
আমজনতার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে প্রয়োজন স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বৃদ্ধি
শাফিউন নাহিন শিমুল : বাংলাদেশ তার স্বাস্থ্য খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসা অর্জন করেছে। তবুও এই অর্জনগুলোর নীচে একটি উদ্বেগজনক বাস্তবতা রয়েছে: সেক্টরটি অদক্ষতা, দুর্বলতায় ধাক্কা খাচ্ছে, কোভিড সহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জরুরি অবস্থার দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়েছে। এটি স্বাস্থ্যসেবায় বর্ধিত বিনিয়োগের জরুরি প্রয়োজনকে আলোকিত করেছে। পকেটের বাইরের ব্যয় বৃদ্ধি ও উচ্চ চিকিৎসা ব্যয়ের পঙ্গুত্বপূর্ণ আর্থিক বোঝা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের বারবার সতর্কতা সত্ত্বেও সময়োপযোগী পদক্ষেপগুলো খুব কমই হয়েছে। শহুরে জনগোষ্ঠী বিশেষ করে যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামোর অভাবে ভুগছে। সরকারের প্রতিক্রিয়া প্রায়ই অনিশ্চিত ও অপর্যাপ্ত দেখায়। বর্তমানে বাংলাদেশ তার জিডিপির একটি মাত্র ভগ্নাংশ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ করে। আরও খারাপ ব্যাপার হলো এই বরাদ্দ কমছে বা প্রায় একই রয়ে গেছে। অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় তহবিল বন্ধ করে দেয়। একটি খাতের জন্য একটি করুণ পরিমাণ রেখে যায়। ফলস্বরূপ, পকেটের বাইরের ব্যয় স্বাস্থ্য অর্থায়নে প্রাধান্য পায় যা প্রতি বছর প্রায় পাঁচ মিলিয়ন মানুষকে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দেয়। অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে সর্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজ (ইউএইচসি) অর্জনের লক্ষ্য একটি দূরের স্বপ্ন থেকে যায়।
স্বাস্থ্য বাজেট বাড়ানো শুধু প্রয়োজনীয় নয় এটা অপরিহার্য। বর্তমানে অপর্যাপ্ত তহবিলের কারণে থমকে থাকা প্রয়োজনীয় সংস্কার ও উন্নতি বাস্তবায়নের জন্য তহবিলগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, সামাজিক স্বাস্থ্য বীমার মতো বাধ্যতামূলক সর্বজনীন প্রি-পেমেন্ট মেকানিজম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পুনর্গঠন করা নাগরিকদের উপর আর্থিক বোঝা থেকে মুক্তি দেবে। কিন্তু এই ধরনের ব্যাপক পরিবর্তনের জন্য যথেষ্ট বিনিয়োগ প্রয়োজন। যদিও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এ ধরনের উদ্যোগের কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের অভাব রয়েছে। তবুও সক্ষমতার অভাব দীর্ঘ সময়ের জন্য বাধা হয়ে থাকবে। এই সংস্কার পরিচালনার জন্য সরকারের বর্তমান ক্ষমতা খুবই সীমিত। কর্পোরেট বীমা খাত সমানভাবে অপ্রস্তুত। অধিকন্তু, স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবাগুলো অত্যধিকভাবে বড় শহরগুলোতে কেন্দ্রীভূত, কার্যকর বীমা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা কঠিন করে তোলে। স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবাগুলো আরও ন্যায়সঙ্গতভাবে প্রসারিত ও বিতরণের জন্য একটি বড় বাজেট অপরিহার্য। একটি বর্ধিত স্বাস্থ্য বাজেট প্রশাসনকে শক্তিশালী করবে, পরিষেবার ক্ষমতা বাড়াবে ও উদ্ভাবনী অর্থায়নকে উৎসাহিত করবে।
জনস্বাস্থ্যের নিম্নমানের মান অনেককে অনিয়ন্ত্রিত ব্যক্তিগত পরিষেবাগুলো চাইতে বাধ্য করে, আর্থিক চাপকে বাড়িয়ে তোলে। ডায়াগনস্টিকস, অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা খরচের জন্য পরিষ্কার ক্লিনিকাল নির্দেশিকা ও নিয়ন্ত্রিত মূল্য নির্ধারণ অপরিহার্য। হাসপাতালগুলোকে মান অনুযায়ী শ্রেণীবদ্ধ করতে হবে সংশ্লিষ্ট মূল্যের সঙ্গে একটি শক্তিশালী মনিটরিং সিস্টেম স্থাপন করতে হবে। এই ব্যবস্থাগুলোর জন্য উল্লেখযোগ্য আর্থিক সংস্থান প্রয়োজন। ফার্মাসিউটিক্যালের দাম পকেটের বাইরের খরচের আরেকটি প্রধান চালক। কোম্পানিগুলো প্রায়ই নিয়ন্ত্রিত দাম বাইপাস করার জন্য অপ্রয়োজনীয় ওষুধ তৈরি করে। বর্ধিত তহবিল এই শোষণমূলক অভ্যাস রোধ করতে শক্তিশালী নিয়ন্ত্রক কাঠামোকে সমর্থন করতে পারে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাপক স্বাস্থ্য অবকাঠামো নিয়ে গর্ব করে। এই সুবিধাগুলোকে কার্যকর করতে ও পকেটের বাইরের অর্থপ্রদান কমাতে প্রাথমিক পরিচর্যা পরিষেবার মান উন্নত করতে হবে। এই উন্নতির জন্য বর্ধিত আর্থিক সংস্থান প্রয়োজন। অধিকন্তু, সরকারি সুযোগ-সুবিধাগুলোতে সহায়তা পরিষেবার উন্নতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আনুষ্ঠানিক ও বড় কর্পোরেশনের জন্য নিয়োগকর্তা-ভিত্তিক বীমা ঝুঁকি পুলিংয়ের উন্নতি করতে পারে। যদিও এটি গ্রামীণ-শহুরে বৈষম্যকে প্রসারিত করার ঝুঁকি রাখে। নীতিনির্ধারকদের অবশ্যই দারিদ্র্যসীমার ঠিক উপরে থাকা ব্যক্তিদের বিবেচনা করতে হবে ও খরচ কমাতে কৌশলগত ক্রয় করতে হবে। এই উদ্যোগগুলোর জন্যও উচ্চতর স্বাস্থ্য বাজেট প্রয়োজন।
প্রতিরোধমূলক যত্ন যা খরচ-কার্যকর ও ভবিষ্যৎ নিরাময়মূলক খরচ কমায় অবশ্যই অগ্রাধিকার দিতে হবে। সামগ্রিক স্বাস্থ্যসেবা খরচ কমাতে ও স্বাস্থ্যের ফলাফলের উন্নতির জন্য প্রতিরোধমূলক যত্নে বর্ধিত বিনিয়োগ অপরিহার্য। এছাড়াও মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা, জেরিয়াট্রিক পরিষেবাগুলোর মতো অনেক প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলো অন্তর্ভুক্ত করা। যা বর্তমান সিস্টেমে উল্লেখযোগ্যভাবে অনুপস্থিত আরও সংস্থানগুলোর প্রয়োজন হবে। তামাক সেবনের মতো অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস নিরুৎসাহিত করার জন্য নীতির সমন্বয় প্রয়োজন কর ও অ-কর উভয় ব্যবস্থা। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জটিলতা মানেই এর কোনো সহজ সমাধান নেই। সম্পদ বরাদ্দ অপ্টিমাইজ করতে সুশাসন সহ নীতিগুলো অবশ্যই প্রসঙ্গ-নির্দিষ্ট ও প্রমাণ-ভিত্তিক হতে হবে। যদিও একটি শক্তিশালী দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাৎক্ষণিক পদক্ষেপগুলো পকেটের বাইরের খরচগুলো উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে পারে ও স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত করতে পারে। এই প্রয়োজনীয় পরিবর্তনগুলো করার জন্য স্বাস্থ্য বাজেট বৃদ্ধি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আত্মতুষ্টির সময় শেষ। বাংলাদেশের জনগণের স্বাস্থ্যে বিনিয়োগ করার সময় এসেছে। নতুন পরিষেবা অন্তর্ভুক্ত করা ও যত্নের মান উন্নত করার জন্য সম্পদের প্রয়োজন। অতএব, স্বাস্থ্য বাজেট বাড়ানো কেবল একটি আর্থিক বাধ্যতামূলক নয়-এটি একটি নৈতিক বিষয়।
ংযধভরঁহ.রযব@ফঁ.ধপ.নফ অনুবাদ : জান্নাতুল ফেরদৌস। সূত্র : দি ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস
