
নিত্যপণ্যের দামে লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না সপ্তাহ ব্যবধানে বেড়েছে পেঁয়াজ, আদা ও আলুর দাম

মাসুদ মিয়া: [১] কোন ভাবে দেশের নিত্যপণ্যের দামে লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। ক্রেতারা বলছেন, দ্রব্যমূল্য বাড়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। দ্রব্যমূল্য নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। [২] নিত্যপণ্যের বাজার সকালে এক রকম- বিকেলে আরেক রকম পরের দিন আরেক রকম। যেসব পণ্যের দাম বাড়ার কথা নয়, সেইসব পণ্যেরও দাম বাড়ছে যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ ছাড়াই। এবার সিন্ডিকেট ভর করেছে পেয়াজ, আদাও আলু কমছে না কাচামরিচ,ও ডিমের দাম। একটার দাম কিছুটা কমছে তো বাড়ছে অন্যটার। এরই মধ্যে রাজধানীর বাজারে পেঁয়াজের দাম ঠেকেছে একশ টাকায়। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯৫ থেকে ১০০ টাকা দরে। আদা কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকা। এছাড়া আলুর দাম উঠেছে ৬৫ টাকা প্রতিকেজি, যা গত সপ্তাহের চেয়ে ৫ টাকা বেশি। কমেনি কাঁচা মরিচের ঝালও, বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে। আরও বেশকিছু নিত্যপণ্যের দাম এখনো চড়া।
[২] এমন পরিস্থিতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব পণ্য কিনতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতিতে নাজেহাল হয়ে পড়ছেন নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তরা। [৩] গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। এসব বাজারে গত সপ্তাহে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকায়। যা এক সপ্তাহ ব্যবধানে ৫-১০ টাকা বেড়েছে। খুচরা দোকানে বাছায় করা পেঁয়াজ এখন ১০০ টাকা কেজি দরেও বিক্রি হচ্ছে। এগুলো আকারে একটু বড়। সাধারণ মানের পেঁয়াজ ৯৫ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
[৪] বাজারে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের সরবরাহ কম। মাত্র অল্প কয়েকটি দোকানে আমদানি করা পেঁয়াজ দেখা গেছে। আমদানি করা পেঁয়াজও বিক্রি হচ্ছে একই দামে।
[৫] পেঁয়াজ বিক্রেতা নাজমুল বলেন, পেঁয়াজের মৌসুম (বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ) যত শেষের দিকে যাচ্ছে, দাম তত বাড়ছে। আগামীতে এ দাম কোথায় গিয়ে ঠেকবে সেটা বলা যাচ্ছে না।
[৬]রাজধানীর শ্যামবাজারের মসলা পণ্যের আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, ভারতে পেঁয়াজের দাম বেশি। যে কারণে বেশি দামে পেঁয়াজ কেনায় বেশি দামেই বিক্রি করতে হয়। পাশাপাশি ডলারের উচ্চমূল্যের কারণে আমদানি করা সব ধরনের মসলা পণ্যের দাম বেড়েছে। আমদনি পর্যায়ে দাম কিছুটা বাড়লেও খুচরা পর্যায়ে বিক্রেতারা অতিরিক্ত মুনাফা করার কারণে মসলা পণ্যের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে। অন্যদিকে বাজারে বেড়েছে আলুর দামও। গত সপ্তাহে খুচরায় ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও আজ শুক্রবার বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা কেজি দরে। তবে দরদাম করলে কোনো কোনো দোকানে ৬০ টাকায় মিলছে। মতিঝিল এজিবি কোলনী বাজারের দোকানিরা বলেন, ৬০ টাকায় আলু বিক্রি করলে কোনো লাভ থাকে না। কারণ, পাইকারি কেনায় পড়ছে ৫৮ টাকা কেজি দরে। বিক্রতারা বলেন, পাইকারি বাজারে আলুর দাম প্রায়ই ২/১ টাকা বাড়ছে। আসলে আলুর সংকট দেখা দেওয়ায় দাম বেড়েছে। মুন্সিগঞ্জ, রাজশাহী, রংপুরে আলুর খুব সংকট চলছে, পাওয়া যাচ্ছে না। এ বছর উৎপাদন কম হওয়ায় এ সমস্যা তৈরি হয়েছে।
[৭] মতিঝিল বাজারের কেনাকাটা করতে আসেন হাবিব বলেন, তিনদিন আগেও ৬০ টাকা কেজি দরে আলু কিনেছি। এখন ৬৫ টাকা চাচ্ছে। দামদর করে ৬২ টাকায় নিলাম।
[৮] তিনি আরও বলেন, আগে সংসারে খরচ কমানোর জন্য আলুই বেশি খেতাম। সেটারও যদি এত দাম হয়, খাবো কী এখন?
[৯] ঈদুল আজহার আগে আগেই এবার বেড়েছে কাঁচা মরিচের দাম। ওই দাম এখনো সেভাবে কমেনি। কোরবানির সময়ে ঢাকায় কাঁচা মরিচের কেজি ৩২০ থেকে ৩৬০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। কিছুটা কমে এখন বিক্রি হচ্ছে বাজারভেদে ২৬০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত।
[১০] যদিও বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ দিন দিন বাড়ছে। কয়েক দিনের মধ্যে কাঁচা মরিচের দাম আরও কমে আসবে। ঈদের সময় বৃষ্টি এবং ভারত থেকে আমদানি বন্ধ থাকায় কাঁচা মরিচের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছিল।
[১১] বাজারের বেশিরভাগ সবজি চড়া দামে আটকে রয়েছে। প্রতিকেজি ৬০ টাকার নিচে মিলছে না কিছু। ওই দামের মধ্যে আছে পটল, ঢ্যাঁড়স, কাঁচা পেঁপে। তবে কচুর লতি, বরবটি, কাঁকরোল বিক্রি হচ্ছে আরও ২০ টাকা বেশি দরে, অর্থাৎ ৮০ টাকার আশপাশে প্রতি কেজি। এছাড়া করলা ও বড় তালবেগুনের দাম ৯০ টাকা বা তার চেয়েও বেশি চাচ্ছেন বিক্রেতারা।
ভরা মৌসুমে বাজারে ইলিশের সরবরাহ বাড়লেও দামে খুব একটা স্বস্তি দেখা যায়নি। মতিঝিল বাজারে ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রাম আকারের ইলিশ প্রতি কেজি এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা এবং এক কেজির ইলিশ এক হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাক দাম হাঁকছেন বিক্রেতারা।
