২৮ ঘণ্টায় ১০ বার লোডশেডিং! এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চায় টেক্সটাইল শিল্প
অর্থনীতি ডেস্ক : [১] লোডশেডিং এখন এতটাই সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে যে প্রায় সকলেই একে নিয়মিত ঘটনা বলেই ধরে নিয়েছেন। তবুও একদিনে কয়বার হতে পারে লোডশেডিং একবার, দুইবার বা চারবার কিন্তু, যদি তা হয় ২৮ ঘন্টার মধ্যেই ১০ বার? তাও আবার শিল্প প্রতিষ্ঠানে? [২] সাম্প্রতিক সময়ে যখন লোডশেডিংয়ের তীব্রতা বেড়েছে, তখন এই বিদ্যুৎহীনতা কয়বার ঘটছে এবং সেকারণে কয়বার তার কারখানার ইউনিটগুলো পুনরায় চালু করতে হচ্ছে তার হিসাব রাখতে শুরু করেন নারায়ণগঞ্জের এনজেড অ্যাপারেল লিমিটেডের ব্যবস্থাপক। কারণ লোডশেডিংয়ের পরে কারখানার যন্ত্রপাতি চালু করতেও অনেকটা সময় লাগে। তাতেও নষ্ট হয় উৎপাদন ঘণ্টা।
[৩] গত ৬ জুলাই তাদের টেক্সটাইল কারখানাগুলোয় ২৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিটি গড়ে এক ঘণ্টা করে স্থায়ী ১০ বার লোডশেডিং হওয়ার হিসাব রেখেছেন তিনি। যা শুরু হয় সকাল ১১টা থেকে। [৪] এই পর্যবেক্ষণের তথ্য নিজেদের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে শেয়ার করেছেন এই কারখানা মালিক। ওই ম্যাসেজের স্ক্রিনশট হাতে এসেছে। [৫] কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালেউধ জামান খান টিবিএসকে বলেন, ঘন ঘন লোডশেডিং আমাদের প্রায় ১৫ ধরনের দামি ও উন্নত যন্ত্রপাতি ও বৈদ্যুতিক কম্পোনেন্ট নষ্ট করছে, এতে প্রতি মাসে প্রায় ৪ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। এসব মেশিন বাংলাদেশে সহজে পাওয়া যায় না, আবার আমদানি করতেও অনেক সময় লাগে। এতে উৎপাদন কাজ বন্ধ রাখতে হচ্ছে, ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি মেটাতেও দেরী হচ্ছে। [৬] ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে এই ব্যবসায়ী, যিনি বাংলাদেশের বস্ত্রকল মালিকদের সমিতি বিটিএমএ’র-ও সভাপতি বলেন, পাওয়ার কাটের কারণে গত মাসে আমার উৎপাদনের ক্ষতি ছয় কোটি টাকার বেশি হয়েছে। তিনি জানান, উৎপাদন এভাবে ব্যাহত হওয়ায় ক্রেতাদের চালান পাঠাতেও বিলম্বের সম্মুখীন হচ্ছেন, ফলে কীভাবে শ্রমিকদের বেতন ও ব্যাংক ঋণের কিস্তি পরিশোধ করবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
[৭] এই বস্ত্রকল মালিক উল্লেখ করেন, চলমান বিদ্যুৎ সংকট এরমধ্যেই তার কারখানার উৎপাদনকে মোট সক্ষমতার ৪০ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। গত দুদিনে যেমন হয়েছে তেমন অবস্থাই যদি চলতে থাকে, তবে উৎপাদনের আরও পতন হবে।
[৮] এমন অবস্থা কেবল এনজেড অ্যাপারেলসের-ই নয়। গাজীপুর, সাভার, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও মানিকগঞ্জের শিল্পগুলোও গ্যাস ও বিদ্যুতের তীব্র সংকটে জর্জরিত।
[৯] বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন-বিটিএমএ’র ১,৭০০-র বেশি বস্ত্রকলের প্রতিনিধিত্ব করছে। সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, তাদের সদস্য কারখানাগুলোর উৎপাদন গড়ে ৪০ শতাংশ কমে গেছে।
[১০] শিল্পখাতের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, টেক্সটাইল শিল্পের মধ্যে স্পিনিং, ডাইং, প্রিন্টিং ইউনিটগুলো গ্যাস সরবরাহের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। একইভাবে সিরামিক, ইস্পাতসহ গ্যাসের ওপর অনেকাংশে [১১] নির্ভরশীল অন্যান্য শিল্প কারখানাও একইরকম প্রতিকূলতার মধ্যে রয়েছে। এসব সমস্যার মধ্যেও বিদ্যমান বিদ্যুৎ সরবরাহের ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল হয়ে উৎপাদন চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন উদ্যোক্তারা।
[১২] রাজধানীর উপকণ্ঠে সাভারের লিটল স্টার স্পিনিং মিলের কথাই ধরা যাক। গত রোববার সকাল ৯টা থেকে শুরু করে ছয় ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সম্মুখীন হয় এ কারখানা, যা পরবর্তীতে ১২ ঘন্টাব্যাপী স্থায়ী হয়। সারাদিনে গ্যাসের চাপ প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে (পিএসআই) ছিল মাত্র ১.৫ পাউন্ড, যা স্ট্যান্ডার্ড ১০ পিএসআইয়ের অনেক নিচে।
[১৩] একইদিন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম বস্ত্রকল মালিকদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে একটি ম্যাসেজ শেয়ার করেন, সেটিও সংগ্রহ করেছে টিবিএস। ওই ম্যাসেজে তিনি লিখেছেন, আমাদের মিলের ৫৪ হাজার স্পিন্ডলের মধ্যে মাত্র ৫ হাজার চালু রয়েছে। সূত্র : টিবিএস