
এডিস মশা নিধনে সুপরিকল্পিতভাবে কাজ করার পরামর্শ পবা ও বারসিক
শাহীন খন্দকার : [২] প্রায় দুই যুগ আগে দেশে প্রথম ডেঙ্গুর প্রকোপ লক্ষ্য করা হয়। ২০২৩ সলে ডেঙ্গুর প্রকোপ অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। বর্তমানে ডেঙ্গু এডিস মশা নিধণে কর্মপদ্ধতির ব্যার্থতা ও বিকল্প পদ্ধতি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন।
[৩] বিশেষজ্ঞরা বলেন, ২০১৮ সাল পর্যন্ত রাজধানীসহ বড় শহরে সীমাবদ্ধ থাকলেও ২০১৯ এ ডেঙ্গু সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। ২০২৩ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ অতীতের সকল রেকর্ড ভাঙে। অর্থাৎ মশা নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বরত কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগই কাজে আসেনি।
[৪] চলতি বছর আবারও ২০২৩ এর পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় এডিস মশা নিধনে বর্তমান কর্মপদ্ধতির কার্যকারিতার ব্যর্থতা তুলে ধরে বিকল্প পদ্ধতির নিয়ে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। [৫] রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা ও বারসিক) আয়োজিত ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান ও করণীয় নির্ধারণ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এ পরামর্শ দেন। [৬] আজকের আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক ব্যাধি শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, এডিস মশাকে ধোঁয়া ও মেডিসিন দিয়ে নিধন করার চিন্তা করলে হবে না। এডিস ও কিউলেক্স মশা এক নয়। এডিস মশা নিধনে সুপরিকল্পিতভাবে কাজ করতে হবে। [৭] তিনি আরও বলেন, অথচ এটি নির্ধারণে সিটি করপোরেশনের পর্যাপ্ত কিট তত্ত্ববিদ নেই। স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়মিত ল্যাব নেই। এভাবে মশা নিধন সম্ভব নয়। রোগী শনাক্তের ওপর জোর দিয়ে আরও বলেন, ডেঙ্গু শহর ছেড়ে গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। অথচ সেখানে শনাক্ত ও চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনা নেই। এ অবস্থায় ডেঙ্গু ম্যালেরিয়ার মতো র?্যাপিড টেস্টের মাধ্যমে গ্রামে শনাক্তকরণের ব্যবস্থা করতে হবে। সাম্প্রতিক যে গাইডলাইন প্রণয়ন করা হয়েছে তা প্রতিরোধমূলক নয়।
[৮] কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. কবীরুল বাশার বলেন, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরে ডেঙ্গুর প্রকোপ সর্বোচ্চ হবে বলে আশাঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এবছর রাজধানীতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ নাও হতে পারে। এটা ওয়েভের মতো আসে। যদি কোনো বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি যতটা খারাপ হয় তার পরের বছর না হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
[৯] কিন্তু তা এলাকাভিত্তিক। ফলে ঢাকায় পরিস্থিতি খারাপ না হলেও অন্য এলাকাগুলোতে হতে পারে। আমরা চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় তার লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি। বিকল্প পদ্ধতি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে তিনি আরও বলেন, এডিস মশা এখন আর নগরের মশা নেই। সে এখন তার রাজত্ব সারাদেশে ছড়িয়েছে। গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে এডিস মশা।
[১১] এই মশা নিয়ন্ত্রণের জ্ঞান গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে দিতে হবে। পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা করতে হবে। এবং অন্য প্রাণী দিয়ে তা নিধন করতে হবে। কিন্তু আমরা তা ধ্বংস করে দিয়েছি। এখন ফড়িং খুঁজে পাওয়া দায়। ফলে আমরা মশা মারতে কীটনাশক ব্যবহার করছি। এটা ক্ষতিকর।
[১২]কীটনাশক ব্যবহার তখন করতে হবে যখন অন্য কোনো উপায় থাকে না। কিন্তু এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে। তাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিটিআইয়ের মতো নিরাপদ পেস্টিসাইড ব্যবহার করছে। প্রতিটি মশার প্রজনন ও নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ভিন্ন। ফগিং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিষিদ্ধ উল্লেখ করে এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে বলেও জানান অধ্যাপক কবিরুল বাশার।
[১৩] ডেঙ্গুর আর্থিক ক্ষতির তথ্য তুলে ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রুমানা হক বলেন, ডেঙ্গু চিকিৎসায় জটিল অবস্থায় আমরা হাসপাতালে ভর্তি হই। তা সরকারি বা বেসরকারি যাইহোক না কেন, উভয় স্থানেই খরচ হয়। আমাদের টেস্ট ও চিকিৎসা বাবদ ন্যূনতম ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা ব্যয় হয়।
[১৪] তিনি বলেন, আক্রান্ত ব্যক্তি ও সেবায় থাকা ব্যক্তি এ সময় কাজে যেতে পারেন না। ফলে এখানেও কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। আবার সরকারও এখানে অনেক ভর্তুকি দিচ্ছে। যা সামগ্রিকভাবে অর্থনৈতিক ক্ষতি। আর বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে তা আরও অধিক হয়ে থাকে।
[১৫] কিন্তু যে রোগীর দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার ডেঙ্গু হচ্ছে, যাদের কোমরবিডিটি রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে জটিলতা ও খরচ আরও অধিক হয়। এ অবস্থায় সরকারকে কৌশল ঠিক করতে হবে কোথায় বিনিয়োগের মাধ্যমে এই ক্ষতি রোধ করা সম্ভব হবে। শুধু অর্থ ব্যয় নয়, সঠিক স্থানে অর্থ ব্যয় করতে হবে।
[৬] পরিবেশ বিষয়ক লেখক ও বারসিকের পরিচালক পাভেল পার্থ বলেন, রাষ্ট্রের কোন কোন অবহেলা ও অস্বীকারের কারণে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা যাচাই করা প্রয়োজন। আমরা পরিবেশ ধ্বংস করেছি। এর ফলে আমরা নানা ক্ষতির মুখে পরছি। তাই পরিবেশগত ব্যবস্থাপনায় জোর দিতে হবে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পবার সহ-সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়না, পরিবেশ বিষয়ক বিশিষ্ট লেখক ও বারসিকের পরিচালক পাভেল পার্থ প্রমুখ।
