
খসড়া আইন প্রকাশ শিল্প মন্ত্রণালয়ের চামড়া শিল্পের জন্য হচ্ছে আলাদা কর্তৃপক্ষ

মো. আখতারুজ্জামান : [১] বেশ কয়েক বছর থেকে চামড়া শিল্পে ভালো কোনো খবর দেখা যাচ্ছে না। নিম্নমুখীতায় পড়ে থেকে এই শিল্পের উন্নয়নে পৃথক কর্তৃপক্ষ গঠন করতে যাচ্ছে সরকার। গত সপ্তাহে বাংলাদেশ চামড়া শিল্প ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ আইন- ২০২৪ শীর্ষক আইনের খসড়া প্রকাশ করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়।
[২] দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিপণ্য চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য খাতের উন্নয়ন ও বিকাশে পৃথক একটি কর্তৃপক্ষ গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।এ খাতের দেখভাল ও উন্নয়নে পৃথক একটি কর্তৃপক্ষ গঠনে গত সপ্তাহে বাংলাদেশ চামড়া শিল্প ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ আইন- ২০২৪ শীর্ষক আইনের খসড়া প্রকাশ করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়।
[৩] এই কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্য হবে— চামড়া শিল্প স্থাপন ও বিকাশে সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগের চামড়া শিল্পনগরী স্থাপন ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সম্পর্কে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। অংশীজনের মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে এই আইনটি চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
[৪] রপ্তানিতে তৈরি পোশাক খাতের ওপর নির্ভরতা কমাতে ও দেশের রপ্তানি ঝুড়িতে বৈচিত্র্য আনতে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণে একটি আলাদা কর্তৃপক্ষ গঠনের দাবি জানিয়েছিলেন চামড়া খাতের ব্যবসায়ী ও স্টেকহোল্ডাররা।
[৫] এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের ১২ অক্টোবর বাংলাদেশ লেদার ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদার গুডস ইন্টারন্যাশনাল সোর্সিং শো-ব্লিস ২০২৩ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চামড়া শিল্প উন্নয়নে একটি কর্তৃপক্ষ গঠনের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
[৬] প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার প্রায় সাত মাস পর চামড়া শিল্পের উন্নয়নের জন্য পৃথক কর্তৃপক্ষ গঠনের উদোগ নিল শিল্প মন্ত্রণালয়। খসড়া আইন অনুযায়ী, একজন চেয়্যারম্যান ও তিনজন সদস্যের সমন্বয়ে এই কর্তৃপক্ষ গঠিত হবে। কর্তৃপক্ষের প্রধান কার্যালয় হবে সাভার চামড়া শিল্পনগরীতে।
[৭] সরকার বা সরকারী প্রজ্ঞাপন দ্বারা অতিরিক্ত সচিব মর্যাদার একজনকে চেয়্যারম্যান ও যুগ্মসচিব মর্যাদার কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে কর্তৃপক্ষের সদস্য নিযুক্ত হবেন।
[৮] খসড়া আইনে বলা হয়, কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্য পূরণে ৮ সদস্যের একটি বোর্ড থাকবে, যার সভাপতি হবেন শিল্পমন্ত্রণালয়ের সচিব/সিনিয়র সচিব আর সদস্য সচিব থাকবেন চামড়া শিল্প ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের চেয়্যারম্যান।
[৯] এই বোর্ডের সদস্য হবেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) চেয়্যারম্যান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিউটের পরিচালক, বাংলাদেশ টেনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোয়েশনের সভাপতি।
[১০] শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশে অনিচ্ছা জানিয়ে বলেন, চামড়া শিল্পের উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনায় স্টেকহোল্ডাররা বিভিন্ন আলাদা একটি কর্তৃপক্ষ গঠনের দাবি জানিয়ে আসছিল। সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় এই কর্তৃপক্ষ গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। এই কর্তৃপক্ষ চামড়া শিল্প উন্নয়ন, রপ্তানি বৃদ্ধিতে করণীয় নির্ধারণে কাজ করবে।
[১১] এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ টেনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও সালমা টেনারির মালিক মো. সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, এটি একটি সময় উপযোগী একটা সিদ্ধান্ত। চামড়া শিল্পের উন্নয়নে এই কর্তৃপক্ষ দ্রুত গঠন করা উচিত। চামড়া শিল্পের উন্নয়নে নানান পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতে চামড়া শিল্পের উন্নয়ন হয়নি। এই কর্তৃপক্ষ গঠিত হলে চামড়া শিল্পের উন্নয়নে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হবে, এর ফলে চামড়া শিল্পের যে দূরাবস্থা তা কেটে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
[১২] এই কর্তৃপক্ষের লক্ষ্য বাস্তবায়নে একটি বোর্ড গঠনের কথা বলা হয়েছে। এই বোর্ডে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং ও টেকনোলজি ইন্সটিউটিউটের পরিচালককে সদস্য রাখা হয়েছে।
[১৩] উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে তিনজন মন্ত্রী, একজন প্রতিমন্ত্রী, সাতজন সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বিশেষজ্ঞ এবং স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে একটি টাস্কাফোর্স গঠন করে সরকার।
[১৪] এই টাস্কফোর্সের কাজ ছিল— চামড়া শিল্পের সামগ্রিক অবস্থা পর্যালোচনা করে বিদ্যমান সমস্যা চিহ্নিত করে উত্তরণের উপায় নির্ধারণ, শিল্পের উন্নয়ন, বাজার সম্প্রসারণ ও রপ্তানি বৃদ্ধিতে সুপারিশ প্রদান করা।
[১৫] সরকার বর্তমানে চামড়াজাত পণ্যের জন্য ১০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত রপ্তানি প্রণোদনা প্রদান করছে। উল্লেখ্য, ১৯৮০’এর দশকে পোশাক খাতের জন্য ২৫ শতাংশ পর্যন্ত প্রণোদনা চালু ছিল যা নব্বইয়ের দশকে ২০ শতাংশে কমিয়ে আনা হয়। এই উল্লেখযোগ্য প্রণোদনার অবদানেই বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম শিল্পে পরিণত হয়েছে।
[১৬] রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর মতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশ থেকে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে মোট ১.২২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের— যা সে বছরের মোট রপ্তানি আয়ের মাত্র ২.৪ শতাংশ। এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে এ খাতের রপ্তানি ৯৬১ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪.১৭ শতাংশ কম।
