
এই প্রথম উত্তর কোরিয়া সফরে পুতিন, রাজকীয় সংবর্ধনা কিমের
অর্থনীতি ডেস্ক : [১] গত ২৪ বছর ধরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের পদে থাকা ভ্লাদিমির পুতিন তার রাজনৈতিক জীবনে প্রথমবারের মতো উত্তর কোরিয়া সফরে গিয়েছেন। মঙ্গলবার রাতে রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ের প্রধান বিমানবন্দরে অবতরণ করে তাকে বহনকারী উড়োজাহাজটি।
[২] উত্তর কোরিয়ায় দুই দিনের সফরে এসেছেন পুতিন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে অভ্যর্থনা জানাতে এ সময় বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন। [৩] উড়োজাহাজ থেকে নেমে প্রথমেই কিম জং উনের সঙ্গে হাত মেলান পুতিন, জড়িয়ে ধরেন। এ সময় রুশ প্রেসিডেন্টকে লাল গালিচা সম্বর্ধনা দেওয়া হয় উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনীর এলিট শাখা মাউন্টেড সোলজার্সের একটি দল দুই নেতা এসকর্ট করে বিমানবন্দরের টারমাকে অপেক্ষমান লিমোজিন গাড়ির দিকে নিয়ে যায়।
[৪] তারপর পুতিন এবং কিম একই গাড়িতে চেপে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন কুমসুসান গেস্ট হাউসে আসেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের বসবাসের জন্য এই গেস্টহাউসটি নির্দিষ্ট করা হয়েছে।
[৫] পুতিন এবং কিম যখন গাড়িতে চেপে গেস্ট হাউসে আসছিলেন, সে সময় সড়কের দু’ধারে সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে ছিল উত্তর কোরিয়ার সাধারণ লোকজন ও শিশুরা। তাদের সবার হাতে ছিল বেলুন এবং রাশিয়া এবং উত্তর কোরিয়ার পতাকা। পিয়ংইয়ংয়ের সব গুরুত্বপূর্ণ সড়কের দুপাশে পুতিনের পোর্ট্রেট বসানো হয়েছে।
[৬] উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ ভবন রিউগিয়ং হোটেলে ডিজিটাল আলোকসজ্জায় বিশাল অক্ষরে লেখা হয়েছে— স্বাগতম পুতিন। এই ভবনটির উচ্চতা ১০১ তলা।
[৭] প্রাথমিক আলাপে তিনি আরও বলেন, রাশিয়ার লড়াই যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের আধিপত্যবাদী, সাম্রাজ্যবাদী নীতির বিরুদ্ধে এবং এই লড়াইয়ে উত্তর কোরিয়াকে পাশে পেয়ে মস্কো গর্বিত।
[৮] উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তাসংস্থা কেসিএনএ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গেস্ট হাউসে পৌঁছানোর পর কিছুক্ষণ আলাপ আলোচনা করেছেন দুই নেতা। পুতিনের এই সফরকে একটি নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রাথমিক পর্যায় বলেও উল্লেখ করেছে কেসিএনএ।
[৯] পিয়ংইয়ং সফরের আগে এক লিখিত বিবৃতিতে পুতিন বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক চাপ, উস্কানি, ব্ল্যাকমেইল ও সামরিক হুমকির মধ্যেও উত্তর কোরিয়া যেভাবে তাদের জাতীয় স্বার্থের প্রতি অবিচল রয়েছে— তা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য
[১০] গত বছর মস্কো সফরে গিয়েছিলেন কিম জং উন। সেই সফরে পুতিন কিমকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে গোয়েন্দা নজরদারি স্যাটেলাইট তৈরি করতে পিয়ংইয়ংকে সহায়তা করবে মস্কো।
[১১] রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিন থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চলতি সফরে পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব’ চুক্তি স্বাক্ষর করার পরিকল্পনা রয়েছে মস্কোর। এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে সামরিক সহায়তার পাশাপাশি উত্তর কোরিয়ার পর্যটন, কৃষি, খনিসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক খাতে বিনিয়োগের দুয়ারও উন্মুক্ত হবে মস্কোর সামনে। সূত্র : রয়টার্স, ঢাকাপোস্ট
অসহনীয় গরম : মক্কায় ৫৭৭ জন হজযাত্রীর মৃত্যু
অর্থনীতি ডেস্ক : [১] প্রখর তাপপ্রবাহ ও অসহনীয় গরমের জেরে সৌদি আরবের মক্কায় চলতি বছরের হজে মৃত্যু হয়েছে ৫৫০ জনেরও বেশি হজযাত্রীর। সৌদির সরকারি প্রশাসনের বরাত দিয়ে মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে এএফপি।
[২] মৃতদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি মিসর থেকে আসা হজযাত্রী— ৩২৩ জন। এর বাইরে মৃতদের তালিকায় জর্ডান, ইন্দোনেশিয়া, ইরান এবং সেনেগালের হজযাত্রীরাও রয়েছেন।
[৩] মক্কার বৃহত্তম হাসপাতাল আল মুয়াইসেমের মর্গে সব মৃতদের লাশ রাখা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, মৃত হজযাত্রীদের মধ্যে ৫৭৫ জনই মারা গেছেন হিটস্ট্রোক ও গরমজনিত অন্যান্য শারীরিক সমস্যায়। বাকি ২ জন মারা গেছেন পাথর নিক্ষেপের সময় পদদলিত হয়ে। [৪] হিটস্ট্রোক, জ্বর ও অন্যান্য গরম জনিত শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে আল মুয়াইসেম হাসপাতালে বর্তমানে ২ হাজারেরও বেশি হজযাত্রী চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলেও জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
[৫] উষ্ণ মরু জলবায়ুর দেশ সৌদি আরবে গ্রীষ্মকালে গড় তাপামাত্রা থাকে ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি। গত কয়েক দিন ধরে দেশটির দৈনিক তাপমাত্রা ৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার মক্কার তাপমাত্রা ছিল ৫১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
[৬] পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন ও তার জেরে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত নয় সৌদিও। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি এক দশকে সৌদি আরবের তাপমাত্রা বাড়ছে দশমিক ৪ ডিগ্রি করে।
[৭] হজ মৌসুমে সৌদিতে বিভিন্ন দেশ থেকে লাখ লাখ হজযাত্রীর সমাগম ঘটে। এই হজযাত্রীদের সবাই যে যথাযথ নিয়ম-বিধি মেনে দেশটিতে প্রবেশ করেন এমন নয়। হাজার হাজার যাত্রী দেশটিতে প্রবেশ করেন বৈধ কাগজপত্র বা নথিপত্র ছাড়াই। প্রত্যেক বছরই এমন ঘটে।
[৮] ফলে, বৈধ হজযাত্রীদের জন্য সৌদির সরকার যেসব সুযোগ-সুবিধা ও পরিষেবা বরাদ্দ করেছে, সেসবের প্রায় কিছুই তারা পান না। এমনকি শীতাতম নিয়ন্ত্রিত তাঁবুতেও তাদের প্রবেশাধিকার নেই।
[৯] ফলে ভয়াবহ গরম থেকে পর্যাপ্ত সুরক্ষার অভাবই অনেক হজযাত্রীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। সৌদির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, যে হজযাত্রীরা মারা গেছেন, তাদের অধিকাংশই যথাযথ নিয়ম-বিধি মেনে সৌদিতে প্রবেশ করেননি। দীর্ঘ সময় ধরে তারা খাবার, পানি ও এয়ার কন্ডিশন পরিষেবা পাননি। মূলত এটিই তাদের অসুস্থতা ও তার পরবর্তীতে মৃত্যুর জন্য দায়ী।
[১০] গত বছর হিটস্ট্রোক ও অন্যান্য শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে ২৪০ জন হজযাত্রী মারা গিয়েছিলেন। এবার মৃত্যু হলো তার দ্বিগুণেরও বেশি সংখ্যক যাত্রীর।
[১১] সৌদির সরকারি প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেছেন, এর আগে এক মৌসুমে এত বেশি সংখ্যক হজযাত্রীর মৃত্যুর ঘটনা খুব বেশি ঘটেনি। সূত্র : এএফপি, এনডিটিভি ওয়ার্ল্ড, ঢাকাপোস্ট
