
দেশে জ্বালানি অবকাঠামো উন্নয়নে বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব ও বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা
সৈয়দ রাইয়ান আমীর : বৈশ্বিক জ¦ালানি চ্যালেঞ্জ ও সাসটেইনেবল উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা দ্বারা সংজ্ঞায়িত একটি যুগে দেশগুলোর মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্ব ভবিষ্যতের শক্তির ল্যান্ডস্কেপ গঠনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশ তার জ্বালানি অবকাঠামো শক্তিশালী করতে ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে ইতালি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, ইইউর মতো ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত রয়েছে। এই নিবন্ধটি বাংলাদেশ ও এর ইউরোপীয় অংশীদারদের মধ্যে বিকশিত জ্বালানি সহযোগিতার অন্বেষণ করে, মূল প্রকল্প, উদ্যোগ, সাসটেইনেবল জ¦ালানির ভবিষ্যতের জন্য তাদের প্রভাবের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। ইতালি বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা উচ্চাকাক্সক্ষার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বিশেষ করে এলএনজি সরবরাহ ও সম্ভাব্য অফশোর অনুসন্ধান উদ্যোগে। ৯ জুন, ২০২৩ তারিখে ইতালি বাংলাদেশের সঙ্গে একটি দীর্ঘমেয়াদী এলএনজি সরবরাহ চুক্তি স্থাপনে দৃঢ় আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ইউরোপের এনার্জি ডিজানামিক্সের মধ্যে এই উদ্যোগটি তাৎপর্যপূর্ণ। যা সরবরাহের বৈচিত্র্য ও নিরাপত্তার ওপর জোর দেয়। ইএনআই, একটি নেতৃস্থানীয় ইতালীয় জ্বালানি কোম্পানি, সম্ভাব্য এলএনজি সরবরাহ চুক্তির জন্য পেট্রোবাংলা কর্তৃক সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত হয়েছে। যা বাংলাদেশের জ্বালানি বাজারে গভীর বেসরকারি খাতের সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত দেয়। আলোচনার মধ্যে রয়েছে অফশোর অন্বেষণের জন্য সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা, প্রথাগত সরবরাহ চুক্তির বাইরে বাংলাদেশে তার শক্তির পদচিহ্ন সম্প্রসারণের জন্য ইতালির প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে। ফ্রান্স লক্ষ্যযুক্ত উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশের জ্বালানি দক্ষতা ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে সহায়তা করার জন্য সক্রিয় হয়েছে। ১৬ মার্চ, ২০২৩-এ, এজেন্সি ফ্রান্সিস ডি ডেভেলপমেন্ট শিল্প খাতে জ্বালানি দক্ষতা বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে ৫৬০,০০০ ইউয়ান অনুদান চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। সহযোগিতার লক্ষ্য হলো শক্তি-দক্ষ প্রযুক্তি গ্রহণকে উন্নীত করা, নবায়নযোগ্য শক্তি পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনে উৎসাহিত করা ও শক্তি সেক্টরে নারী উদ্যোক্তাদের সমর্থন করা।
প্রকল্পটি একটি বৃহত্তর কাঠামোর অংশ যা এএফডি থেকে বিআইএফএফএল-কে ৫০ মিলিয়ন ইউয়ান ঋণের মাধ্যমে সহজতর করা হয়েছে। যা বেসরকারি খাতের যোগ্য ক্লায়েন্টদের ছাড়ের ঋণ প্রদান করতে সক্ষম করে। বাংলাদেশের গ্রিন এনার্জি ট্রানজিশনের প্রতি ফ্রান্সিসের প্রতিশ্রুতি সাসটেইনবল উন্নয়ন ও জলবায়ু স্থিতিশীলতার পারস্পরিক উদ্দেশ্যের ওপর জোর দেয়। ইউনাইটেড কিংডম বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগকারী, তার প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ও সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টায় অবদান রেখেছে। ৩১ মে, ২০২২ সাল থেকে, ব্রিটিশ ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পাঁচ বছরে বেসরকারি খাতের উদ্যোগকে অর্থায়নের জন্য ৪৫০ মিলিয়ন ডলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশের স্থিতিশীল শাসন ও সহায়ক নীতি পরিবেশের প্রতি যুক্তরাজ্যের আস্থা প্রতিফলিত করে। ৩১ জুলাই, ২০২৩ সালে বাংলাদেশে সৌর সেচ পাম্পের পাইলটিং এবং বায়ু ল্যাব স্থাপনের মতো উদ্যোগগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করতে আলোচনার প্রসারিত হয়। এই প্রচেষ্টার লক্ষ্য হলো পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির সম্ভাবনাকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করা, অফশোর উইন্ড গাইডলাইন তৈরি করা, কার্বন মূল্য নির্ধারণ ও ট্রেডিং কৌশলগুলোতে ক্ষমতা বাড়ানো। ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক ও অন্যান্য চ্যানেলের মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি অবকাঠামো উন্নয়নে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রেখেছে। ২৫ অক্টোবর, ২০২৩-জি, ইআইবি ও ইইউ একটি যুগান্তকারী ৩৯৫ মিলিয়ন ইউরো অর্থায়ন প্যাকেজ ঘোষণা করেছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পের জন্য। বাংলাদেশ। এই উদ্যোগটি দেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রথম সরাসরি বিনিয়োগের প্রতিনিধিত্ব করে, প্রাথমিকভাবে সোলার পিভি ও উপকূলীয় বায়ু ইনস্টলেশনের উপর ফোকাস করে। এই তহবিলের মধ্যে রয়েছে রেয়াতি ঋণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা অনুদান। যার লক্ষ্য সবুজ শক্তি উৎপাদনে বাংলাদেশের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা ও এর জলবায়ু প্রশমন লক্ষ্যে সমর্থন করা। সহযোগিতা বিশ্বব্যাপী সাসটেইনেবল উন্নয়ন ও জলবায়ু স্থিতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিশ্রুতির উপর জোর দেয়, বাংলাদেশ এই প্রচেষ্টার প্রধান অংশীদার।
উপরন্তু, ইইউ-অর্থায়নকৃত প্রকল্পগুলোর লক্ষ্য বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য শক্তির ৭৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতা স্থাপন করা। যা জাতীয় শক্তির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও কার্বন নিঃসরণ কমানোর দিকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করে। বাংলাদেশ ও এর ইউরোপীয় মিত্রদের মধ্যে অংশীদারিত্ব সাসটেইনেবল শক্তি সমাধানের অগ্রগতিতে পরিপূরক শক্তি ও ভাগ করা উদ্দেশ্যগুলো প্রদর্শন করে: ইতালি এলএনজি সরবরাহ ও সম্ভাব্য অফশোর অনুসন্ধানে দক্ষতার অবদান রাখে, বাংলাদেশের তাৎক্ষণিক শক্তির চাহিদা মোকাবেলা করে ও শক্তি নিরাপত্তা বৃদ্ধি করে। ফ্রান্স ফোকাস করে সাসটেইনেবল শিল্প উন্নয়ন, জলবায়ু কর্মের বাংলাদেশের লক্ষ্যগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধি ও নবায়নযোগ্য শক্তি গ্রহণের প্রচার। যুক্তরাজ্য নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, জ্ঞান স্থানান্তর সহজতর করে, বাংলাদেশে সবুজ বৃদ্ধির প্রচার করে। ইইউ ইআইবি-এর মতো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যথেষ্ট আর্থিক সংস্থান ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা প্রদান করে। যা বাংলাদেশে বৃহৎ আকারে নবায়নযোগ্য জ¦ালানি স্থাপন ও সাসটেইনেবল জ¦ালানি পরিবর্তনের প্রচার করে। এই অংশীদারিত্ব শুধু বাংলাদেশের জ¦ালানির মিশ্রণে বৈচিত্র্য আনে না বরং বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারের ওঠানামায় এর স্থিতিশীলতাকে শক্তিশালী করে ও আন্তর্জাতিক জলবায়ু প্রতিশ্রুতি অর্জনে অবদান রাখে। বাংলাদেশ ও এর ইউরোপীয় অংশীদারদের মধ্যে জ্বালানি অংশীদারিত্ব প্রতিশ্রুতিশীল সুযোগ প্রদান করে কিন্তু সেই সঙ্গে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয় যা সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করা প্রয়োজন। জ্বালানি প্রকল্পগুলো সুচারুভাবে বাস্তবায়নের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কাঠামোর সঙ্গে জাতীয় নীতিগুলো সারিবদ্ধ করা গুরুত্বপূর্ণ।
জাতীয় গ্রিডে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎসগুলোকে কার্যকরভাবে একীভূত করার জন্য অবকাঠামোগত ঘাটতি পূরণ করা ও গ্রিড সংযোগের উন্নতি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উদ্ভাবনী অর্থায়ন ও সাসটেইনেবল বিনিয়োগ অনুশীলনের মাধ্যমে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পের আর্থিক স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা অপরিহার্য। উপরন্তু, ক্লিন এনার্জি টেকনোলজির হস্তান্তর প্রচার ও স্থানীয় ক্ষমতা বৃদ্ধি জ¦ালানির সাসটেইনেবল মোতায়েনকে সমর্থন করবে। বাংলাদেশ ও এর ইউরোপীয় অংশীদারদের মধ্যে সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা সাসটেইনেবল জ¦ালানির ভবিষ্যৎ অগ্রসর করার জন্য একটি যৌথ অঙ্গীকারের উপর জোর দেয়। এই অংশীদারিত্বগুলো কেবল শক্তি সুরক্ষা বাড়ায় না, নবায়নযোগ্য শক্তি গ্রহণকে উৎসাহিত করে না বরং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও বাড়ায়। যেহেতু বাংলাদেশ তার জ্বালানি অবকাঠামো প্রসারিত করছে ও জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। এই অংশীদারিত্বগুলো বিশ্বব্যাপী সাসটেইনেবল উন্নয়নের জন্য কার্যকর আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মডেল হিসেবে কাজ করে। পারস্পরিক শক্তি ও সম্পদের ব্যবহার করে বাংলাদেশ এর ইউরোপীয় অংশীদাররা একটি স্থিতিশীল ও আন্তঃসংযুক্ত জ¦ালানি ল্যান্ডস্কেপের পথ প্রশস্ত করছে। এই নিবন্ধে উল্লিখিত উদ্যোগগুলো প্রদর্শন করে যে কীভাবে কৌশলগত অংশীদারিত্ব ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সহজতর করতে পারে ও পরিবেশগত প্রভাব হ্রাস করতে পারে। বিশ্বব্যাপী শক্তি নিরাপত্তা, সাসটেইনেবলতা, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনের জন্য এগিয়ে চলা, সাসটেইনেবল সহযোগিতা ও উদ্ভাবন অপরিহার্য হবে। লেখক : সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট, দ্য কেআরএফ সেন্টার ফর বাংলাদেশ অ্যান্ড গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স (সিবিজিএ)। অনুবাদ : জান্নাতুল ফেরদৌস। সূত্র : ডেইলি অবজার্ভার
