
প্রত্যয় পেনশন ৩০ জুনের পর নিয়োগপ্রাপ্তদের জন্য প্রযোজ্য

বিশ্বজিৎ দত্ত: [২]জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য গোলাম মোস্তফা জানিয়েছেন, প্রত্যয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অহেতুক আন্দোলন করছেন। অন্যান্যর যারা এই পেনশন স্কিমে রয়েছেন তারা সবাই এটার সুবিধা বুঝতে পেরেছেন উনারাই শুধু বুঝতে পারছেন না।
[৩] পেনশন কর্মসূচি ‘প্রত্যয়’ প্রযোজ্য হবে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ), ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশসহ (আইসিবি) সব রাষ্ট্রমালিকানাধীন ও সরকারি ব্যাংক; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, সাধারণ বীমা করপোরেশনসহ সব করপোরেশন, পেট্রোবাংলা, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি), বিএসটিআইসহ প্রায় ৪০০ সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের নতুন কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য।
[৪] গোলাম মোস্তফা বলেন, ৩০জুন ২০২৪ সালের পরে যারা চাকুরিতে যোগদান করেছেন বা করবেন শুধু তারাই এই প্রত্যয় পেনশনের অন্তর্ভূক্ত হবেন। পুরোনোরা প্রত্যয় পেনশনের অন্তর্ভূক্ত নন। তারা আগের সিস্টেমেই পেনশন পাবেন।
[৫] পিআরএলের বিষয়ে তিনি বলেন, পিআরএল হয় চাকুরি জীবনের অর্জিত ছুটি থেকে। কারো যদি অর্জিত ছুটি থাকে তবে তিনি পিআরএল পাবেন। সেটাতো উল্লেখ করার কিছু নেই।
[৬] উৎসবভাতা, মাসিক চিকিৎসা ভাতা ও বৈশাখী ভাতার বিষয়ে প্রত্যয় পেনশন কর্মসূচিতে উল্লেখ করা হয়নি। কারণ এগুলো সবই পেনশনের সঙ্গে কনসোলেটেড করা আছে। আলাদাভাবে দেখানো হয়নি।
[৭]নতুন পেনশন ব্যবস্থায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সুবিধা ‘কমবে’। শিক্ষকেরা তাই নতুন ব্যবস্থাটি প্রত্যাহারের দাবি করছেন। এ দাবিতে গতকাল সোমবার থেকে সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
[৮] গতকাল চালু হচ্ছে সর্বজনীন পেনশনের কর্মসূচি ‘প্রত্যয়’। স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীন অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলোর চাকরিতে আজ ১ জুলাই থেকে যাঁরা যোগ দেবেন, তাঁদের জন্য এ কর্মসূচি প্রযোজ্য হবে।
[৯] সরকারের এই সিদ্ধান্তটিকে ‘বৈষম্যমূলক’ আখ্যা দিয়ে এর বিরোধিতা করে আসছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে।
[১০] কমিটির সদস্যরা হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর পিস অ্যান্ড লিবার্টির পরিচালক অধ্যাপক আবুল বারকাত, বিশ্ববিদ্যালয়টির অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান মাসুদা ইয়াসমীন, মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক মাসুদুর রহমান, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী এবং ফিন্যান্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সজীব হোসেন।
[১১] শিক্ষক কমিটির পর্যালোচনা প্রতিবেদন বলছে, নতুন পেনশন ব্যবস্থায় মাসে মাসে এখনকার চেয়ে ২ দশমিক ৭ গুণ টাকা বেশি পাওয়া গেলেও।এ জন্য শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন থেকে ১০ শতাংশ টাকা কাটা হবে। অবসরের পর কোনো এককালীন টাকা পাওয়া যাবে না, বছর বছর পেনশন বাড়বে না এবং পেনশনারের মনোনীত ব্যক্তি এখনকার মতো আজীবন পেনশন পাবেন না। আরও কয়েকটি সুবিধা না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে শিক্ষকেরা বলছেন, সব মিলিয়ে নতুন ব্যবস্থায় শিক্ষকদের সুবিধা কমে যাবে।
[১২]চারটি আলাদা কর্মসূচি (স্কিম) নিয়ে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার যাত্রা শুরু হয় গত বছরের ১৭ আগস্ট। এগুলো হলো প্রগতি, সুরক্ষা, প্রবাস ও সমতা। কর্মসূচিগুলোর আওতায় গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৩ লাখ ৩২ হাজার ৭৭৩ জন গ্রাহক হয়েছেন। জমা পড়েছে ৯৭ কোটি টাকা।
[১৩]বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন শিক্ষকেরা ৬৫, কর্মকর্তারা ৬২ ও কর্মচারীরা ৬০ বছর বয়স হলে অবসরে যান। নতুন ব্যবস্থায় ৬০ বছর বয়সের পর পেনশন পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকেরা এখন পেনশনের সঙ্গে বছরে দুটি উৎসব ভাতা ও একটি বৈশাখী ভাতা এবং মাসে মাসে চিকিৎসা ভাতা পান। নতুন ব্যবস্থায় বিষয়টি নিয়ে কিছু বলা নেই।
[১৪]দেশে এখন কার্যক্রমে থাকা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ৫৫টি। সেখানে শিক্ষক রয়েছেন ১৬ হাজারের কিছু বেশি। কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা ৩৪ হাজারের মতো।
