমিক ৮৫ কোটি ডলার।
[৬] চামড়ার জুতা থেকে রপ্তানি আয় কমলেও কৃত্রিম চামড়ার জুতা থেকে আয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এ খাতটি গত ১১ মাসে আয় করেছে ৪৬ দশমিক ৩৩ কোটি ডলার। একই সময়ে গত বছরের আয় ছিল ৪৩ কোটি ডলার।
[৭] বৈশ্বিক বাজারে পণ্যের চাহিদার ভাটা ও পরিবেশগত কমপ্ল্যায়েন্সের অভাবকে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির কারণ হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদ ও রপ্তানিকারকরা। তাদের মতে, কমপ্ল্যায়েন্সের অভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে দেশীয় চামড়াজাত পণ্যের ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে পারছেন না। অন্যদিকে, পরিবেশের রক্ষায় যে সব নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয় তা প্রতিপালনে ব্যর্থতার কারণে বৈশ্বিক ক্রেতারা পণ্য নিতে আগ্রহী নন।
[৮] সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা কমেছে। কারণ মানুষের ব্যয়যোগ্য আয় কমেছে। অন্যদিকে আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে ঋতু অনুযায়ী চামড়াজাত পণ্য বিক্রি হচ্ছে না। এ কারণে রপ্তানি বাজারে চাহিদা কম। জাপানের বাজারে মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণে সেখানেও রপ্তানি পণ্যের চাহিদা কমেছে। ফলে সামগ্রিকভাবে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
[৯] তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য একটি বড় বাজার। কিন্তু বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা সেখানে আশানুরূপ ভালো করতে পারছেন না। ক্রেতা ধরতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। ফলে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আমেরিকান বাজারের সুযোগ কাজে লাগানো সম্ভব হচ্ছে না।
[১০] বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ)-এর মতে, আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোর কাছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করার জন্য চামড়া প্রক্রিয়াজাত এবং চামড়া পণ্য প্রস্তুতকারীদের আন্তর্জাতিক সংস্থা লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ থাকতে হয়। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের অধিকাংশ কারখানার এ সনদ নেই। ফলে বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান শক্ত হতে পারছে না। প্রতিযোগী দেশগুলোয় যেমন: ভারতে ৩৫০টির বেশি সনদধারী ট্যানারি আছে। অথচ আমাদের এ সংখ্যা ১০টিরও কম। নদী ও পরিবেশ দূষণ কমাতে হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু কয়েক বছরে এর তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। সাভারে বর্তমান কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি) অসম্পূর্ণ থাকায় দূষণ সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়নি।
[১১] তবে পরিবেশগত কারণে রপ্তানি সেক্টরের ক্ষতি হচ্ছে এমন দাবি পুরোপুরি মানতে রাজি নন অনেক ব্যবসায়ী। তাদের দাবি, ছোট কোম্পানিগুলো কমপ্লায়েন্স রক্ষা করতে পারছে না। যারা বড় কোম্পানি এবং রপ্তানি করে, তারা অনেকেই এখন সম্পূর্ণরূপে কমপ্লায়েন্ট এবং যাবতীয় মান রক্ষা করে রপ্তানি করছে।
