বেইজিংয়ে চীনের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী জ্বালানি, অবকাঠামো ও লজিস্টিকসহ নয় খাতে চীনা বিনিয়োগের আহবান
সোহেল রহমান : [১] বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ জ্বালানি, অবকাঠামো ও লজিস্টিক খাতে চীনা ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় আইসিটি, পর্যটন, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সবুজ প্রযুক্তি ও উন্নয়ন খাতে বৃহত্তর পরিমাণে বিনিয়োগের পাশাপাশি বাংলাদেশে পোর্টফোলিও বিনিয়োগ অন্বেষনের জন্যও চীনা উদ্যোক্তা এবং বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
[২] বেইজিংয়ে চারদিনের দ্বি-পাক্ষিক সফরের দ্বিতীয় দিনে ‘বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য, ব্যবসা এবং বিনিয়োগের সুযোগ’ শীর্ষক এক শীর্ষ সম্মেলনে বক্তৃতাকালে তিনি এমন আহবান জানান। বেইজিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস, বিআইডিএ, বিএসইসি এবং সিসিপিআইটি চায়না ওয়ার্ল্ড সামিট উইং, শাংরি-লা সার্কেল, বেইজিং-এ এই সম্মেলনের আয়োজন করে। [৩] বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মূল খাতগুলো বিবেচনার জন্য চীনা ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে উদার বিনিয়োগ ব্যবস্থার সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশে এখন বিনিয়োগের সময় এবং আমরা বিশ্বাস করি বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগের উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের তরুণ উদ্যোক্তারা বিশ্ব মঞ্চে তাদের অবস্থান তৈরি করছে এবং আমরা আপনাদের এই আকর্ষণীয় যাত্রার শরিক হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আমি আত্মবিশ্বাসী যে, আমাদের হাতে হাত মিলিয়ে একসাথে আমরা দুর্দান্ত কিছু অর্জন করতে পারি।
[৪] প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও চীনের দ্বি-পাক্ষিক সহযোগিতা ও পারস্পরিক সমর্থনের দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে। এই অনুষ্ঠান বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে শক্তিশালী ও স্থায়ী বন্ধুত্বের প্রকাশ।
[৫] প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু-সহনশীল স্মার্ট ফার্মিং চীনের সঙ্গে ক্রয়-ব্যাক ব্যবস্থাসহ কৃষি-প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে সহযোগিতার সুযোগ উন্মুক্ত করেছে। তারা তিনটি বিশেষ পর্যটন অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেছে, যেখানে চীন রিয়েল এস্টেট এবং আতিথেয়তা খাতে বিনিয়োগ করতে পারে।
[৬] পোর্টফোলিও বিনিয়োগ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার লক্ষ্যে পুঁজিবাজারের আরও উন্নয়নে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
[৭] তিনি বলেন, এছাড়া আমরা একটি শক্তিশালী বন্ড বাজার বিকাশে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছি। আমরা ডেরিভেটিভ পণ্য প্রবর্তনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছি, যা আমাদের আর্থিক বাজারকে আরও বৈচিত্র ও প্রসারিত করবে।
[৮] বাংলাদেশে বিনিয়োগের যুক্তি ব্যাখ্যা করে চীনা ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, দেশটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পথের সাথে সরাসরি সংযোগ রয়েছে। আমরা দক্ষিণ এশীয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় এবং পূর্ব এশীয় প্রবৃদ্ধি সার্কিটের সংযোগস্থলে রয়েছি। আমাদের সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর এবং স্থল পথগুলোকে আন্তর্জাতিক মান পূরণের জন্য ক্রমাগত উন্নীত, দক্ষ এবং নির্বিঘ্ন লজিস্টিক নিশ্চিত করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ১শ’টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এস্ইজেডএস) প্রতিষ্ঠা করেছে। প্রতিটি অঞ্চল অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে সজ্জিত। পাশাপাশি সরকার ব্যবসায়িক কাজকর্মকে আরো সহজ করে তুলতে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এছাড়া বাংলাদেশের বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার এবং এর সংলগ্ন বাজারসমূহে সমগ্র অঞ্চলের জন্য অফুরন্ত সুযোগ রয়েছে। সব মিলিয়ে বিনিয়োগকারীদের ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে লাভজনক করতে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
[৯] প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ডিজিটাল যুগকে উন্মুক্ত বাহুতে আলিঙ্গন করছে। বর্তমান সরকার সক্রিয়ভাবে আইসিটি খাতের প্রবৃদ্ধি জোরদার করছে, স্টার্ট-আপদের জন্য প্রণোদনা দিচ্ছে, টেক পার্কে বিনিয়োগ করছে এবং উদ্ভাবনা ও উদ্যোক্তাকে উৎসাহিত করে এমন একটি ইকোসিস্টেম গড়ে তুলছে।