বিশ্বজিৎ দত্ত : [১] লোকটির নাম রবীন্দ্রনাথ দাস। বাড়ি ভারতের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলায়। পেশায় একজন মৎস্যজীবী।
[২] গত ৮ দিন আগে হলদিয়া অঞ্চলে বঙ্গোপসাগরে ট্রলার নিয়ে মাছ ধরছিল সে ও তার ১৫ জন সাথী।
[৩] হটাত প্রচন্ড ঝড় শুরু হয়। একসময় ট্রলার উল্টে যায়। প্রচন্ড ঢেউয়ে একেকজন একেক দিকে ভেসে যায়। রবীন্দ্রনাথও ভেসে যায়।
[৪] পেশায় জেলে হওয়ায় জলের প্রতি ভয় ছিল তার কম, আর মনে ছিল প্রচন্ড সাহস। তাই গভীর সমুদ্রে ভেসে গেলেও বেঁচে থাকার সাহস হারান নি। ভাসতে থাকেন। ভাসতে থাকেন। উপরে আকাশ আর নিচে জল। রবীন্দ্রনাথ ভাসতে থাকেন।
[৫] ১ ঘন্টা ২ ঘন্টা করতে করতে ১ দিন থেকে ২ দিন হয়ে যায় রবীন্দ্রনাথ ভাসতে থাকেন।
[৬] রবীন্দ্রনাথের শরীর দুর্বল হয়ে যায় কিন্তু বাঁচার কোন অবলম্বন খুঁজে পায় না। খাবার বলতে কেবল যখন বৃষ্টি নামে তখন সেই বৃষ্টির জল।
[৭] তবুও রবীন্দ্রনাথ হার মানেনি। ভাসতে থাকে ভাসতে থাকে।
ভাসতে ভাসতে ৫ দিন পার হয়ে যায়।
[৮] ৫ দিন পর প্রায় ৬০০ কি.মি. ভাসতে ভাসতে বাংলাদেশের কুতুবদিয়ায় এসে পৌছে। তখন বাংলাদেশের জাহাজ এমভি জাওয়াদের ক্যাপ্টেন অনেক দূর থেকে তাকে ভাসমান অবস্থায় দেখতে পায়।
[৯] দেখতে পেয়ে তড়িঘড়ি করে তার দিকে লাইফ জ্যাকেট ছুড়ে মারে। কিন্তু সে ধরতে পারে না। তলিয়ে যায়। বেশ কিছুক্ষণ পর কিছুটা দূরে আবার তাকে দেখা যায়।
[৯] ক্যপ্টেন তাৎক্ষনিক জাহাজ সেদিকে ঘুড়িয়ে আবার একটি লাইফ জ্যাকেট ছুড়ে দেয়। এক পর্যায়ে রবীন্দ্রনাথ লাইফ জ্যাকেট ধরতে পারে। এবং ধীরে ধীরে জাহাজের দিকে আসতে থাকে। জাহাজের কাছাকাছি আসলে ক্রেন ফেলে তাকে জাহাজের উপর তোলা হয়।
[১০] তাকে জাহাজে তোলার দৃশ্যটি জাহাজের একজন নাবিক ভিডিওতে ধারণ করেন। ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যায়, রবীন্দ্রনাথকে যখন সফল ভাবে জাহাজে তোলা সম্ভব হয় তখন জাহাজের সকল নাবিকেরা খুশিতে চিৎকার করে উঠে। একজন মানুষের জীবন বাঁচানোর আনন্দে তারা আত্মহারা হয়ে যায়।