চিকিৎসায় মানুষের অর্থ ব্যয় ৭৩ শতাংশ : বিআইডিএস
নিজস্ব প্রতিবেদক : [১] সরকারি বরাদ্দ কম এবং যা বরাদ্দ হয় সেটিও সঠিকভাবে কার্যকর না হওয়ায় বছরে চিকিৎসা ব্যয়ে মানুষের পকেট থেকে চলে যাচ্ছে ৭৩ শতাংশ অর্থ। সেই হিসেবে সরকারের ব্যয় মাত্র ২৭ শতাংশ।
[২] বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। গতকাল সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিআইডিএস সম্মেলন কক্ষে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিআইডিএসর মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন। সেমিনারে গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন সংস্থাটির রিসার্স ফেলো ড. আব্দুর রাজ্জাক সরকার।
[৩] জানানো হয়, তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে ওষুধ কিনতে, যার পরিমাণ ৫৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে ডায়াগনস্টিকের জন্য ২৭ দশমিক ৫২ শতাংশ, কনসালটেশনের জন্য ১০ দশমিক ৩১ এবং পরিবহণের জন্য খরচ হয় ৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ অর্থ। চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে প্রতিবছর ৬১ লাখ ৩০ হাজার মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে নেমে যায়, যা মোট জনসংখ্যার ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। [৪] প্রধান অতিাথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, আমি স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন করব। কেন না, এটা আমরা জন্য চ্যালেঞ্জ। এই আইনের মাধ্যমে রোগী ও চিকিৎসক সব পক্ষকে সুরক্ষা দেওয়া আমার দায়িত্ব। সেইসঙ্গে হেলথ ইন্স্যুরেন্সর কাজ চলছে। স্বাস্থ্য খাতের সমস্যা অনেক। সব রাতারাতি শেষ হবে না। তবে আমি চেষ্টা করছি। এক্ষেত্রে সবার সহায়তা লাগবে। মানুষের পকেট থেকে যাতে অধিক অর্থ স্বাস্থ্য খাতে চলে না যায় সেজন্য আমি হেলথ ইন্স্যুরেন্স করব। এজন্য ভারতের মোদি কেয়ারের মতো কিছু করা যায় কি না সেটি ভাবা হচ্ছে। তবে একটু সময় লাগবে।
[৫] তিনি আরও বলেন, আমি মন্ত্রী হব তা কখনও ভাবিনি। কিন্তু যখন দায়িত্ব পেয়েছি তখন স্বাস্থ্য খাতের অনেক বিষয় নিয়েই জানতে হচ্ছে। তবে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে না পারলে ঢাকায় বসে যতই লেকচার দিই লাভ হবে না। এজন্য গ্রামের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে আগে কাজ করছি। অবৈধ ফার্মেসি দমনে ড্রাগের মহাপরিচালককে শক্ত ভূমিকা নিতে হবে।
[৬] এদিকে, গবেষণাপত্রে ড. আব্দুর রাজ্জাক সরকার বলেন, ১৯৯৭ সালে চিকিৎসার পেছনে মানুষের পকেট থেকে চলে যেত ৫৫ দশমিক ৯ শতাংশ অর্থ। সেটি বেড়ে ২০২০ সালে হয়েছে ৬৮ শতাংশ, সর্বশেষ ২০২১ সালের হিসাবে সেটি আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৩ শতাংশে।
[৭] প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেছেন, স্বাস্থ্য খাতে ব্যক্তি পর্যায়ে ব্যয় সবচেয়ে বেশি আফগানিস্তানে ৭৭ দশমিক ২০ শতাংশ। এরপরই রয়েছে বাংলাদেশ। যেখানে ব্যয় হয় ৭৩ শতাংশ। এছাড়া পাকিস্তানে ৫৭ দশমিক ৫০ শতাংশ, নেপালে ৫১ দশমিকম ৩০, ভারতে ৪৯ দশমিক ৮০, শ্রীলংকায় ৪৩ দশমিক ৬০, ভুটানে ১৮ দশমিক ৮০ শতাংশ এবং সবচেয়ে কম খরচ হয় মালদ্বীপে ১৪ দশমিক ৩০ শতাংশ অর্থ।
[৮] তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে ব্যক্তির পকেট থেকে যে অর্থ ব্যয় হয় এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চলে যায় ক্যানসারের পেছনে। এতে ব্যয় হয় গড়ে ২ লাখ ২৩ হাজার ৯৩৮ টাকা। এছাড়া কোভিডের সময় খরচ হয়েছিল ১ লাখ ৩১ হাজার ৭০৯ টাকা। হার্টেও অসুখের জন্য ৯৯ হাজার ৭১৫ টাকা, লিভার অসুখের জন্য ৭৮ হাজার ৯৪৩ টাকা এবং জন্ডিসে খরচ হয় ৭৬ হাজার ৪৫৩ টাকা। সবচেয়ে কম খরচ হয় জ্বরের কারণে।
[৯] ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, একজন রোগী হাসপাতালে গেলে মানুষের পকেট থেকে সবচেয়ে বেশি খরচ হয় ওষুধ কিনতে। এরপর অপারেশনে ২৩ শতাংশ, ডায়াগনস্টিকে ১৭ শতাংশ, বেড চার্জ বাবদ ১৬ শতাংশ এবং অন্যান্য খাতে ব্যয় হয় ১৪ শতাংশ। মানুষ ওষুধ কিনতে যে ব্যয় করে এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খরচ হয় ফার্মেসিতে।
[১০] তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাতে ব্যক্তিগত ব্যয় করতে গিয়ে মানুষ দরিদ্র্য হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে হেলথ ইন্স্যুরেন্স করা প্রয়োজন। ড. বিনায়ক সেন বলেন, গ্রামে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে সরকার স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতের চেষ্টা করছে। কিন্তু শহরেও এরকম কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিটি ওয়ার্ডে থাকা দরকার। যাতে মানুষ প্রাথমিক চিকিৎসা পেতে পারে কম খরচে। চিকিৎসা খাতে বরাদ্দ কমপক্ষে জিডিপির ৫ শতাংশ হওয়া উচিত।