• প্রচ্ছদ
  • আমার দেশ
  • আমাদের বিশ্ব
  • খেলা
  • ইসলামি চিন্তা
  • অমৃত কথা
  • বিনোদন
  • আজকের পএিকা
    • প্রথম পাতা
    • শেষ পাতা
  • নগর সংস্করণ
  • মিনি কলাম
  • খ্রিস্টীয় দর্পণ
  • প্রবারণা পূর্ণিমা

মিনি কলাম

পুরো দেশটাই একদিন সিলেট হবে!

প্রকাশের সময় : June 23, 2024, 12:46 pm

আপডেট সময় : June 23, 2024 at 12:51 pm

সাইফুদ্দিন আহমেদ নান্নু

আমি দুটো বড় ভয়াবহ বন্যা দেখেছি। একটি ১৯৮৮, অন্যটি ১৯৯৮ সনে। ৮৮র বন্যায় আরিচা পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার যে উচ্চতায় ছিল ৯৮র বন্যায় একই পয়েন্টে পানির উচ্চতা ছিল ৮৮র চেয়ে প্রায় এক ফুট বেশি। সে হিসাবে ৯৮ সালে মানিকগঞ্জ শহরে আমাদের ঘরের মেঝেতে বন্যার পানির উচ্চতা থাকার কথা ৮৮র চেয়ে বেশি। কিন্তু তা হয়নি। ৮৮র বন্যায় ঘরের মেঝেতে হাঁটুডোবা পানি উঠেছিল, অথচ ৯৮ সালের বন্যায় মেঝেতে পানি উঠাতো দূরের কথা বন্যার পানি বারান্দার এক ইঞ্চি নীচেই ছিল। উল্টো ব্যাপার তাই না। আরেকটি বিষয় আছে, যা খুব গুরুত্বপূর্ণ, তাহলো ৮৮র বন্যার পানি তিন/চার দিনের মধ্যেই ঘরের মেঝে থেকে নেমে উঠানে, উঠান থেকে সোজা খালে নেমে গিয়েছিল। শহর পানিমুক্ত হয়েছিল। আবাদী জমিগুলো থেকে পানি সরে গিয়েছিল ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে। অথচ ৯৮র বন্যায় বাড়ির উঠান থেকে পানি নামতেই লেগেছিল সাতদিনের বেশি। শহরের রাস্তা থেকে খালে পানি নামতে লেগেছিল ১৫ দিনের বেশি। অধিকাংশ আবাদী জমিতে পানি জমেছিল প্রায় ৬ মাস। ৯৮ সনে এমনটা হয়েছিল কেবল খাল, পুকুর, জলাশয়, নীচু জমিতে অপরিকল্পিতভাবে রাস্তা, বাঁধ, বাড়িঘর নির্মাণের ফলে পানি সহজে প্রবেশ করতে পারেনি বলে। পানি তার শক্তি দিয়ে রাস্তা, বাঁধ, বাড়িঘর ভেঙে, ডিঙিয়ে নিজের দখল নিয়েছিল। এই দখল নিতে সময় লেগেছিল। এই সময়ের মধ্যে নদীর পানি কমতে শুরু করে। কিন্তু এর মধ্যে যে পানি রাস্তা, বাঁধ ডিঙিয়ে জনপদে, লোকালয়ে প্রবেশ করেছিল সে পানি রাস্তা, বাঁধ ডিঙিয়ে ফিরে যেতে পারেনি, যা পেরেছিল ৮৮র বন্যায়।

যমুনা নদীর আরিচা ঘাটের দূরত্ব মানিকগঞ্জ শহর থেকে মাত্র ২৩/২৪ কিলোমিটারের মত। ৮৮ এবং ৯৮ এই দুটো বন্যার মাঝে ব্যবধান মাত্র ১০ বছরের। দশ বছরের ব্যবধানে এমন উল্টো চিত্র কেন সেটা বুঝতে পারলেই সিলেটের বন্যার ভয়াবহতার কারণ কিছুটা হলেও খুব সহজে বোঝা যাবে। কারণ আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনায় গলদ। পরিবেশ বিনাশী, প্রকৃতি বিরোধী পরিকল্পনা। রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, বিভিন্ন স্থাপনা নির্মানের সময় বর্ষা, বন্যার পানির হিসাবটা আমাদের প্রকৌশলী, প্রশাসন, রাজনীতিক এবং আমরা সাধারণ মানুষেরা মোটেই আমলে নেইনা। এই অবকাঠামোগুলো বর্ষা, বন্যা, বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের পথগুলো চিরতরে বন্ধ করে দিয়ে ৮৮ এবং ৮৯ এর বন্যার চরিত্রগত পার্থক্য গড়ে দিয়েছিল। একই কারণে ২০২২ এর মতো এবারও সিলেট ট্র্যাজেডি প্রত্যক্ষ করছি। গুরুত্বপূর্ণ একটি তথ্য বলে নিই। এবার ভারতের চেরাপুঞ্জিতে যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে, একই পরিমাণ বা তারও বেশি পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছিল ১৯৯৫ এবং ১৯৮৪ সালে। তখন কিন্তু সিলেটে এমন বিপর্যয় ঘটেনি। পানি এসেছে বাঁধাহীন ভাবে ফ্লাস করে চলে গেছে। এখন যেতে পারছে না প্রকৃতি, পরিবেশ বিনাশী উন্নয়ন পরিকল্পনা আর প্রাকৃতিক জলাধারগুলো ভরাট হয়ে যাবার কারণে পানি নামার পথে বিচিত্র বাধা সৃষ্টির জন্য।

মানিকগঞ্জের কথা দিয়ে শুরু করেছি, উদাহরণ মানিকগঞ্জ দিয়েই দিই। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে ব্র্যাকের আয়েশা-আবেদ ফাউন্ডেশনের ঠিক পাশে মহাসড়কের উপর একটি ব্রিজ ছিল। এক যুগ আগেও এই ব্রিজের নীচ দিয়ে সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের পিছনের বিশাল চকে পানি ঢুকতো, নৌকা আসতো। আর সেওতা কবরস্থানের পাশ ঘেঁষে একটা খাল ছিল সে খাল দিয়েও এই চকে পানি আসতো ওয়্যারলেস গেট আর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সামনের ব্রিজের নীচ দিয়ে। এখন আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশনের পাশের সেই ব্রিজের দুপাশের মাটি ভরাট করে ইমারত উঠেছে, ব্রিজটাকে বোঝাই যায় না। আর সে খালের অস্তিত্বই নেই দালানকোঠায় ঠাঁসা। মানিকগঞ্জ শহরের মাঝের খালে নৌকাবাইচ দেখেছি। সে খাল এখন সরু নালা, ময়লা আবর্জনার ভাগার। নদীর কথা বাদই দেই। খাল, বিল, পুকুরগুলোর দিকে তাকান, সব ভরে গেছে, দখল হয়ে গেছে। মানিকগঞ্জ শহরের সবচেয়ে বড় বিল ছিল গজারিয়া বিল। সেই বিলে চৈত্র মাসেও বুকসমান পানি দেখেছি। আর এখন সে বিলের নাম হয়েছে গজারিয়া চক। ফসলের মাঠ। এমন শত শত বিল, হাওর যে পরিমান পানি ধারণ করতো এখন তা করে না। নদীগুলোতে উজান দেশের বাঁধ নির্মানের কথা থাক। সেটা ভিন্ন হিসাব, রাজনৈতিক হিসাব। সরল হিসাব হল, উজানের দেশে বেশী বৃষ্টি হবে এবং প্রাকৃতিক নিয়মেই তা ভাটির দেশ, নীচু জমিনের দেশ হিসাবে আমাদের বুকের উপর দিয়ে সেই পানি কখনও স্বাভাবিক গতিতে কখনও ভয়ংকর গতিতে ছুটে যাবে বঙ্গপোসাগরে। এই হিসাব উল্টে দেবার ক্ষমতা আমাদের নেই, কারও নেই। ঢালু পথে পানি গড়াবেই।

আমাদের দায়িত্ব পানি গড়িয়ে নেমে যাবার পথগুলোকে খোলা রাখা। খোলা রেখে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহন করা। মরা নদীগুলোকে খনন করা, যে খাল, বিল হাওরগুলো এখনও বেঁচে আছে সেগুলোকে বাঁচিয়ে রেখে প্রয়োজনে খনন করে তার পানি ধারণ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে নেয়া। প্রতিটি সড়কে পর্যাপ্তসংখ্যক বড় আকারের বক্স কালভার্ট, ছোট ছোট ব্রিজ নির্মান করা। কোন অবস্থা এবং অজুহাতে আর যেন একটি খাল, একটি পুকুর, একটি হাওরের জমিও যেন দখল না হয়, ভরাট করে স্থাপনা নির্মান করা না হয়। নতুন নতুন মেগা প্রজেক্ট হাতে না নিয়ে ওই টাকায় সে সব সড়কে, রাস্তায় অপর্যাপ্ত ব্রিজ কালভার্ট আছে সেগুলোতে রাস্তা কেটে নতুন কালভার্ট, ছোট ছোট ব্রিজ নির্মান করা। সোজা হিসাব, পানির ভাটিতে যাবার পথে বাধা দেয়া যাবে না, যে সব বাধা ইতোমধ্যেই দাঁড়িয়ে গেছে সম্ভব হলে সেসব বাধা দূর করতে হবে। নইলে শুধু সিলেট কেন একযুগ পর পুরো দেশই সিলেট হয়ে যাবে। এড়াতে পারবেন না, কারণ আমাদের দেশটা ভাটিতে। পথ আটকাবেন তো পানি ফুঁসে, ফুলে উঠবে এবং তুড়ি মেরে সবকিছু ভেঙেচুড়ে পানি তার গন্তব্যে যাবেই। নয়তো ডুবিয়ে মারবে। এর মাঝামাঝি কোন কিছু নেই। ফেসবুক থেকে

সম্পাদক

নাসিমা খান মন্টি

09617175101, 01708156820

[email protected]

১৩২৭, তেজগাঁও শিল্প এলাকা (তৃতীয় তলা) ঢাকা ১২০৮, বাংলাদেশ। ( প্রগতির মোড় থেকে উত্তর দিকে)