সোহেল রহমান : [১] আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কম দামে বিভিন্ন ক্যাটাগরির তেল আমদানি করে অভ্যন্তরীণ বাজারে চড়া দামে বিক্রি করায় দীর্ঘদিন ধরে মুনাফায় রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। শুধু জ্বালানি তেল বিক্রিতে গত ৯ বছরে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৫৭ হাজার ৩৮৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। তারপরও অভ্যন্তরীণ বাজারে দফায় দফায় বাড়ছে জ্বালানি তেলের দাম।
[২] জ্বালানি সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর মতে, মূল্য সমন্বয়ের নামে গত দু’মাসে দু’দফা জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। অন্যদিকে প্রতি লিটার জ্বালানি তেলে ভোক্তাদের কাছ থেকে ৩০ থেকে ৩২ শতাংশ ভ্যাট ও ট্যাক্স নেয় সরকার। [৩] সূত্র মতে, জ্বালানি তেলের মূল বাড়ানোর পেছনে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এরও চাপ থাকতে পারে।
[৪] সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশে বর্তমানে যেখানে উচ্চ মূল্যস্ফীতি (৯ শতাংশের বেশি) বিরাজ করছে, সেখানে দফায় দফায় জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কারণে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ বাড়ছে।
[৫] অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৪ সালের নভেম্বর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমে যাওয়ায় বিপিসি-কে এখন আর আগের মত সরকারের ভর্তুকি দিতে হচ্ছে না। তবে ২০২১-২২ অর্থবছরে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় ওই অর্থবছরে ২ হাজার ৭০৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছিল বিপিসি।
[৬] অর্থ বিভাগ-এর হিসাব মতে, ২০১৪-২০১৫ অর্থবছর থেকে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছর পর্যন্ত মোট ১০ অর্থবছরে (শুধুমাত্র ২০২১-২০২২ অর্থবছর বাদে) তেল বিক্রি করে প্রচুর মুনাফা করেছে বিপিসি।
[৭] পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে বিপিসি’র মুনাফা হয়েছে ৪ হাজার ১২৬ কোটি টাকা। এর পরের অর্থবছর ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে মুনাফার পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ৪০ কোটি টাকা। একইভাবে ২০১৬-২০১৭ এবং ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে মুনাফার পরিমাণ ছিল যথাক্রমে আট হাজার ৬৫৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা এবং পাঁচহাজার ৬৪৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। ২০১৮-২০১৯-তে ৪ হাজার ৭৬৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা। ২০১৯-২০২০-তে ৫ হাজার ৬৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
[৮] একইভাবে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বিপিসি মুনাফা করেছে সর্ব্বোচ্চ ৯ হাজার ৫৫৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এর পরের অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি শুধু ১ হাজার ৯৮৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছিল। কিন্তু ২০২২-২০২৩ পুনরায় মুনাফার ধারায় ফিরে আসে বিপিসি। আলোচ্য বছর মুনাফা হয়েছিল ৫ হাজার ৬৫৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা এবং চলতি ২০২৩-২০২৪ বছরে বিপিসি’র মুনাফা প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪ হাজার ৮৭৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
[৯] জানা যায়, দেশে প্রতিবছর বিভিন্ন ক্যাটাগরির জ্বালানি তেলের চাহিদা ৬৫ লাখ টন। এর প্রায় ৭৩ শতাংশই ডিজেল। ডিজেলের প্রায় পুরোটায় বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। তবে অকটেনের চাহিদার অর্ধেকের বেশি এবং পেট্রোলের পুরোটাই দেশে উৎপাদিত হয়।