
টাঙ্গাইলের ৭২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ
শাহীন খন্দকার : [২] রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রামের ১৬টি নদ-নদীর পানি গত দুদিন ধরে কিছুটা কমলেও আবার বৃদ্ধি হচ্ছে। ফলে জেলার নয়টি উপজেলার ৫৫টি ইউনিয়ণের প্রায় ২ লাখ পানিবন্দি মানুষের দূর্ভোগ বেড়েছে। এদের মধ্যে শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানি আর গবাদিপশুর তীব্র খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। তবে জেলা প্রশাসন থেকে ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম চলমান থাকলে গো খাদ্য সংকট নিয়ে দুঃশ্চিন্তা আছে বানভাসিরা।
[৩] গতকাল বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) সকালে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, নদ-নদীর পানি সমতলে কিছুটা হ্রাস পেলেও ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৫৮ সেন্টিমিটার, হাতিয়া পয়েন্টে ৩২ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ৩৪ সেন্টিমিটার এবং ধরলার পানি ৭ সেন্টিমিটার ও দুধকুমারের পানি ৩ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
[৪] স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত ১০ দিন ধরে জেলার ৯ উপজেলার দুই লাখ পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। রাস্তাঘাট তলিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। কয়েকদিনের বন্যায় নাগেশ্বরী উপজেলার ২ টি বাঁধ ভেঙে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। চর দ্বীপ চর ও নিম্নাঞ্চলের মানুষের ঘরে চাল ডাল থাকার পরেও রান্না করে খেতে পারছেন না। ফলে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন বানভাসি মানুষগুলো।
[৫]এদিকে ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইল জেলায় বন্যার কারণে টাঙ্গাইলের ৭২ প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। বন্যার পানি সরে গেলে দ্রুতই শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। টাঙ্গাইল প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে ছয়টি উপজেলা বন্যা কবলিত। এর মধ্যে তিন উপজেলার ৭২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণি কক্ষে ও অঙিনায় পানি থাকায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
[৬] সদর উপজেলায় ২৬টি ও ভুঞাপুর উপজেলায় ১৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। এছাড়া সদর উপজেলায় ১১টি, বাসাইল উপজেলায় চারটি, ভুঞাপুর উপজেলায় আটটি ও কালিহাতী উপজেলায় নয়টি মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
ভুঞাপুর উপজেলার চরভদ্রশিমুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীরা জানিয়েছে, আমাদের স্কুলে রুমের ভেতর পানি উঠেছে। তাই স্যার আমাদের স্কুলে যাইতে নিষেধ করছে। স্যারেরা রুমের পানি শুকাইলে যাইতে বলছে।
[৭] ভুঞাপুর উপজেলার ভাইসচেয়ারম্যান বাবু বলেন, ভুঞাপুর উপজেলার চারিপাশ যমুনা নদীঘেষা ফলে এই উপজেলা বন্যায় বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়, শিক্ষা থেকে আবাদীজমি এবং বসতী বাড়ির। প্রতিটি ইউনিয়নের প্রায় পুরোটাই পানিতে তলিয়ে আছে, দু’একটি ইউনিয়ণ ছাড়া। এখানকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পানি উঠেছে। তাই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
[৮]এব্যাপারে টাঙ্গাইল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুব্রত কুমার বণিক বলেন, স্কুল খোলা থাকলেও শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে। এ বিষয় টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) এ এম জহিরুল হায়াত জানান, বন্যা পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলেই পাঠদান শুরু হবে।
[৯] গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি ৯ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় এখনো নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে মানুষজন পানিবন্দি হওয়ার পাশাপাশি কৃষিজমি তলিয়ে যাওয়ায় ফসলের ক্ষতি হচ্ছে ব্যাপক। জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি কোথাও অপরিবর্তিত আবার কোথাও অবনতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
[১০] জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্যমতে, ঝিনাই নদীর পানি জোকারচর পয়েন্টে ৬ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৯১ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি পোড়াবাড়ি পয়েন্টে ৯ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ২৪ সেন্টিমিটার, ধলেশ্বরী নদীর পানি এলাসিন পয়েন্টে ১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
[১১] এছাড়া ফটিকজানি নদীর পানি নলচাপা ব্রিজ পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার, বংশাই নদীর পানি কাউলজানী পয়েন্টে ৬ সেন্টিমিটার, মির্জাপুর পয়েন্টে ৯ সেন্টিমিটার এবং মধুপুর পয়েন্টে ৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এসব নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে জেলার কয়েকটি উপজেলার বিস্তীর্ণ জনপদের বাড়িঘর, হাটবাজার, ফসলি জমিসহ অন্যান্য স্থাপনা এখনো বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে।
[১২]জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, জেলার ভূঞাপুর, নাগরপুর, কালিহাতী, টাঙ্গাইল সদর, গোপালপুর, বাসাইল উপজেলার ৪৭ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। এতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। তবে অনেক জায়গায় পানি কমলেও ভোগান্তি কমেনি নদীপাড়ের মানুষজনের।
[১৩] জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক দিনে বন্যার পানিতে জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রায় সাড়ে ৬ হেক্টর ফসলি জমি পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। তবে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করায় নতুন নতুন এলাকার ফসলি জমি বন্যাকবলিত হচ্ছে। জানা গেছে, বন্যার পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর, দেলদুয়ার, নাগরপুর ও বাসাইল উপজেলার ৫টি গ্রামীণ সড়ক বন্যার পানিতে ভেঙে নতুন নতুন কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
[১৩] এ ছাড়া যমুনাসহ তিনটি নদীর পানি কমতে শুরু করলেও নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের পানিবন্দি মানুষদের দুর্ভোগ কমেনি। বর্তমানে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও গোখাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. কায়ছারুল ইসলাম জানিয়েছেন, এ বছর বন্যায় যেসকল মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন তাদের পাশে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।
[১৪] অন্যদিকে গাইবান্ধার সব নদ-নদীতেই কমতে শুরু করেছে বন্যার পানি। ফলে বন্যা কবলিত নিম্নাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। নদী তীরবর্তী এলাকার বাঁধে আশ্রয় নেওয়া মানুষেরা ফিরছে বাড়িতে। তবে নিম্নাঞ্চলের বাড়ি-ঘর থেকে পানি নেমে যেতে আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড।
[১৫] গাইবান্ধার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক বলেন, চলমান বন্যায় সুন্দরগঞ্জ, সদর, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ২৯টি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়েছে। গত চারদিন থেকে পানি কমতে থাকায় বন্যা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। আশা করা যায় আগামী সপ্তাহেই বন্যার পানি পুরোপুরি নেমে যাবে।
