কুড়িগ্রাম গাইবান্ধায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি প্লাবিত হচ্ছে সিরাজগঞ্জ ও জামালপুর
শওকত আলী : কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। বানভাসি পরিবারগুলো বসতবাড়িতে বাঁশের মাচা, নৌকা ও কলাগাছের ভেলায় আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের তীব্র সংকট। বানভাসিদের অনেকেই গবাদি পশুসহ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। নদ-নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের ৪০টি ইউনিয়নের প্রায় দুই শতাধিক গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, এখন পর্যন্ত বানভাসিদের জন্য ৯ উপজেলায় ১৭৩ টন চাল ও ১০ লাখ টাকা বিতরণের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মজুত আছে ৬০০ টন চাল ও ৩০ লাখ টাকা, যা পর্যায়ক্রমে বিতরণ করা হবে।
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং অব্যাহত বৃষ্টিপাতের ফলে গাইবান্ধার সবগুলো নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে বন্যার কবলে পড়েছে জেলার সদর, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সুন্দরগঞ্জসহ চার উপজেলা। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে চার উপজেলার ২৪টি ইউনিয়নের অন্তত ২০ হাজার পরিবার। পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে আউশ ধান, পাট, ভুট্টা ও আমন বীজতলা। তলিয়ে গেছে পুকুর ও মাছের ঘের। গাইবান্ধার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখ পয়েন্টে ২৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৮৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পাহাড়ি ঢল ও মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি হু হু করে বাড়ছে। দ্রুতগতীতে পানি বাড়ায় বন্যা আশঙ্কে দিন কাটছে নদী পাড়ের মানুষের। শুক্রবার শহর রক্ষা হার্ড পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
পানি বৃদ্ধির সঙ্গে জেলার অভ্যান্তরীণ করতোয়া, ফুলজোড়, হুড়াসাগর ও চলনবিলের নদ নদীর পানি সমানতালে বেড়েই চলেছে। দ্রুত পানি বৃদ্ধির কারণে চরাঞ্চলের নিম্নভূমি তলিয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে যমুনার তীরবর্তী অঞ্চলে শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। ভারী বর্ষণ আর উজানের ঢলে জামালপুরে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। যমুনার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় তিন উপজেলার নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এতে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এদিকে দেওয়ানগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনসহ সরকারি অফিসে পানি ঢুকে পড়েছে। তবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ার গতি কিছুটা কমেছে।
শুক্রবার যমুনার বাহাদুরাবাদ ঘাটে বিপৎসীমার ৯৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয। তবে শুক্রবার সকাল থেকেই পানি বৃদ্ধি পাওয়ার গতি কমেছে।
দেওয়ানগঞ্জ ও ইসলামপুর উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চিকাজানী, চুকাইবাড়ী, বাহাদুরাবাদ ও পৌরসভা, ইসলামপুর উপজেলার চিনাডুলী, নোয়ারপাড়া, কুলকান্দি, পাথর্শী, সাপধরী, বেলগাছা, মেলান্দহ উপজেলার ঘোষেরপাড়া, আদ্রা, মাহমুদপুর, নাংলা, কুলিয়া এবং মাদারগঞ্জ উপজেলার চর পাকেরদহ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব ইউনিয়নের অন্তত ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। নদী তীরবর্তী চরাঞ্চলের বিভিন্ন ইউনিয়নের সঙ্গে উপজেলা শহরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।