বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে পশ্চাদমুখী শিল্পে চীনের বিনিয়োগ জরুরি
অর্থনীতি ডেস্ক : [১] চীনের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের সুযোগ কাজে লাগাতে বাংলাদেশকে উৎপাদনমুখী শিল্পে তাদের বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে হবে এবং পণ্যের বহুমুখীকরণের ওপর জোর দিতে হবে। দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে চীনের বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশে পশ্চাদমুখী শিল্প গড়ে তুলতে হবে।
[২] চীন ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়ন বিষয়ে জাগো নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র্যাপিড) চেয়ারম্যান ড. এম এ রাজ্জাক এ কথা বলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন চিফ রিপোর্টার ও বিশেষ প্রতিনিধি ইব্রাহীম হোসাইন অভি।
[৩] চীনের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার থাকলেও তা পূর্ণরূপে আমরা কাজে লাগাতে পারছি না। বাংলাদেশ চীন থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণে পণ্য আমদানি করলেও আমাদের রপ্তানি সেখানে এখনও এক বিলিয়ন ডলার ছুঁতে পারেনি। বাংলাদেশের রপ্তানি চীনের বাজারে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছতে পারেনি। কারণ চীনের বাজারে যে ধরনের পণ্যের চাহিদা রয়েছে বাংলাদেশ সেই ধরনের পণ্য উৎপাদন করছে না অথবা যেটুকু করছে তা যথেষ্ট নয়। চীনের বাজারের শুল্কমুক্ত সুবিধা কাজে লাগাতে আমাদের বেশি মূল্যের পণ্য তৈরি, পণ্যের বহুমুখীকরণ এবং ক্রেতাকে আকর্ষণ করতে হবে।
[৪] চীনের বাজারে আমাদের প্রতিযোগী দেশ যেমন ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও অন্যান্য দেশ অনেক ভালো করেছে। তাদের তুলনায় আমাদের অবস্থান খুবই দুর্বল। যে সব দেশ চীনে রপ্তানির ক্ষেত্রে ভালো করেছে তাদের অধিকাংশই চীনের বিনিয়োগের মাধ্যমে করেছে।
[৫] চীনের বাজার অনেক বড়। তাদের চাহিদা ও পণ্যের ধরন সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে। এ ক্ষেত্রে চীনের বিনিয়োগের বিকল্প নেই। চীনের বিনিয়োগকারী তাদের বাজার সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখেন এবং পণ্য তৈরিতে দক্ষ। চীনের বিনিয়োগ বাড়লে ওদের সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে আমরা যুক্ত হব। ফলে আমাদের রপ্তানি বাড়বে এবং আমাদের সক্ষমতাও বাড়বে।
[৬] এর বাইরে আমাদের নতুন পণ্য যেমন সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন করলে আমরা অনেক দেশেই রপ্তানি করতে পারব। এক্ষেত্রে বিনিয়োগ এলে দুই ধরনের সুযোগ পাব। কারিগরি জ্ঞান পাব ও কর্মসংস্থান তৈরি হবে।
[৭] বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের অনেক সুযোগ রয়েছে। অন্যদিকে চীন বড় বিনিয়োগকারী। আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে বিনিয়োগের ধরন নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। ভূ-রাজনীতি ও রাজনৈতিক বিষয়ে প্রভাব ফেলতে পারে এমন ধরনের বিনিয়োগে সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। [৮] যেহেতু বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেকাংশেই রপ্তানি নির্ভর, তাই উৎপাদনমুখী শিল্পে বিনিয়োগ আকর্ষণ করাই উত্তম কাজ হবে। এতে এখানে বিনিয়োগ করে অন্য দেশে রপ্তানি করা যাবে অন্যদিকে বাংলাদেশ প্রযুক্তিগত জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে সুবিধা পাবে।
[৯] প্রযুক্তির প্রভাবে প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে আমাদের কর্মের ধরন। নতুন নতুন প্রযুক্তি যুক্ত হচ্ছে উৎপাদন ব্যবস্থায়। তাই প্রযুক্তির উন্নয়ন ও কর্মদক্ষতা বাড়ানোর প্রকল্পে বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে উদ্যোগ নিতে হবে। যেমন: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় (এআই) নতুন সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এখানে চীনের বিনিয়োগ আমাদের জন্য অনেক প্রয়োজনীয়। প্রযুক্তিগত সহায়তার মাধ্যমে আমাদের এ নতুন প্রযুক্তিকে উৎপাদন ব্যবস্থায় যুক্ত করতে হবে।
[১০] আমরা চীন থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রকল্পের জন্য তহবিল পাচ্ছি। এগুলো আমাদের অবকাঠামো উন্নয়নে অনেক সহায়তা করেছে। কিন্তু উন্নত অবকাঠামোর সুবিধা কাজে লাগাতে শুধু ঋণ নয়, আমাদের বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে হবে এবং যেখানে বিনিয়োগ বাড়ালে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে সেটার প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।
[১১] আমরা রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্যে আমদানি করি বেশি। কিন্তু আমাদের পশ্চাদমুখী শিল্প দুর্বল। তাই আমদানি নির্ভরতা থাকবে। আমরা যদি চীন থেকে আমদানি কমিয়ে দেই এবং অন্য দেশ থেকে আমদানি করতে চাই তাহলে ব্যবসার খরচ বাড়তে পারে। অন্যদিকে রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তাই আমদানি কমানো জরুরি নয় বরং রপ্তানি বাড়ানোর প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।
[১২] অন্যদিকে চীনের বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশে পশ্চাদমুখী শিল্প গড়ে তুলতে হবে। এতে দুই ধরনের লাভ হবে। আমরা দেশীয় উৎস থেকে কাঁচামাল পাব এবং এখান থেকে রপ্তানি করলে আমাদের রপ্তানি আয় বাড়বে। কর্মসংস্থান তৈরি হবে এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হবে।
[১৩] যদি বড় ধরনের বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারি তাহলে রপ্তানি বৃদ্ধির মাধ্যমে কিছুটা হলেও বাণিজ্য ঘাটতি দূর করা সম্ভব হবে। সুতরাং আমরা যদি দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়ন ও বন্ধুত্ব বাড়াতে পারি তাহলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নতুন উচ্চতায় যাবে। সূত্র : জাগোনিউজ২৪