
দুর্দিন কাটিয়ে সুদিনে ফেরার ইঙ্গিত দিচ্ছে শেয়ারবাজার

মাসুদ মিয়া: [১] দেশের শেয়ারবাজার গতকাল সপ্তাহের দ্বিতীয় কর্মদিবস সোমবার শেয়ারবাজারে উত্থান-পতনের বড় চমক দেখা গেছে। এদিন লেনদেনের শুরুতে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচকে কিছুটা নেতিবাচক প্রবণতা দেখা গেলেও দিনের শেষে সামান্য উত্থানের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। [২] গতকাল লেনদেনের শুরুর ৬ মিনিটের মাথায় বাজার হঠাৎ করে নেতিবাচক প্রবণতায় টার্ন নেয়। তবে কিছুক্ষণ পরই নেতিবাচক প্রবণতা কাটিয়ে আবার ইতিবাচক প্রবণতায় ফেরে। লেনদেনের ২৬ মিনিটের মাথায় ডিএসইর সূচক ২৬ পয়েন্ট বেড়ে লেনদেন হয়।
[৩] বাজারে এই সময়ে বিনিয়োগকারীদের মুনাফা তোলার চাপ দেখা যায়। ফলেবাড়তে থাকে সেল প্রেসার। ধারাবাহিকভাবে সেল প্রেসারে বাজার দ্রুত নামতে থাকে। দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে ডিএসইর সূচক ৩৮ পয়েন্ট মাইনাস হয়ে যায়। এই সময়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা শঙ্কা তৈরি হয়। তবে বড় বিনিয়োগকারীদের বাই প্রেসার বাড়তে থাকলে সূচকের মাইনাস কমতে থাকে। এক পর্যায়ে বাজার আবার উত্থানের দিকে মোড় নেয়। এভাবে উত্থান পতনের স্বাভাবিক ধারা চলতে থাকে। দিন শেষ বেলায় বাজার অল্প কিছু ইতিবাচক রেখে দিনের লেনদেন শেষ করে। [৪] এবিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুই কারণে বাজারে বড় উত্থান ও পতনের চিত্র দেখা গেছে। প্রথমত, তিন-চার দিন আগে যারা শেয়ার কিনেছিলেন, তারা অনেক শেয়ারে মুনাফায় ছিলেন। মুনাফা তোলার প্রবণতায় বাজার কিছুটা চাপে থাকে।
[৫] এদিকে বাজার সংশ্লিষ্টরা আরও বলেন, দুর্দিন কাটিয়ে সুদিনে ফেরার ইঙ্গিত দিচ্ছে দেশের শেয়ারবাজার। ঈদের পর লেনদেন হওয়া ১২ কার্যদিবসের মধ্যে ১০ কার্যদিবসেই লেনদেন ঊর্ধ্বমুখী। এতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। অবশ্য ঈদের আগে তিন মাসের টানা দরপতনে ডিএসইর বাজার মূলধন ১ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকার ওপরে কমে যায়। ফলে বিনিয়োগকারীরা এখনো বড় ধরনের লোকসানের মধ্যেই আছেন। কয়েকটি কারণে ঈদের পর শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে অযাচিত হস্তক্ষেপ করা না হলে এবং অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের কোনো নেতিবাচক সংবাদ না এলে ধীরে ধীরে বাজার শক্ত অবস্থানে চলে আসবে। অবশ্য ঈদের পর ঊর্ধ্বমুখী বাজারেও খুব বেশি সন্তুষ্ট হতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা। তারা বলছেন, এর আগেও কয়েক দফায় বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে বাজার পতনের বৃত্তেই আটকে থেকেছে। ফলে বাজার ঊর্ধ্বমুখী হবে এ আশায় নিয়োগকারীরা নতুন বিনিয়োগ করে আরও লোকসানের মধ্যে পড়েছেন। ঈদের পর বাজার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হলেও অধিকাংশ বিনিয়োগকারী এখনো বড় লোকসানের মধ্যে আছেন। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে এখনো ৫০-৬০ শতাংশ বিনিয়োগকারী লোকসানে।
[৬] ঈদের আগে শেয়ারবাজারে অব্যাহত দরপতন হলেও, ঈদের পর ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দেওয়ার কারণ হিসেবে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেয়ারবাজারে সরকারি কর্মকর্তাদের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যে প্রতিবন্ধকতা ছিল, তা দূর হচ্ছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। একই সঙ্গে টেকনো ড্রাগের প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) আবেদনে জমা পড়া অর্থ বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবে ফিরে এসেছে। সেই অর্থ এখন বিনিয়োগ হচ্ছে বাজারে। তারা বলছেন, অব্যাহত দরপতনের কারণে বাজারে সব খাতের প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম অস্বাভাবিক হারে কমে যায়। ভালো ভালো কোম্পানির শেয়ার দাম এখন অবমূল্যায়িত অবস্থায় রয়েছে। এখন থেকে বাজার ঘুরে দাঁড়ানোটাই স্বাভাবিক।
[৭] গতকাল লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ১৬৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ১৯৭টির আর ৩৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এরপরও ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৫ পয়েন্ট বেড়ে পাঁচ হাজার ৫৬৪ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় দশমিক ৩১ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ২১৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৪ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৯৫৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
এদিকে, দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৮৮৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৯০৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ২০ কোটি ২০ লাখ টাকা।
এ লেনদেনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে সি পার্ল বিচ রিসোর্টের শেয়ার। কোম্পানিটির ৩৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ফারইস্ট নিটিংয়ের ২৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ২৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ওরিয়ন ফার্মা।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, বিচ হ্যাচারি, আফতাব অটোমোবাইল, স্যালভো কেমিক্যাল, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স।
অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৮১ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৭৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৪৪টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১১০টির এবং ২৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১৭৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
