কল্লোল মোস্তফা
কর্তৃত্ববাদী নেতৃত্বের হাতে দুর্নীতি বিরোধী অভিযান প্রায়শই ক্ষমতা সংহত করা এবং দেশে বিদেশে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার কাজে ব্যবহৃত হয়। এসব দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে যদি কিছু ঘূষ দুর্নীতি দমন হয়ও, তবে তা এই ব্যবস্থার আদি পাপের তুলনায় কিছুই না। আর কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থায় এই আদি পাপ হলো: রাজনৈতিক ক্ষমতার একচেটিয়াকরণ। কর্তৃত্ববাদী সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যেই দুর্নীতির অবস্থান।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক নেতৃত্বকে তুলনামূলক বড় আকারের বিভিন্ন গোষ্ঠির(যেমন: ভোটার) আনুগত্য নিশ্চিত করতে হয়। এ কারণে আনুগত্য অর্জনের জন্য তাদেরকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি বিভিন্ন খাতে ব্যয় করতে হয়। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মতো গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতির কারণে এসব বিষয়ে রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে জনগণের মন জয়ের জন্য প্রতিযোগীতার পরিবেশ তৈরী হয়।
অন্যদিকে কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থায় রাজনৈতিক নেতৃত্বকে তুলনামূলক ছোট কিছু গোষ্ঠীকে সন্তুষ্ট রাখলেই হয়। ফলে কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থায় এসব গোষ্ঠিকে খুশী রাখতে বাড়ি, গাড়ি, অর্থ, রাষ্ট্রীয় সম্পদ, পদন্নোতি কিংবা রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার মতো বিভিন্ন ব্যক্তিগত সুবিধাদি বন্টনের ঘটনা ঘটে। বেশির ভাগ মানুষের কাছে এগুলো হলো ঘুষ কিন্তু মুক্ত গণমাধ্যম ও সোচ্চার নাগরিক সমাজের অনুপস্থিতিতে কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থায় এসব ঘটনা খুব কমই আলোর মুখ দেখে বা বিচারের সম্মুখীন হয়।
কর্তৃত্ববাদী নেতৃত্বকে কিন্তু আবার তার প্রয়োজনীয় সমর্থকগোষ্ঠীর আকার ছোট রাখতে হয় কারণ অন্য যে কোন ব্যক্তিগত সুবিধাদির মতো ঘুষের পরিমাণ সসীম। সময়ের সাথে সাথে এই গোষ্ঠীগুলো বড় হতে থাকে, ফলে মাঝে মাঝে এগুলো ছোট করতে হয়। আর এই কাজটি করবার সবচেয়ে আদর্শ উপায় হলো দুর্নীতিবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা যার মাধ্যমে দেশের জনগণ ও বিদেশী পর্যবেক্ষকদের কাছে দুর্নীতিগ্রস্থ কর্তৃত্ববাদী নেতৃত্বকে জনগণের সামনে প্রকৃত সংস্কারকামী হিসেবে হাজির করবার বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়।
[ঈষধু জ. ঋঁষষবৎ রচিত অঁঃযড়ৎরঃধৎরধহ ধহঃরপড়ৎৎঁঢ়ঃরড়হ পধসঢ়ধরমহং: অ ঃড়ড়ষ ঃড় পড়হংড়ষরফধঃব ঢ়ড়বিৎ শীর্ষক লেখা অবলম্বনে।]