দশ বছর পর ফের লোকসানে সরকার
সোহেল রহমান : [১] দীর্ঘ দশ বছর পর লাভ-লোকসান মিলিয়ে রাষ্ট্র্ায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো সার্বিকভাবে আবার লোকসানে পড়েছে। সদ্য সমাপ্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (২১ এপ্রিল ২০২৪ পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী) ৫০টি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের সার্বিক নীট লোকসান দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৪১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এর আগে ২০১২-১৩ অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো লাভ-লোকসান মিলিয়ে প্রায় ২ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা নীট লোকসান দিয়েছিল। এরপর ২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানগুলো লাভ-লোকসান মিলিয়ে সার্বিকভাবে মুনাফায় রয়েছে। সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বিক নীট মুনাফার পরিমাণ ছিল ১০৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।
[২] অর্থ বিভাগ-এর মনিটরিং সেল-এর হিসাবে, রাষ্ট্রায়ত্ত ৫০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে ৩৮টি প্রতিষ্ঠান-ই নীট মুনাফা অর্জন করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট নীট মুনাফার পরিমাণ ১৩ হাজার ৩৫৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। আর একই সময়ে অবশিষ্ট ১২টি প্রতিষ্ঠানের নীট লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৩৯৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ মাত্র ১২টি প্রতিষ্ঠানের নীট লোকসানের কারণে সার্বিকভাবে লোকসানে পড়েছে সরকার।
[৩] বাজেট উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, লোকসান দেয়া ১২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১১টি প্রতিষ্ঠান-ই এর আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরেও লোকসান দিয়েছিল। ওই অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানগুলোর নীট লোকসানের পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ৭২০ কোটি ৫২ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে লোকসানী ১১টি প্রতিষ্ঠানের মোট নীট লোকসান বেড়েছে ৩ হাজার ৬৭৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।
[৪] অর্থ বিভাগ-এর মনিটরিং সেল-এর তথ্যমতে, সমাপ্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে লোকসানী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছেÑ বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। দশ মাসে প্রতিষ্ঠানটির নীট লোকসান দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ১১৮ কোটি টাকা (২০২২-২৩ অর্থবছরে লোকসানের পরিমাণ ছিল ১১ হাজার ১৬৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা)। অর্থাৎ সমাপ্ত অর্থবছরে পিডিবি’র লোকসান প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা কমেছে।
[৫] লোকসানে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেÑ ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। দশ মাসে প্রতিষ্ঠানটির নীট লোকসান দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা (২০২২-২৩ অর্থবছরে লোকসানের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ১৩৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা)। অর্থাৎ সমাপ্ত অর্থবছরে টিসিবি’র লোকসান প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে।
[৬] লোকসানে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেÑ বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি)। দশ মাসে প্রতিষ্ঠানটির নীট লোকসান দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৪৯৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা (২০২২-২৩ অর্থবছরে লোকসানের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৫০৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা)। অর্থাৎ সমাপ্ত অর্থবছরে বিআরইবি’র লোকসান প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে।
[৭] লোকসানে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছেÑ বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেন (বিসিআইসি)।
দশ মাসে প্রতিষ্ঠানটির নীট লোকসান দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫০৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা (২০২২-২৩ অর্থবছরে লোকসানের পরিমাণ ছিল ৮৭৫ কোটি ৮ লাখ টাকা)। অর্থাৎ সমাপ্ত অর্থবছরে বিসিআইসি’র লোকসান প্রায় ৬২৫ কোটি টাকা বেড়েছে।
[৮] লোকসানে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছেÑ বিএসএফআইসি। দশ মাসে প্রতিষ্ঠানটির নীট লোকসান দাঁড়িয়েছে ৫৭১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা (২০২২-২৩ অর্থবছরে লোকসানের পরিমাণ ছিল ৫৩২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা)। অর্থাৎ সমাপ্ত অর্থবছরে বিসিআইসি’র লোকসান প্রায় ৩৮ কোটি টাকা বেড়েছে।
[৯] অন্যদিকে সদ্য সমাপ্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে নীট মুনাফা অর্জনকারী শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (মুনাফার পরিমাণ ৪ হাজার ৮৭৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা); বিবিএ ৩ হাজার ১৬৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা এবং সিপিএ ১ হাজার ৮৮১ কোটি ৩১ লাখ টাকা নীট মুনাফা অর্জন করেছে।