পুলিশী বাধা উপক্ষো করে দেশের বিভিন্নস্থানে সড়ক অবরোধ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের
আমিনুল ইসলাম : [১] কোটা সংস্কারের দাবিতে ব্লকেড কর্মসূচি পালনে রাজধানীর শাহবাগ, ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক, বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙ্গে সড়ক অবরোধ করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া ঢাকায় শেরে বাংলা কৃষি বিশ^বিদ্যালয় এবং কুমিল্লায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়।
[২] বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৩টার সময় ব্লকেড কর্মসূচি শুরু করার কথা থাকলেও বিকেল ৫টার দিকে মিছিল নিয়ে শাহবাগ অভিমুখে আসে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা। এর আগে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তবে জননিরাপত্তা নিশ্চিতের কথা জানিয়ে সেখানে সতর্ক অবস্থানে ছিল পুলিশ। ছাত্ররা সেই ব্যারিকেড ভেঙে সামনে এগিয়ে যায়। তবে এসময় পুলিশ কোনো আক্রমণ করেনি।
[৩] এদিকে, বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার কোটবাড়ি বিশ্বরোড এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের ব্লকেড কর্মসূচি ঘিরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এই সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ, সাংবাদিক, শিক্ষার্থীসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। তাদের কয়েকজনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা যায়।
[৪] সব ধরনের কোটা সংস্কারের দাবিতে পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গ্রন্থাগার থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রধান ফটকের (ডেইরি গেই) তালা ভেঙে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন। আন্দোলনকারীরা জানান, সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে কোটা সংস্কারের সুস্পষ্ট নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
[৫] বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও জাবি শিক্ষার্থী আরিফ সোহেল বলেন, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আমাদের অবরোধ কর্মসূচি চলবে। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে আমরা আমাদের কর্মসূচি চলমান রাখব। আশাকরি, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে সহযোগিতা করবেন।
[৬] কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে এ মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সাইমুম হোসেন বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে মহাসড়ক অবরোধ করতে নিষেধ করা হয়েছিল। আমাদের সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু পরে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী কর্মসূচিতে অংশ নিলে পুলিশ সরে যায়।
[৭] অন্যদিকে পুলিশের বাধায় নীলক্ষেত-সায়েন্সল্যাবে পণ্ড হয়ে গেছে ‘বাংলা ব্লকেড’। পুলিশের বাধায় বৃহস্পতিবার রাজধানীর সায়েন্সল্যাব মোড় এবং নীলক্ষেত কোথাও দাঁড়াতে পারেননি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা।
[৮] উল্লেখ্য, কোটা বাতিলের দাবিতে গত ১ জুলাই আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। এরপর গত ৭ জুলাই থেকে বাংলা ব্লকেড নামে এই অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়। যদিও বুধবার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর এক মাসের স্থিতাবস্থা জারি করে আপিল বিভাগ। এ আদেশের ফলে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র বহাল থাকছে। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। তবে শিক্ষার্থীরা আপিল বিভাগের এই আদেশ প্রত্যাখ্যান করে সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে সুস্পষ্ট নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এরপর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা বৃহস্পতিবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন রাস্তায় অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়।