ক্লিনিক ব্যবসা জমজমাট
রোকেয়া বেগম
স্বাস্থ্যের কাজ করতে গিয়ে বাংলাদেশের অনেক জেলায় ঘুরেছি। কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় গিয়ে হতবাক হয়ে গিয়েছি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর থেকে বের হয়ে পুরানা জেলখানা রোড থেকে ছোটহরণ গ্রামে যেতে রাস্তার দু,পাশে দেয়ালে একটি সুই ফেলানোর জায়গা নেই ডাক্তারদের বিজ্ঞাপনের জন্য। বড়শিতে আধার দিলে মাছ যেমন দৌড়ে আসে। তেমনি ডাক্তারদের বিজ্ঞাপন দেখে রোগী তেমন করে দৌড়ায়। এতো গেল বিজ্ঞাপন এর একটা চিত্র। যেটা সব চেয়ে ভয়াবহ তা হলো একজন সরকারি হাসপাতালে আয়ার চাকরি করে কেমন করে ডেলীভারী করান তা ভাবতে অবাক লাগছে। ভাবতে অবাক লাগলেও কথাটা একেবারেই সত্যি। ২ বছর আগে একবার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গিয়েছিলাম। আমার এক নিকট আত্মীয় ভর্তি ছিল তাকে দেখতে। সেখানে গিয়েও আমি হতবাক হয়ে গিয়ে ছিলাম একটি মেয়ের কথা শুনে। সে বলছিল আমি এখানে চাকরি করি না। জিজ্ঞেস করলাম তা হলে এখানে কি করছেন? সে বললো আমি এখানে কাজ করছি যাতে আমি নার্সের কাজ শিখতে পারি। পরে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে কাজ করবো। তার কথা শুনে আতকে উঠেছিলাম। কোন প্রশিক্ষণ ছাড়াই সে ক্লিনিকে কাজ করবে? তখন আমি চিন্তা করলাম ওর হাতে না জানি কত মানুষের মৃত্যু হয়। একটি সরকারি হাসপাতাল এখানে কি করে সে আছে। এগুলি দেখার কি কেউ নেই। কেউ যদি তাকে এখানে ঢোকার সুযোগ করে না দেয় তা হলে সে কি করে এখানে আছে। কথায় বলে জোর যার মুল্লুক তার। নিশ্চয়ই তার পেছনে একটি শক্তি আছে যার জোরে সে এখানে আছে। এটা আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য ভয়াবহ একটি ব্যাপার। যাক সে কথা, এবার আসি ব্রাহ্মবাড়িয়ার কথায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার একটি গ্রামের নাম ছোটহরণ। এই গ্রামের শেলী বেগমের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম সেখানকার এক আয়ার অপকর্মের কথা। সেখানেও একই অবস্থা। রেহানা নামে এক আয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে কাজ করতো। এক সময় সে নিজ বাড়িতে ব্যবসার ফাঁদ পেতে বসে। নিজ বাড়িতে নরমাল ডেলীভারী করে থাকেন। বিনা পয়সায় নয় রোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় হাজার হাজার টাকা। হাসপাতালে যখন রোগী যায় তখন তাদের বলেন আমার বাসায় নরমাল ডেলিভারি করি ওখানে যাবেন। এত দূরে হাসপাতালে আসার দরকার কি।
ছোটহরণ গ্রামের শেলী জানালেন ২ মাস আগে বড়হরণ গ্রামের বাছির মিয়ার স্ত্রী রত্না। ডেলীভারীর পর মারা গেছে। তার বয়স ২৫ বছর। রত্নার আরো দুটি সন্তান রয়েছে। এইটা রত্নার তৃতীয় সন্তান। এই সন্তান হওয়ার সময় তাকে তার পরিবার বাগানবাড়ি নামে একটি জায়গায় যেখানে আয়া রেহানার বাড়ি। সেখানে নিয়ে যান ডেলীভারী করানোর জন্য। রেহানার অপকর্মের কারণে এই মায়ের মৃত্যু হয়েছে বলে জানান এলাকার দাইমারা। তথ্য নিয়ে জানা গেল আয়া রেহানা বেগম রত্নার নরমাল ডেলীভারী করিয়ে ছিল। রত্না একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। এর পর তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বাড়িতে আসার পথে তার প্রচুর রক্তক্ষরণ শুরু হয়। রোগীর লোক রোগীর অবস্থা খারাপ দেখে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য রোগীকে গাড়িতে তুলেন। কিছু দুর যাওয়ার পর রোগীর অবস্থা এত খারাপ হয় যে, অবশেষে রোগী রাস্তায় মারা যায়। এ মৃত্যুর জন্য দায়ী কে? মাতৃমৃত্যু রোধ করা যাচ্ছে না।
ক্লিনিক ব্যবসার যে কি অবস্থা তা আরো বেশী করে জানতে পারলাম একজন ওষুধ কোম্পানির এজিএম এর সাথে আলাপ করে। কথা প্রসঙ্গে এক পর্যায়ে বললেন বাংলাদেশে এখন বড় ব্যবসা হচ্ছে শিক্ষাখাত এবং স্বাস্থ্য খাত। এই দুটি খাতে কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। তিনি জানালেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া কাজ করি। অনেক জায়গায় যাই। তাদের অপকর্ম দেখি প্রতিবাদ করার কিছুই থাকে না। কিন্তু কি বলবো ডাক্তারদের কথা এমন কিছু ডাক্তার রয়েছে যারা পারলে জীবন্ত মানুষকে কেটে ছিড়ে হলেও টাকা আদায় করবে এই হচ্ছে তাদের নীতি। এইগুলি দেখে খুব খারাপ লাগে। বাচ্চা নরমাল হয়ে যাচ্ছে জোর করে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে সিজার করে টাকা আদায় করছে। এখানে একই বিল্ডিংয়ে দুটি ক্লিনিকও রয়েছে। ১০-১২ হাত দুরে দুরে একটি করে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে। এখানে ক্লিনিক ব্যবসা জমজমাট। অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা দিয়ে রোগীদের কাছ থেকে যে ভাবে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তা দেখার কেউ নেই।