বিশ্বব্যাংকের কথা আমাকে শুনতে হবে : অর্থমন্ত্রী
সোহেল রহমান : [১] অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, জাতীয় সংসদের বাজেট পেশ করার পর নানা মহল থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া আসছে। আবার অনেকেই সমালোচনা করছেন। তাদের উদ্দেশে বলবÑ আমাদের অর্থনীতি নিয়ে, বাজেট নিয়ে বিশ্বব্যাংক কী বলছে, সেদিকেও নজর দিয়েন।
[২] তিনি বলেন, তবে আমরা সব প্রতিক্রিয়া আমলে নিচ্ছি। যেগুলো বাস্তবসম্মত এবং বাজেটে বাস্তবায়নযোগ্য সেগুলো অবশ্যই পুনর্বিবেচনা করা হবে। কারণ এখনো বাজেট পাস হয়নি।
[৩] বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) মিলনায়তনে বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতি আয়োজিত বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অর্থনীতি : প্রবৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় জাতীয় বাজেট ২০২৪-২০২৫ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।
[৪] অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজেট নিয়ে বিশ্বব্যাংক বলেছেÑ ভালো হয়েছে। আমার টাকা লাগবে, বিশ্বব্যাংকের কথা শুনতে হবে। না হলে আপনারা (সমালোচকরা) টাকা দেন।
[৫] তিনি বলেন, শেখ হাসিনা সরকার জনবান্ধব সরকার। অনেকেই বলে, সরকার শিগগিরই পড়ে যাবে, কই সরকার তো পড়ে না। সরকার দেউলিয়া হয়ে গেছে, দেউলিয়া মানে কি? দেউলিয়া তো হলো না। বিশ্বব্যাংক কিছু বোঝে না, আপনি সব কিছু বোঝেন? বাজেট দিলাম, এটা দেখেন ও বোঝার চেষ্টা করেন। এই বাজেট জনবান্ধব বাজেট। কোনো কিছুতে সমস্যা থাকলে পুনর্বিবেচনা করার সম্ভাবনা আছে।
[৬] সংসদ সদস্য সাজ্জাদুল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনাসভায় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রতিনিধি ড. জিয়াকুন শি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
[৭] বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, মানুষের পকেটে টাকা আছে। দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। মানুষের পকেটে টাকা না থাকলে লাখ টাকা দিয়ে কোরবানি দিতো না। গ্রামের মানুষেরও সক্ষমতা বেড়েছে।একসময় গ্রামে মাছ-মাংস পাওয়া যেত না, বড় বোয়াল সারাদিন বিক্রি হতো না, বাজারে সকাল থেকে সন্ধ্যা পড়ে থাকতো। এ দশা এখন নেই। এখন বড় বোয়ালের তিনজন ক্রেতা দাঁড়িয়ে থাকেন।
[৮] তিনি বলেন, আমার এলাকায় এখন তিন ফসল হয়। ধান উৎপান বেড়েছে। সবার প্রচেষ্টায় কৃষিকে আমরা ফোকাস করছি। এজন্য কৃষি গবেষণা দরকার। পচনশীল পণ্য কাজে লাগাতে হবে। কোন মাসে কত প্রয়োজন এটা নির্ণয় করতে হবে। বাজারে কোনো পণ্যের যেন ঘাটতি না থাকে সেজন্য আমরা কাজ করছি। মিয়ানমার থেকে আদা, মরিচ আমদানির চেষ্টা করছি। বারো মাস সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখতে হবে, ভোক্তার কোনো পণ্যের যেন কোনো ঘাটতি না থাকে। আমরা অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সাহায্য সহযোগিতা পাচ্ছি।
[৯] প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, গত চার মাসে ১ কোটি পরিবারকে প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য বিতরণ করেছি। স্থায়ী দোকানে জুন মাস থেকে সারাদেশে ১০ হাজার ডিলার করে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য দেবো।
[১০] রিজার্ভ প্রসঙ্গে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভর্তুকির কারণে রিজার্ভ কমেছে। রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে এমনিতে ২০ বিলিয়ন ডলার হয়নি। এর মধ্যে ১৪ বিলিয়ন ডলার গেছে সার-তেল আমদানির জন্য। তবে তিন মাসের রিজার্ভ আছে, রেমিট্যান্স বেড়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ডিউটি ফ্রি (শুক্লমুক্ত) কোটা ফ্রি সুবিধা পাচ্ছি। ডলার দাম বাড়লেও তেলের দাম আমরা স্থিতিশীল রাখছি। সামনে আরও ভালো সময় আছে।
[১১] সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, এবারের বাজেটে সরকার বেশকিছু সাহসী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। মূল্যস্ফীতি কমানোর উদ্দেশ্যে এবার বাজেটের আকার এবং ঘাটতি কমানো হয়েছে, যা খরচ কমানোর স্বার্থে করা হয়েছে বলে মনে হয়। তবে পাইপলাইনে অনেক ঋণ আছে। টাকা পাচার থেকেই ডলার সংকটের শুরু বলে মনে করেন অনেকে। বছরে ৭ থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়। এ কারণে ডলার সংকট দেখা যায়। এটা রোধ করার পদক্ষেপ দরকার।
[১২] অর্থমন্ত্রীকে কর আদায়ে জোর দেয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এনবিআর-কে শুধু কর আদায়ে ব্যবহার করুন। তবে ঋণখেলাপি কীভাবে কমানো যায়, সে চিন্তা করতে হবে। ব্যাংক একীভূত করার যে উদ্যোগ তার ফলাফল অনিশ্চিত।
[১৩] শামসুল আলম বলেন, ঋণের ২২ শতাংশ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ব্যাংকের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এর রাশ টানতে হবেই। ব্যাংক কমিশন করলে ভালো, তা না হলে অন্তত শক্তিশালী একটা কমিটি করা উচিত বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদদের নিয়ে। কর ন্যায়পাল নিয়োগ, এনবিআর ও আইআরডি’র কাজ আলাদা করা দরকার। এডিপি বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেয়া উচিত। মূল্যস্ফীতি কমাতে আমদানি নীতি সহজীকরণ করা জরুরি। বাজারে সরবরাহ ঠিক রাখলে চাহিদা-জোগান ঠিক থাকে।
[১৪] তিনি বলেন, সংসদ সদস্যদের গাাড়ি আমদানিতে করমুক্ত সুবিধা প্রত্যাহারের প্রস্তাব সাহসী। ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ পর্যায়ে উৎসে কর ১ শতাংশ কমানো মূল্যস্ফীতি কমাতে ভূমিকা রাখবে।