গৌরীপুরের দশ গ্রামে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি : [১] ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ভাংনামারী ইউনিয়নের দশটি গ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন ছাড়া নদের পানিতে প্লাবিত হয়েছে আরও কয়েকটি গ্রাম।
[২] স্থানীয়দের অভিযোগ, কমপক্ষে ১৫ বছর ধরে বর্ষাকালে ভাংনামারী ইউনিয়নের ওই গ্রামগুলোয় ভাঙন দেখা দেয়। এতে বিপুলসংখ্যক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অসংখ্য পরিবার নিজেদের বাড়িঘর ও ফসলের জমি হারিয়ে গ্রামছাড়া হয়েছে। কিন্তু সরকারি উদ্যোগে বাঁধ নির্মাণ করা হয়নি। এছাড়াও নদে অবৈধ ও অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের কারণে নদের পাড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। [৩] খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বছরের বেশিরভাগ সময় নদ শুকিয়ে হাঁটু পানি থাকলেও বর্ষা মৌসুমে উজানের ঢলে পানি বেড়ে শুরু হয় ভাঙন। গত কয়েক বছরে এই ইউনিয়নের তিনটি গ্রামের প্রায় কয়েকশত একর ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে বসতভিটা হারিয়েছে দুই শতাধিক পরিবার।
[৪] ভাংনামারী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নদ ভাংনের শিকার মানুষের দুর্দশা। এরমধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদ ভাটিপাড়া গ্রামবাসীর ঘরের দুয়ারে চলে এসেছে। এরমধ্যে অনেক পরিবারের বাড়ি-ঘর নদে বিলীন হয়ে গেছে। গ্রামবাসী ঘর-বাড়ি, গাছ-পালা কেটে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছে।
[৫] এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছর বর্ষার শুরুতেই অনন্তগঞ্জ, ভাটিপাড়া, ভাংনামারীর চর, উজান কাশিয়ারচর, বয়রা, খোদাবক্সপুর, দূর্বাচর, চরভাবখালী, গজারিপাড়া, সহ দশ গ্রামে ভাঙন শুরু হয়েছে। [৬] এর মধ্যে খোদাবক্সপুর, ভাটিপাড়া, উজানকাশিয়ার চর গ্রামের তিন কিলোমিটার এলাকায় গত দশদিন ধরে ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বাড়তে শুরু করলে নদের তীরে ভাঙন শুরু হয়েছে। পানি কমার সময় ভাঙনের মাত্রা আরও বাড়বে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। নদের পাড়ে ভাঙন শুরু হওয়ায় ভিটে, গাছপালা সরাতে দেখা গেছে নদ পাড়ের বাসিন্দাদের। বসত ভিটার পাশাপাশি ফসলি জমিও বিলিন হচ্ছে ব্রহ্মপুত্র নদে। এছাড়াও ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে উজানকাশিয়ার চর গ্রামে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা।
[৭] খোদাবক্সপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল খালেক বলেন, এখন পর্যন্ত সাতবার বাড়ি ভাঙছে নদের পানিতে। ৫৬ কাঠা জমি নদে বিলীন হয়েছে। নতুন ভাঙনে এখন হারালাম ভিটা। মাথা গোঁজার আশ্রয়ের জায়গাটুকু রইল না।
[৮] ভাঙনের শিকার ভাংনামারী ইউনিয়নের বাসিন্দা হাফিজুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছর আমাদের জমি বাড়ি নদে বিলীন হয়। আমাদের ২০ কাঠা জমি ভাঙতে ভাঙতে আড়াই কাঠাতে ঠেকেছে। আমরা ছাড়াও এলাকার আরও ২০টি পরিবারের একই অবস্থা
[৯] ভাংনামারী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, উজানকাশিয়ার চর গ্রামে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৬৯টি ঘর, একটি কমিউনিটি সেন্টার, ও কয়েকশ বাড়ি ব্রহ্মপুত্র নদে ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। ভাঙন না ঠেকালে মানুষ ভিটেহারা হবে।
[১০] পানি উন্নয়ন বোর্ড ময়মনসিংহের নির্বাহী প্রকৌশলী আখলাক উল জামিল বলেন, ভাঙনের খবর পেয়ে ইতোমধ্যে জায়গাগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। ভাঙনের জন্য দায়ী হল অপরিকল্পিতভাবে ব্রহ্মপুত্র নদ খনন করা ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। বালু তোলার ফলে সৃষ্ট গর্তের কারণে পানির স্রোত বাড়ায় ভাঙন বাড়ছে।
[১১] ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক দিদার আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, আমরা এরইমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার খোঁজ নিয়েছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ব্রম্মপুত্র নদের খনন কাজ চলছে। নদী খননের ফলে কয়েকটি স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়। ফলে কয়েকটি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিআইডব্লিউটিএর সঙ্গে কথা হয়েছে যেন গ্রামগুলো ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।