
গ্যাস সংযোগ পাচ্ছেন না চট্টগ্রামের ২৫ হাজার গ্রাহক
অর্থনীতি ডেস্ক : [১] জামানত ও সংযোগ ফি জমা দেওয়ার পরও চট্টগ্রামের প্রায় ২৫ হাজার গ্রাহক (আবাসিক) গ্যাস পাচ্ছেন না। প্রায় ১০ বছর ধরে তাদের অপেক্ষায় রেখেছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)। এই গ্রাহকদের গ্যাস সংযোগ দেওয়ার জন্য বারবার দাবি-আন্দোলন হলেও কেজিডিসিএলের কর্মকর্তারা যেন আছেন ঘুমে [২] কেজিডিসিএল ঠিকাদার কল্যাণ সমিতি গ্রাহককে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার দাবিতে নিয়মিত আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে আসছে। এই সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেজিডিসিএল ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে আবাসিক গ্যাস সংযোগ প্রদান শুরু করলেও ২০১৫ সালের শেষের দিকে নতুন ও বর্ধিত সংযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়। যা এখন পর্যন্ত চালু হয়নি। এই সময়ে প্রায় ২৫ হাজার গ্রাহক গ্যাস সংযোগ পেতে ডিমান্ডনোট অন্যান্য সব খরচসহ প্রায় ৩০ কোটি টাকা কেজিডিসিএলকে দিয়েছে। ২০১৩ ও ১৪ সালের মধ্যেই এসব গ্রাহক যাবতীয় ফি জমা দিয়েছেন। কিন্তু এর প্রায় এক দশক কেটে গেলেও তাঁরা পাননি গ্যাস, ফেরত পাননি জমা দেওয়া টাকাও। [৩] এদিকে আবাসিকে গ্যাস সংযোগ না দেওয়ায় একদিকে যেমন দুর্ঘটনা ঘটছে, তেমনি গ্রাহকেরাও পড়েছেন হয়রানি-ভোগান্তিতে। শুধু গ্রাহকেরা নন, বিনা নোটিশে গ্যাস-সংযোগ বন্ধ রাখায় চট্টগ্রামের প্রায় পাঁচশ ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট কয়েক হাজার ব্যক্তি বেকার হয়ে পড়েছেন। তারা এখন পরিবার নিয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন।
[৪] অথচ ২০১৪ সালের ১৮ আগস্ট প্রকাশিত সরকারি গেজেট নোটিফিকেশন অনুযায়ী, গ্রাহক ও কর্ণফুলী গ্যাস কর্তৃপক্ষের মধ্যে গ্যাস-সংযোগের চুক্তি হওয়ার ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে সার্ভিস লাইন তৈরি করে সংযোগ দিতে হবে। কিন্তু কর্ণফুলী গ্যাসের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর অবহেলা ও যোগসাজশের কারণে চট্টগ্রাম অঞ্চলের ২৫ হাজার গ্রাহক গ্যাস-সংযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন কেজিডিসিএল ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির নেতারা।
[৫] গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে আরও একবার বিষয়টি সবার সামনে তুলে ধরেছেন কেজিডিসিএল ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির নেতারা। তারা দ্রুত ২৫ হাজার গ্রাহককে গ্যাস-সংযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে কেজিডিসিএলের অসহযোগিতা কারণে গ্যাস সংযোগ সংক্রান্ত বিভিন্ন নথি প্রক্রিয়ার নানাবিধ প্রতিকুলতা এবং গ্রাহক সেবা প্রদানে হয়রানি ও জটিলতা নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।
[৬] একটি মহল ঈর্ষান্বিত হয়ে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা সৃষ্টি করেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. ইকরাম চৌধুরী। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে বিভিন্ন ধরনের আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর শিল্প কারখানা স্থাপিত হওয়ায় একটি মহল ঈর্ষান্বিত হয়ে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা সৃষ্টি করেছে। এই অঞ্চলে আবেদনকৃত অনেক শিল্প কারখানা নতুন সংযোগ প্রদান লোড বর্ধিতকরণসহ নানাবিধ কার্যক্রম এক প্রকার বন্ধ করে দিয়েছে। শিল্পবান্ধব বর্তমান সরকার শিল্প কারখানা নতুন করে স্থাপন করার নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। বিশেষ করে মিরসরাই অঞ্চলে বাংলাদেশ বৃহত্তম শিল্প জোন, বঙ্গবন্ধু ইকোনমিক জোন, আনোয়ারা কোরিয়ান ইপিজেড, চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চল।
[৭] কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে শিল্প কারখানা গ্যাস সংযোগ প্রদানে বিড়ম্বনা শেষ হচ্ছে না। আবাসিক এলাকায় তো গ্যাস সংযোগ ব্যহত হচ্ছেই। আবাসিকে গ্যাস না পাওয়ায় এলপি গ্যাসের কারণে ঘটা দুর্ঘটনার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মো. ইকরাম চৌধুরী বলেন, প্রায় সময় আমরা দেখতে পাচ্ছি সিলিন্ডার বিস্ফোরণে অনেক লোক মৃত্যুবরণ করছেন। এতে করে ওই পরিবারগুলো চিরদিনের জন্য শেষ হয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য প্রাকৃতিক গ্যাসের বিকল্প নেই। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে আবাসিক গ্রাহকদের গ্যাস সংযোগ প্রদান করা প্রয়োজন।
[৮] কেজিডিসিএলে কর্মকর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন সমিতির নেতারা। তারা বলেন, শিল্প শ্রেণির গ্যাস সংযোগ ও অন্যন্য কার্যক্রম যেমন বর্ধিত সংযোগ, গ্যাস সরঞ্জাম পুন:বিন্যাস, স্থাপিত শিল্প ও বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান স্থানান্তর কেজিডিসিএলের বোর্ড সভার ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু কেজিডিসিএলের বোর্ড চেয়ারম্যান হচ্ছেন জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সচীব, তিনি অত্যান্ত ব্যস্ত থাকেন বলে নিয়মিত বোর্ড সভায় আবেদনকৃত গ্রাহকদের নথি প্রক্রিয়াকরন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। দীর্ঘদিন যাবত কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে দফায় দফায় মতবিনিময় করেও কোনো ধরণের প্রতিকার পাচ্ছি না।
[৯] সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন কেজিডিসিএল ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল হাই, সিনিয়র সহসভাপতি নাজমুল হোসেন চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন পাটোয়ারী প্রমুখ।
[১০] তবে টাকা দেওয়ার পরও কেন এত বছরে ২৫ হাজার গ্রাহককে গ্যাস দেওয়া হচ্ছে না সেটি জানতে যোগাযোগ করা হলেও কেজিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌ. মো. আবু সাকলায়েনকে পাওয়া যায়নি। সূত্র : বার্তা২৪
