মাথাভাঙ্গা আর নদী নয়, যেন ডাস্টবিন!
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি : [১] দখল, দূষণ আর আবর্জনায় মৃতপ্রায় চুয়াডাঙ্গার প্রধান নদী মাথাভাঙ্গা। এক সময়ের খরস্রোতা এ নদী এখন নাব্যতা হারিয়ে সরু নালায় পরিণত হয়েছে যেন। [২] নদীর দুই পাড় এখন দখলদারদের নিয়ন্ত্রণে। নদীর পানিও ব্যবহারের অনুপযোগী গোসলে করলেই আক্রান্ত হতে হয় চর্মরোগে। এছাড়া, মাছসহ জলজ প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে। মাঝে মাঝে মাছ মরে ভেসে ওঠে নদীতে। [৩] বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী এ মাথাভাঙ্গা। এর সঙ্গে জেলার অন্য নদীগুলোর সংযোগ রয়েছে। এ নদী বাঁচাতে না পারলে পানির সংকটে পড়তে হবে জেলার সাধারণ মানুষকে।
[৪] এরই মধ্যে পানি না থাকায় সেচ ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। ফসল উৎপাদনও হ্রাস পাচ্ছে। আর নদী থেকে প্রায় বিলুপ্তির পথে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছ। এছাড়া নদীর দুই পাড় দখল করে বাগানসহ বাড়িও নির্মাণ করা হয়েছে। [৫] স্থানীয়রা বলেন, দ্রুত খনন করা না হলে মাথাভাঙ্গা নদীকে আর আগের জায়গায় ফেরানো অসম্ভব হয়ে না। ভরাট হওয়ায় বর্ষা মৌসুমেও এ নদীতে পানি থাকে না। আর অন্য সময় যে কেউ হেঁটেই অনায়াসে নদী পার হতে পারবেন। [৬] ভারতের মুর্শিদাবাদ হয়ে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও কুষ্টিয়া অংশে বয়ে গেছে এ নদী। এর প্রায় ৯৮ কিলোমিটার অংশ চুয়াডাঙ্গায়। এক সময় কানায় কানায় পূর্ণ ছিল এ নদীর পানি। বর্তমানে হাঁটুর উপরেও পানি থাকে না। নানা কারণে নদীটি এখন মৃতপ্রায়।
[৭] এক সময় এ নদী দিয়ে ছোট-বড় নৌযান চলাচল করতো। এখন নদীতে ছোট নৌকাও চলে না। নদীর প্রশস্ততা হ্রাস পেতে পেতে এখন নালায় পরিণত হয়েছে। [৮] জানা যায়, নদীর সঙ্গে পৌর এলাকার ড্রেনেজ লাইনগুলো যুক্ত। এতে দূষিত পানি নদীতে এসে মিশছে। এছাড়া প্লাস্টিকের বোতল, বর্জ্য ও পলিথিনসহ ক্ষতিকর জিনিস নদীতে ফেলা হচ্ছে। বাজারসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বর্জ্যও এ নদীতে ফেলা হয়। বাজারে জবাই করা পশুর বর্জ্য নদীতে নিয়মিত ফেলা হচ্ছে। এছাড়া, ময়লা-আবর্জনা স্তূপ করে রাখা হচ্ছে নদীর পাড়ে।
[৯] নদীর দুই পাড়ের শত শত বিঘা জমি স্থানীয়দের দখলে। এর পাড়ে অনেকে ফলের বাগানসহ ফসল চাষ করছেন। বছরের পর বছর অবৈধভাবে জমি দখল করছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এছাড়া, নদীতে বাঁধ ও বাঁশের বেড়া দিয়ে মাছ চাষ করায় পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। নদী তীরবর্তী মানুষ এক সময় গোসল ও খাবারের জন্য পানি নিয়মিত ব্যবহার করতেন এখন গোসল করতেও ভয় পান।
[১০] চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার মাদরাসাপাড়ার বাসিন্দা বিপ্লব মিয়া বলেন, ছোটবেলায় নদীতে গোসল করতে ছুটে যেতাম। এখন ময়লার গন্ধে নদীর পাড়েই যাওয়া যায় না। নদীতে গোসল করার অবস্থাও নেই। নদীতে আগে দেশীয় প্রজাতির মাছ পাওয়া যেতো। এখন মাছও চোখে দেখা যায় না। নদীর বেহাল অবস্থা দেখে কষ্ট হয়। নদী অনেকাংশে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে যেন। নদী খনন করা জরুরি হয়ে পড়েছে, তা না হলে জেলার প্রাণ নিঃশেষ হয়ে যাবে।
[১১] চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার মুন্সিগঞ্জ গ্রামের নুর আলী বলেন, নদীর পানি খাওয়া ও রান্নার কাজে ব্যবহার হতো। এখন পানি বিষাক্ত হয়ে গেছে। পাড় থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে হবে। একই সঙ্গে নদীতে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করতে হবে। নদীটিকে বাঁচানো না গেলে প্রকৃতির ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়বে।
[১২] মাথাভাঙ্গা নদী বাঁচাও রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান আলী বলেন, নদীটি দেখে কষ্ট হয়। নদী বাঁচাতে আমরা দীর্ঘদিন আন্দোলন অব্যাহত রেখেছি। এর প্রাণ ফিরিয়ে দিতে কাজ করছি। নদীটি এখন আর ভালো কাজে ব্যবহার করা হয় না। খারাপ কাজের জন্য সবাই ব্যবহার করছে। কিছু মানুষের উদাসীনতার কারণে নদীর আজ করুণ অবস্থা। দ্রুত নদী খনন করে এর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে হবে।
[১৩] চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ আহমেদ বলেন, এটি জেলার প্রাণ। নদীটি খননের জরিপ কাজ শেষের দিকে। প্রকল্পটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। খননের অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে। এছাড়া নদী দখলমুক্ত রাখতে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করবো।